পিকনিকের ধুম, কাঁটা আবর্জনা

নতুন বছরের প্রথম দিন। তায় রবিবার। দুই জেলার বিভিন্ন পিকনিক স্পটে উপচে পড়ল পর্যটকদের ভিড়। তবে তার সঙ্গেই বছর শুরুতেই উসকে উঠল পিকনিকের মরসুমে আবর্জনা-আতঙ্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২৩
Share:

বাঘমুণ্ডির লহড়িয়া জলাধারে পার্কিং-এর জায়গাতেই রান্নাবান্না।

নতুন বছরের প্রথম দিন। তায় রবিবার। দুই জেলার বিভিন্ন পিকনিক স্পটে উপচে পড়ল পর্যটকদের ভিড়। তবে তার সঙ্গেই বছর শুরুতেই উসকে উঠল পিকনিকের মরসুমে আবর্জনা-আতঙ্ক।

Advertisement

শীত পড়লেই পিকনিকের ঢল নামে বাঁকুড়ার পর্যটনস্থলগুলিতে। পিকনিক পার্টিদের ফেলে যাওয়া থার্মোকলের থালা ও প্লাসটিকের গ্লাসের বর্জ্র্য বছর ভর বয়ে বেড়াতে হয়। এই ঘটনা এড়াতে দীর্ঘ দিন ধরেই পর্যটনস্থলে প্লাসটিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা চালু করার দাবি তুলে আসছেন পরিবেশপ্রেমীরা। এ বারে সেই দিকে কয়েক কদম এগোল জেলা প্রশাসন।

জেলার অন্যতম পর্যটনস্থল মুকুটমণিপুরে চলতি মরসুম থেকেই পিকনিক পার্টির জন্য থার্মোকলের থালা ও প্লাসটিকের গ্লাস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। শীতের মরসুমে পিকনিক করতে আসা দলের ফেলে যাওয়া আবর্জনা প্রতি জলাধারের জলে ভাসে। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “মুকুটমণিপুরে থার্মোকলের থালা ও প্লাসটিকের গ্লাস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি আমরা। দুষণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শালপাতার থালার ব্যবহার বাড়ানোও আমাদের লক্ষ্য। কেউ যাতে প্লাস্টিকের থালা গ্লাস ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য খাতড়া মহকুমা প্রশাসন নজর রাখছে।’’

Advertisement

শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে আবর্জনা।

শুশুনিয়া কিন্তু এ বারেও সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। শীতের শুরু থেকে জেলার এই পর্যটন কেন্দ্রেও জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পিকনিক পার্টির ঢল নেমেছে। শীতের মাঝামাঝি পাহাড়ের কোল ঢাকা পড়েছে পিকনিক পার্টির ফেলে যাওয়া থার্মোকলের থালা ও প্লাসটিকের গ্লাসে। হাওয়ায় যত্রতত্র উড়ে যাচ্ছে সে সব। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকেরাও। শুশুনিয়ার বাসিন্দা বাবলু কর্মকার, শ্যামাপদ রায়রা বলেন, “প্রতি বছরই এমন আবর্জনা দেখি। পরিচ্ছন্নতার কোনও বালাই নেই।”

বিষ্ণুপুর মেলার টানে সম্প্রতি জেলায় এসে এক ফাঁকে শুশুনিয়ায় বেড়াতে চলে এসেছিলেন ঝাড়গ্রামের দম্পতি সুমন্ত ও পায়েল চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের ক্ষোভ, “পাহাড়ে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে এঁটো থালা, গ্লাস। বেশ দৃষ্টিকটূ লাগল।” মুকুটমণিপুরের মতো শুশুনিয়ার দিকেও প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার বলে তাঁরা দাবি তুলেছেন। জেলাশাসক বলেন, “শুশুনিয়াতেও দুষণ রুখতে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা চলছে। তবে আপাতত দু’টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে ওখানে আবর্জনা পরিষ্কার করিয়ে নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ শীঘ্রই শুশুনিয়ায় আবর্জনা সাফাইয়ে নামা হবে বলে তাঁর আশ্বাস।

এ দিন পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে পিকনিক করতে এসে অনেককেই মনের মত জায়গা না পেয়ে হতাশ হতে হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুশোরও বেশি বাস পাহাড়ের নীচে জড়ো হয়েছিল। ঠান্ডা উপেক্ষা করে শনিবার মাঝরাত থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে বাঘমুণ্ডিতে। বেলা গড়াতেই লহরিয়া শিব মন্দিরের মাঠ ও আশপাশের এলাকায় কোনও রকমে গাড়ি রাখার ঠাঁই জুটলেও পিকনিক করার মতো জায়গা পাননি অনেকে। পাহাড়ের উপরেও একই ছবি। অনেকেই স্থানীয় স্ট্যান্ড থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে পাহাড়ের উপরে ঘুরে আসেন। ভিড় এতটাই হয়েছিল যে, শতাধিক ছোট গাড়ি এ দিন রাস্তায় নামলেও অনেকেই গাড়ি পেতে সমস্যায় পড়েন। ঝাড়গ্রামের মাণিকপাড়া থেকে স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে আসা সন্দীপ দত্ত এবং বাঁকুড়ার একটি হাসপাতালের চিকিৎসক সুপ্রিয় করের কথায়, ‘‘নতুন বছরের প্রথম দিনটা ভালই কাটল।’’

জয়চণ্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তি, ফুটিয়ারি জলাধার, মুরগুমা জলাধার, কুমারী জলাধার, ইন্দ্রবিল জলাধার, আদ্রা সাহেব বাঁধ, দোলাডাঙা, ঝালদার নরহারা জলাধার-সহ জেলার বিভিন্ন পিকনিক স্পটেই এ দিন ভোর থেকে থিকথিকে ভিড় ছিল। গাড়িতে মাইক বেঁধে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে কাকভোরে হাজির হয়ে চড়ুইভাতির জায়গা আগলেছেন পিকনিক পার্টির দল। ভোর থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ কর্মীরাও নজরাদারি চালিয়েছেন।

এ দিন বিকেল থেকে অযোধ্যা পাহাড়ে হিলটপ থেকে অযোধ্যা মোড় যানজট দেখা দেয়। পথে নামে পুলিশ। কিন্তু রাত পর্যন্ত ভোগান্তি চলে।

রবিবার ছবিগুলি তুলেছেন সুজিত মাহাতো, অভিজিৎ সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন