কত চাপ সইতে পারবে মেজিয়া

আগে রানিগঞ্জ থেকে বাঁকুড়ায় যাতায়াতের জন্য বল্লভপুর শ্মশানের কাছে দামোদরে একটি অস্থায়ী সেতু ছিল। মেজিয়ার সিপিএম নেতা শরৎ পাল জানান, ১৯৮২ সালে সেতু তৈরির জন্য সিপিএম আন্দোলনে নামে।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৯
Share:

এই সেতুর উপরেই আজ, সোমবার থেকে পণ্যবাহী গাড়ির ভিড় বাড়বে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

সংস্কারের কাজের জন্য যান নিয়ন্ত্রণ হবে দুর্গাপুর ব্যারাজে। আজ, সোমবার থেকে পাঁচ দিন চলতে দেওয়া হবে না পণ্যবাহী গাড়ি। গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে অন্য সব গাড়িরও। আর সে কারণে বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানের মধ্যে যাতায়াতকারী বহু যানবাহনকেই এই ক’দিন মেজিয়া সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হবে। চাপ বাড়বে রানিগঞ্জ ও মেজিয়ার মাঝে এই সেতুর উপরেও। তবে রানিগঞ্জের এই সেতুটির অবস্থা নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের।

Advertisement

আগে রানিগঞ্জ থেকে বাঁকুড়ায় যাতায়াতের জন্য বল্লভপুর শ্মশানের কাছে দামোদরে একটি অস্থায়ী সেতু ছিল। মেজিয়ার সিপিএম নেতা শরৎ পাল জানান, ১৯৮২ সালে সেতু তৈরির জন্য সিপিএম আন্দোলনে নামে। পুরুলিয়ার হুড়া থেকে কলকাতা পর্যন্ত পদযাত্রাও হয়। তার পরে একটি নৌকা জলে তলিয়ে গেলে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার পরে সেতুর দাবি আরও জোরাল হয়। এর পরেই উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। এরই মধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রেলসেতু তৈরির পরিকল্পনা করে ডিভিসি। ঠিক হয়, পাশে যান চলাচলের সেতুও তৈরি করে দেবে তারা। রানিগঞ্জের বিধায়ক রুনু দত্ত জানান, ১৯৯৮ সালে তৈরি হয় সেতুটি।

মেজিয়ার অর্ধগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মলয় মুখোপাধ্যায় জানান, সেই সময় রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়, সেতুটি ডিভিসি তৈরি করে দিলেও রক্ষণাবেক্ষণ করবে রাজ্য সরকার। মলয়বাবুর অভিযোগ, ‘‘কিন্তু তার পরে রাজ্য সেতু দেখভালে আর কোনও উদ্যোগ দেখায়নি।’’ তিনি জানান, তাঁরা পঞ্চায়েতের তরফে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছেন।

Advertisement

মলয়বাবু দাবি করেন, সেতুটি সিমেন্টের খুঁটিতে লোহার সকারের উপর ঢালাই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই সকারগুলি প্রতি তিন বছর অন্তর রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। কিন্তু তা না হওয়ায় সকারগুলিতে মরচে ধরেছে বলে তাঁর অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সেতুর উপর দু’জায়গায় ঢালাই উঠে গিয়ে লোহার কাঠামো বেরিয়ে পড়েছে। ফুটপাতের নানা অংশ ও রেলিংয়ের বেশ কয়েকটি খুঁটিরও জীর্ণ অবস্থা। রানিগঞ্জের স্কুলপাড়ার বাসিন্দা বাসুদেব গোস্বামীর কথায়, ‘‘আতঙ্কে ফুটপাত কেউ ব্যবহার করেন না।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর থেকে মুর্শিদাবাদের মোরগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে দামোদরের উপরে এই সেতুটি উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে যোগাযোগের একটি বড় ভরসা। দৈনিক বাঁকুড়া ও রানিগঞ্জের মধ্যে প্রায় ৮০টি দূরপাল্লার বাস যাতায়াত করে। এ ছাড়া হাজারখানেক যাত্রিবাহী যান চলাচল করে। দুর্গাপুর ব্যারাজে যান নিয়ন্ত্রণের ফলে গাড়ির চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। রানিগঞ্জ বণিক সংগঠনের কর্তা রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান, শহরের বাসিন্দা মঞ্জু গুপ্তদের দাবি, ঘিঞ্জি শহর রানিগঞ্জে যানজটে জেরবার অবস্থা। অতিরিক্ত যান চলাচল করলে বাসিন্দারা আরও নাকাল হবেন।

মেজিয়ার বিডিও অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দিন পনেরো আগে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের আবেদন জানিয়েছিলেন। তার পরে আমি সেতু পরিদর্শন করেছি। জেলাশাসককে বিষয়টি জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনাও নিয়েছি।’’ রানিগঞ্জ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পণ্যবাহী গাড়ি রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এই রাস্তা ব্যবহার করে। সেই নিয়ম মেনেই ভারী যান চলাচল করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন