পিছিয়ে থাকা সাত অঞ্চলে দায়িত্বে বদল

শনিবার সাঁইথিয়া শহরের কামদাকিঙ্কর স্টেডিয়ামে বিধানসভাভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েক জন অঞ্চল সভাপতিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০০:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

সাংগঠনিক পদে থেকেও যদি কেউ ঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন না করেন, তা হলে সেই নেতাকে সরিয়ে যৌথ নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হবে। সাংগঠনিক ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াতে এটাই যে শাসকদলের স্ট্র্যাটিজি, শনিবার সাঁইথিয়ার পরে রবিবার দুবরাজপুর বিধানসভা এলাকাতেও সে কথা স্পষ্ট ভাবে বোঝালেন নেতৃত্ব।

Advertisement

শনিবার সাঁইথিয়া শহরের কামদাকিঙ্কর স্টেডিয়ামে বিধানসভাভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েক জন অঞ্চল সভাপতিকে। রবিবার দুবরাজপুর পুর-ক্রীড়া স্টেডিয়ামে আয়োজিত দুবরাজপুর বিধানসভা ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনেও তার পুনরাবৃ্ত্তি হল। সরানো হল দুবরাজপুর ও খয়রাশোলের মোট সাত অঞ্চল সভাপতিকে।

লোকসভা নির্বাচনে যে যে এলাকায় দল পিছিয়ে ছিল, সেটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, স্থানীয় নেতার দক্ষতা বা সদিচ্ছার এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার অভাব বা দুর্নীতির জন্য হয়েছে— সেই আঁচ পাওয়া মাত্র সাতটি পঞ্চায়েত এলাকায় নেতাদের দলের পাঁচ নেতার কমিটি গড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। কড়া নির্দেশ, ‘‘সকলে মিলিত ভাবে পঞ্চায়েত চালান। যাতে সাধারণ মানুষ সরকারি পরিষেবা পেতে সমস্যায় না পড়েন।’’

Advertisement

রবিবার বিকেলে দুবরাজপুরের কর্মী সম্মেলনে অনুব্রত ছাড়াও ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, দুই সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ ও মলয় মুখোপাধ্যায়, খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক অরুণ চক্রবর্তী, দুবরাজপুর ব্লকের সভাপতি ভোলানাথ মিত্র, শহর সভাপতি পীযূষ পাণ্ডে, অঞ্চল সভাপতি ও সমস্ত প্রধান, বুথস্তরের নেতাকর্মীরা। সেই দলে মহিলা কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

কেন দল পিছিয়ে গেল, লোকসভা নির্বাচনের পরে কেন সংগঠনের হাল ফেরানো গেল না, তার যুতসই জবাব দিতে না পারায় এ দিন রীতিমতো ক্ষুব্ধ ছিলেন অনুব্রত। পিছিয়ে থাকা খয়রাশোলের বাবুইজোড়, হজরতপুর, লোকপুর, রূপসপুর, খয়রাশোল গ্রাম পঞ্চায়েত এবং দুবরাজপুরের বালিজুড়ি ও হেতমপুর অঞ্চল সভাপতিদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে খয়রাশোলের হজরতপুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও খয়রাশোলের গরিব মানুষের কাছ থেকে সরকারি আবাস যোজনায় টাকা নেওয়া হয়েছে শুনে খেপে গিয়ে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বিরুদ্ধে জাল টাকার মামলা করতে বলার কথাও শোনা যায় অনুব্রতকে।

দুবরাজপুর বিধানসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে, খয়রাশোল ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা, দুবরাজপুরের ৬টি পঞ্চায়েত এলাকা এবং দুবরাজপুর পুরসভা। মেরুকরণ এবং যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে নিত্য লড়াই ও অশান্তির জেরে অতিষ্ঠ খয়রাশোলের মানুষ শাসকদলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে মানেন তৃণমূলেরই একাংশ। লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেও সেটা স্পষ্ট হয়েছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে যে ব্লক প্রায় ১৯ হাজার লিড দিয়েছিল, সেই খয়রাশোল ব্লকেই এ বার লোকসভা নির্বাচনে একমাত্র বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়া ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টি পঞ্চায়েতেই এগিয়ে বিজেপি।

দলের হিসেবে খয়রাশোলে ১৩৫টি বুথের মধ্যে ৯১টি বুথে ১৫৩৬৭টি ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। স্বস্তি ছিল না দুবরাজপুরেও। পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের ২৫১২ ভোটে পিছিয়ে শাসকদল। ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০৬টি বুথের মধ্যে ৫৪টি বুথে পিছিয়ে ছিল। তবে সামগ্রিক ভাবে লিড ছিল শাসকদলের। সামনে পুরভোট এবং পরের বিধানসভা নির্বাচনে যাতে কোনও ভাবেই ওই ফলের পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই নিয়ে সচেষ্ট শাসকদল। তারই নমুনা মিলেছে এ দিনের বিধানসভা ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে।

তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা: কোথাও খারাপ ফল হলে তো ধরতেই হবে সংগঠন চালাতে গিয়ে দায়িত্বে থাকা নেতার কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। তিনি যদি সেই দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তা হলে তো যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমেই নীচুতলার সংগঠন মজবুত করতে হবে। নতুন উপায়ে সংগঠনে কতটা জোর আসে, দেখার সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন