প্রদীপের আলো জ্বলে উঠল না। সেই অন্ধকার থেকেই গেল রামপুরহাটের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে।
এই ওয়ার্ডটি বিধায়ক তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দল যেখানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বোর্ড গঠন করবে, সেখানে মন্ত্রীর ওয়ার্ডে তৃণমূলের এই পরাজয়কে এই ভাবেই ব্যাখ্যা করছেন রামপুরহাট পুরবাসী। এর আগে ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দু’বার জয়ী হয়েছেন বিজেপি’র শুভাশিস চৌধুরী। গতবার শুভাশিসবাবুর স্ত্রী সুপর্ণাদেবী জয়ী হয়েছিলেন। এ বারে শুভাশিসবাবু তৃণমূল প্রার্থী প্রিয়নাথ রায়কে ২৮৩ ভোটে পরাজিত করে পরপর চারবার এই ওয়ার্ডে বিজেপি’র জয়ের ধারা বজায় রাখলেন। বিধানসভা ভোটে বিজেপি’র জেলা সহসভাপতি শুভাশিস চৌধুরী বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরে গেলেও লোকসভা ভোটে এই ওয়ার্ড থেকে বিজেপি তাদের জয়কে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
মন্ত্রীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিজেপি তো রামপুরহাট শহরে লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডে জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারেনি। তৃণমূল রামপুরহাট পুরসভায় লোকসভা ভোটের হার থেকে একক দল হিসেবে জয়ী হয়ে উঠে এসেছে। তাছাড়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিরোধীদের মিলিত ভোটের ফল আর বিজেপি’র ভোট তফাৎ করলে কিন্তু বিজেপি অনেক পিছিয়ে আছে।’’
কিন্তু এ বার তাঁর ওয়ার্ডে বিজেপি যে হারছে তা এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন আশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে বলেছিলাম, নিশ্চিত ভাবে এ বারে বিজেপি হারছে। আমরা আশা করেছিলাম। আসলে বিজেপি বিরোধী ভোট এক জায়গায় আমরা করতে পারিনি। বিজেপি বিরোধী ভোট কিন্তু আমার ওয়ার্ডে বেশি। সেই ভোটটা আমরা এক জায়গায় আনতে পারিনি। এটা আমাদের ডিফিকাল্টি। আগামীদিনে এই নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করে দেখব।’’ তা হলে কি তৃণমূলের সংগঠন ৫ নম্বরে ওয়ার্ডে নেই? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিধায়ক বলেন, ‘‘তৃণমূলের সংগঠন যে ৫ নম্বরে নেই একথা বলা ঠিক নয়। ভোটটা নানা ভাবে ভাগ হয়েছে। তৃণমূল একটা অংশ পেয়েছে, কংগ্রেসও একটা অংশ পেয়েছে। সেখানে নির্দল যে দাঁড়িয়েছে সেও একটা অংশ পেয়েছে।’’
জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে কী বলছেন শুভাশিসবাবু? বললেন, ‘‘এই ওয়ার্ডের মানুষের পাশে আমি যে থাকি, সেটা এর আগেও একাধিক বার ওয়ার্ডের মানুষ প্রমাণ দিয়েছে। এ বারও দিয়েছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আগের বার তো সমস্ত বিরোধীদের এককরে ছিলেন। নিজে বিধায়ক তাই নিজের এলাকা বলে নামসাক্ষী তৃণমূল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে মাত্র ৯টা ভোট পেয়েছিল তৃণমূল প্রার্থী। মন্ত্রীর বাড়ির ভোট তৃণমূলে পড়েনি। বিজেপি বিরোধী ভোট এক করেও হেরে গিয়েছিল তৃণমূল। আসলে ওয়ার্ডবাসীর সুরক্ষা, ওয়ার্ডের উন্নয়নে বিধায়ক তথা মন্ত্রী কোনওদিন ছিলেন না। এখনও নেই। সে জন্য ওয়ার্ডবাসী তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।’’ কেন বিধানসভা ভোটে আপনার পক্ষে সেই রায় ওয়ার্ডবাসী দেয় না? প্রশ্নের জবাবে শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট ছিল। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। সেখানে ওয়ার্ডের মানুষ বুঝেছিল বিজেপি বিধানসভা ভোটে আসতে পারবে না। সে জন্য বিধানসভা ভোটে আমার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল।’’
দলের মন্ত্রীর ওয়ার্ডে তৃণমূলের হারকে কী ভাবে দেখছেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল? অনুব্রত বলেন, ‘‘আসলে ওই ওয়ার্ডে অবাঙালিদের বাস।’’