সিপিএম-তৃণমূল চাপানউতোর

খয়রাশোলে গুলিতে জখম তৃণমূলকর্মী

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোল গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া পাঁচড়া–বাবুইজোড় রাস্তার এক ধারে রয়েছে সিপিএমের কার্যালয়। ঠিক উল্টো দিকে তৃণমূল অফিস। সোমবার সিপিএমের কার্যালয় থেকেই মিছিলের কর্মসূচি ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০২
Share:

টহল: অশান্তির পরে পুলিশের নজরদারি। খয়রাশোলে। নিজস্ব চিত্র

শান্তির দাবিতে মিছিল করছিল সিপিএম। সেই মিছিলকে ঘিরেই অশান্ত হল খয়রাশোল। চলল গুলি। গুলিবিদ্ধ হলেন এক তৃণমূল কর্মী। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে খয়রাশোল থানার কাছে, পাঁচড়া–বাবুইজোড় রাস্তায়। আহত তৃণমূল কর্মী শেখ আফজলউদ্দিন সিউড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হজরতপুর এলাকার ওই তৃণমূল কর্মীর কোমরের পিছনে গুলি লেগেছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ না হলেও ঘটনার জন্য সিপিএম ও তৃণমূল একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোল গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া পাঁচড়া–বাবুইজোড় রাস্তার এক ধারে রয়েছে সিপিএমের কার্যালয়। ঠিক উল্টো দিকে তৃণমূল অফিস। সোমবার সিপিএমের কার্যালয় থেকেই মিছিলের কর্মসূচি ছিল। কয়েকশো কর্মী-সমর্থকের পাশাপাশি ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা, সাধন ঘোষ, শীতল বাউড়ি, অরুণ মিত্র-সহ একাধিক নেতা। তৃণমূলের কার্যালয়েও উপস্থিত ছিলেন বেশ কিছু লোক। তবে সিপিএমের মিছিল শুরু হয় নির্বিঘ্নেই। খয়রাশোল গ্রাম ঘুরে বড় রাস্তায় উঠে মিছিল শেষ হয়।
থানার পাশ দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের দিকে এগোনোর সময়েই দু’তরফে গণ্ডগোল বাধে। গুলি চলে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা স্বপন সেনের দাবি, ‘‘দিন কয়েকে আগে ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষের মৃত্যুর পরে শোকের পরিবেশ রয়েছে। সোমবার আমাদের অফিসের সামনে খুব কম সংখ্যক লোক ছিল। সিপিএমের মিছিল শেষে কটূক্তি করা হচ্ছিল। এই নিয়ে দু’চার কথা হয়। তার পরেই ওরা গুলি চালায়।’’
সপ্তাহ দুয়েক আগে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছেন খয়রাশোলের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ। এ দিন থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ফের গুলি চলার ঘটনায় খয়রাশোল বাজার এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। প্রথমে পুলিশ, পরে মাওবাদী দমনে থাকা আধা সামরিক বাহিনীর কয়েক জন জওয়ান এসে দু’তরফের লোককে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বীরভূমের পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ হয়নি। তল্লাশি শুরু হয়েছে। তদন্ত করে সত্যিটা বের করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, সিপিএমই মিছিল থেকে তাঁদের এক কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যে যার দল, মিছিল করতে পারে। মিছিল করার অধিকার সবারই আছে। মিছিল করার পর গুলি করতে হবে? সেটা মানুষ মেনে নেবে? পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’ একই সঙ্গে অনুব্রতের হুঁশিয়ারি, ‘‘কেউ গুলি করবে আর তাকে ছেড়ে দেবে নাকি! ঠিক দিয়েছে। খয়রাশোল নিয়ে ব্যাপক অশান্তি হয়েছে। কালীপুজোর পর মিটিং ডাকব, ব্যবস্থা নেব, তখন যেন কেউ দোষ না দেয়!’’
এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘শাসকদলের খুন-জখম-লুটের বিরুদ্ধে শান্তির দাবিতেই এ দিন খয়রাশোলে আমাদের পথে নামা। আমরা গুলি চালাব কেন!’’ মনসাবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা যখন মিছিল শেষ করি, তখন অনেক লোক ওদের (তৃণমূল) পার্টি অফিসে। পুলিশের সামনেই তৃণমূলের লোকজন তাড়া করে এল। আমাদের কর্মীরা আত্মরক্ষার জন্য এ-দিক ও-দিক ছুটেছে। আমাদের কেউ কেউ দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছে, দরজা বন্ধ করেছিলেন। পার্টি অফিস লক্ষ্য করে ওরা ইটপাটকেল ছুড়ছিল।’’ একইসঙ্গে সিপিএমের দাবি, তাদের উপরে আক্রমণের সময় নিজেদের গুলিতেই জখম হয়েছেন তৃণমূলের ওই কর্মী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন