এই ত্রিফলা কেনা নিয়ে বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতেই পুরপ্রধানকে ছুটিতে পাঠিয়েছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু, সেই ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ফের তৃণমূলের দ্বন্দ্ব সামনে এল ঝালদা পুরসভায়।
৩ অগস্ট ছুটি কাটিয়ে ফের পুরপ্রধানের কুর্সিতে বসার কথা সুরেশ অগ্রবালের। তার আগেই তিনি বর্তমান বোর্ডের সতীর্থদের বিরুদ্ধে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে অতিরিক্ত ত্রিফলা আলো কেনার প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তুলেছেন। কার্যকরী পুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠক পাল্টা দাবি করছেন, এক্তিয়ার বহির্ভূত ভাবে ছুটিতে থাকা সুরেশবাবু সকলের জন্য বাড়ি প্রকল্পে সুবিধা প্রাপকদের চেক আটকাতে চাইছেন। দু’পক্ষের কাজিয়ায় ফের সরগরম ঝালদা তৃণমূলের অন্দর।
সুরেশবাবু নির্দল হিসাবে গত পুরভোটে জিতেছিলেন। গত বছর কিছু কংগ্রেস কাউন্সিলরকে ভাঙিয়ে পুরসভা দখল করার পরে তাঁকে পুরপ্রধান করা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অসন্তোষ ছিল। চলতি বছর জুনে পুরপ্রধানের সঙ্গে তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। সুরেশবাবুর বিরুদ্ধে ঝালদার মহকুমাশাসকের কাছে অনাস্থার চিঠিও জমা পড়ে। চিঠিতে তৃণমূলের চার জনের পাশাপাশি সই করেন কংগ্রেসের তিন ও বামফ্রন্টের দুই কাউন্সিলর। রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে আস্থা ভোট এড়ানো গেলেও মুখরক্ষায় সুরেশ অগ্রবালকে দু’মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়।
৩ অগস্ট ছুটি কাটিয়ে সুরেশবাবুর ফেরার কথা। তার আগেই তিনি ত্রিফলা আলো কেনার পদ্ধতি নিয়ে বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন বর্তমান পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে। তিনি জানান, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ঝালদা পুরসভাকে ৭৯ লক্ষ টাকা দিয়েছিল ত্রিফলা ও হাইমাস্ট লাইট (উঁচু স্তম্ভের আলো) কেনার জন্য। ওই টাকায় ২০০টি ত্রিফলা ও ৪টি হাইমাস্ট কেনার কথা ছিল। গত জানুয়ারিতে ঝালদায় একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসেছিলেন। সে সময় জরুরি ভিত্তিতে ঝালদাকে সাজাতে সুরেশবাবুর নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ড ১০০টি ত্রিফলা ও ২টি হাইমাস্ট আলো কেনে। বাকি আলোগুলি আর কেনা হয়নি।
সুরেশবাবুর অভিযোগ, ‘‘বর্তমান বোর্ড আমি ছুটিতে থাকার সময় আরও ২০০টি ত্রিফলা আলো কিনেছে। কিন্তু, তা কেনা হয়েছে বিধি বহির্ভূত ভাবে ই-টেন্ডার না করেই।’’ তাঁর আরও দাবি, পুর দফতরের টাকায় আরও ১০০টি ত্রিফলা কেনার কথা থাকলেও কাঞ্চন পাঠকেরা কিনেছেন ২০০টি, অর্থাৎ ১০০ বেশি। এই অভিযোগ পুরুলিয়ার জেলাশাসককেও করেছেন তিনি।
ঘটনা হল, সুরেশবাবুর সময়েও একই ভাবে ই-টেন্ডার না করেই আলো কেনা হয়েছিল। সে প্রশ্নের জবাবে তাঁর দাবি, ‘‘তখন রাষ্ট্রপতির সফর ছিল। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কিনতে গেলে আলো আর লাগানো যেত না। তাই একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই কেনা হয়েছিল।’’
বর্তমান কার্যকরী পুরপ্রধান কাঞ্চনবাবুর বক্তব্য, ২০০টি ত্রিফলা আলো কেনা হয়েছে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই। তাই বিধিভঙ্গ হয়নি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘সকলের জন্য বাড়ি প্রকল্পের অর্থ এসে পুরসভায় প্রায় বছর দেড়েক পড়েছিল। আমরাই বাড়ি তৈরির চেক উপভোক্তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। কিন্তু পুরপ্রধান প্রাপকদের টাকা যাতে না ছাড়া হয়, তার জন্য ব্যাঙ্ককে চিঠি দিয়েছেন। এটা এক্তিয়ার বহির্ভূত। কারণ তিনি ছুটিতে আছেন।’’
যা শুনে সুরেশবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি ব্যাঙ্ককে টাকা আটকাতে চিঠি দিয়েছি কারণ, আমার কাছে খবর রয়েছে, ওই প্রকল্পে সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন, এমন অনেকের হাতেও চেক দেওয়া হয়েছে।’’ ত্রিফলা-কাণ্ড গড়িয়েছে জেলা প্রশাসনের শীর্ষস্তর পর্যন্ত। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। জেলা তৃণমূলের সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’