চান না পুরপিতারাই, সরছেন পুরপ্রধান

তৃণমূলের পুরপ্রধানের বিপক্ষে চলে গিয়েছেন দলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলররা। এই পরিস্থিতিতে পদ থেকে সরতে হচ্ছে পুরপ্রধানকে। এমন ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে সিউড়ি পুরসভা। ঘটনার সত্যতা মেনেছেন তৃণমূলের সিউড়ি শহর সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার। তিনি মানছেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত মেনেই পুরপ্রধান সরছেন।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০১:২৮
Share:

উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়।— নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের পুরপ্রধানের বিপক্ষে চলে গিয়েছেন দলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলররা। এই পরিস্থিতিতে পদ থেকে সরতে হচ্ছে পুরপ্রধানকে। এমন ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে সিউড়ি পুরসভা। ঘটনার সত্যতা মেনেছেন তৃণমূলের সিউড়ি শহর সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার। তিনি মানছেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত মেনেই পুরপ্রধান সরছেন।’’

Advertisement

খবরটা চাউর হয়েছিল সোমবার সন্ধ্যায়। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ওই দিন পুরসভার ১৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে উপপুরপ্রাধন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়-সহ ১৫ জন মিলিত ভাবে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে চিঠি দিয়ে পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নালিশ জানান। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, উন্নয়ন থমকে গিয়েছে শহরে। পুর পরিষেবা পাচ্ছেন না শহরবাসী। কাজে অস্বচ্ছতার অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

কংগ্রেসের টিকিটে জিতে বর্তমানে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সিউড়ি পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী ফরজুদ্দিনের অভিযোগ, ‘‘রাস্তায় রাস্তায় জমে রয়েছে জঞ্জালের স্তূপ। সিউড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড— একই ছবি। যে জল প্রকল্প নিয়ে এত সমস্যা পুরভোটের পর ৪৬ লক্ষ টাকা পেলেও অবস্থার উন্নতি নেই।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য তৃণমূল কাউন্সিররাও একই অভিযোগ করছেন। এরপরেই অভিযোগগুলি জেল সভাপতিকে চিঠি দিয়ে গোটা বিষয়টি জানানো হয়।

Advertisement

চিঠিতে যাঁরা সই করেননি, তাঁদের মধ্যে পুরপ্রধান ছাড়াও রয়েছেন তাঁর ভাইঝি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মণিদীপা মুখোপাধ্যায় (বিজেপি-র টিকিটে জিতে বর্তমানে তৃণমূলে), ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রণব কর এবং সিউড়ি শহর সভাপতির স্ত্রী শিপ্রা মজুমদার। অর্থাৎ, ১৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৫ জনই সই করেছেন। কেন সই করলেন না? প্রণববাবুর জবাব, ‘‘আমি অসুস্থ। সোমবার পুরসভায় যাইনি। তাই আমি পক্ষে না বিপক্ষে সেটা অপ্রাসঙ্গিক।’’ কোনও মন্তব্য করতে চাননি মণিদীপাদেবী।

যাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ সেই উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘পুরসভার কাজে গতি রাখতে, স্বচ্ছতা রাখতে সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি। এটুকু বলতে পারি, পুরসভার সব দায় একা পুরপ্রধানের নয়।’’ দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা মেনে নেবেন, তা অবশ্য স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন।

ঘটনা হল, দুর্নীতি, অনুন্নয়ন, পুর পরিষেবার নিয়ে এর আগেও সিউড়ির পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। সে অভিযোগ কখনও তুলেছেন দলীয় কাউন্সিলররা, কখনও প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। এরপরেও গত পুরভোটের পরে দল উজ্জ্বলবাবুকেই পুরপ্রধান করে। সেটা অবশ্য দলের একটা অংশ ভাল ভাবে নেয়নি। জঞ্জাল সাফাই, বেআইনি নির্মাণ ও দখলদারি নিয়ে পুরপ্রধানের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট ছিলেন জেলা প্রশাসনের কিছু কর্তাও। এ বার দলের কাউন্সিলররাও পুরপ্রধানের বিপক্ষে গেলেন। গোটা ঘটনা নিয়ে অনুব্রত মণ্ডল কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূল নেতাদের একাংশ একান্তে বলছেন, ‘‘অভিযোগ সম্বলিত চিঠি পৌঁছনোর পরেই কার্যত পদত্যাগ করার ফরমান জারি হয়।’’

পুরপ্রধানের সরে যাওয়া নিয়ে অবশ্য অন্য যুক্তি শুনিয়েছেন শহর সভাপতি অভিজিতবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে উনি পুরপ্রধান হিসাবে ঠিক মতো সময় দিতে পারছিলেন না। তাই পদ ছাড়তে বলেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন