পর্যটনে জোয়ার আনতে বড় পর্দায় চোখ রঘুনাথপুরের

এ বারে সিনেমার পর্দার মস্ত বড় পটে ধরা থাকছে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নীলডি পাহাড় আর নতুনডির জঙ্গল

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৮
Share:

ক্যামেরাবন্দি: রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নীলডি পাহাড়ে একটি ছবির শ্যুটিং। নিজস্ব চিত্র

ঘর থেকে দু’পা ফেললেই যে এমন ছবির মতো দেশ রয়েছে, সে কথা আগেই আবিষ্কার করেছিলেন তাবড় চলচ্চিত্র পরিচালকেরা। এ বারে সিনেমার পর্দার মস্ত বড় পটে ধরা থাকছে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নীলডি পাহাড় আর নতুনডির জঙ্গল। পর্যটন আর ছায়াছবির মধ্যে এমন যোগাযোগ যত গড়ে উঠবে, পুরুলিয়ার ততই ভাল হবে বলে মনে করছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার শ্যুটিং হওয়া নতুন একটি ছবিতে ছোট ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকেও।

Advertisement

কোথাও রুক্ষ পাহাড়। তাকে ঘিরেই আবার সবুজে সবুজ প্রান্তর। পা ধুয়ে বয়ে চলেছে দামোদর। দক্ষিণ পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের এমন নানা নিসর্গ ছবি হয়ে রয়েছে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ফিল্মে। মাওবাদী কার্যকলাপ কমার পরে দক্ষিণ পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় ও অন্য কিছু এলাকায় সিনেমার আউটডোর শ্যুটিং করতে আসছেন বাংলা ছবির বেশ কিছু পরিচালক। সেই তালিকায় ক্রমশ গুরুত্ব পাচ্ছে রঘুনাথপুর মহকুমার নামও। অবশ্য, নামটা তালিকায় উঠেছিল আগেই। রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়কে অনেক আগেই ছায়াছবিতে ধরেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘হীরক রাজার দেশ’-এর কোনও কোনও জায়গা আসলে এই পাহাড়েই।

কিন্তু মাঝে একটা সময়ে উত্তর পুরুলিয়ার এই সমস্ত এলাকায় সিনেমার দলের আনাগোনায় ভাটা পড়েছিল কিছুটা। সম্প্রতি সেটা কাটতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। ছোট থেকে বড় বাজেটের অনেক ছবির জন্যই রঘুনাথপুরকে বেছে নিচ্ছেন পরিচালকেরা। নিতুড়িয়ার গড় পঞ্চকোটে বাংলা সিনেমার শ্যুটিং করে গিয়েছেন টলিউডের দুই অভিনেতা গোবিন্দা ও রাজপাল যাদব। এ বারে পরিচালক রাজর্ষি দে তাঁর একটি থ্রিলার ছবির জন্য বেছে নিয়েছেন নীলডি আর নতুনডিকে।

Advertisement

গত পাঁচ দিন নীলডি আর নতুনডিতে চলছে শ্যুটিং। পরিচালক বলেন, ‘‘পাহাড়ের সঙ্গে ছোট টিলা, রুক্ষ মাটির একটা লোকেশন দরকার ছিল। ভাবছিলাম ভোপালে যাব। কিন্তু সবটাই পেয়ে গিয়েছি নীলডিতে।’’ ছবিটির প্রযোজক তথা অভিনেত্রী সুচন্দ্রা ভানিয়াও এসে রয়েছেন। জানালেন, ছবির একটি ছোট্ট ভূমিকার অভিনয় করছেন খোদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি। শুক্রবারই নীলডি পাহাড়ে তাঁর অভিনয় ক্যামেরাবন্দি হয়েছে। তার পরে সুজয়বাবু বলেন, ‘‘পুরুলিয়া, বিশেষ করে রঘুনাথপুর এলাকায় পরিচালক, প্রযোজকেরা সিনেমা করতে আসছেন। এই এলাকার সৌন্দর্য তাঁদের মনে ধরছে, বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক।’’

প্রযোজক জানান, তিনটি ছোটগল্প নিয়ে ছবিটি তৈরি হচ্ছে। প্রথম গল্পের আউটডোর শ্যুটিং হচ্ছে এই জেলায়। ছবিতে অভিনয় করছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কমলেশ্বর চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। পর্দায় দেখা যাবে ‘নান্দীকার’-এর রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তকেও। রঘুনাথপুরে কাজ করে খুশি পরিচালক ও প্রযোজক। তাঁরা বলেন, ‘‘শ্যুটিং করার দেখতে মেলার মত ভিড় হয়েছিল। কিন্তু কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি।’’ তাঁরা জানান, প্রশাসনও দরকার মতো সহায়তা করেছে। রাজর্ষিবাবু বলেন, ‘‘বন রয়েছে, পাহাড় আছে— সব মিলিয়ে দারুন লোকেশন। অন্য পরিচালকেরাও নিশ্চয় রঘুনাথপুর নিয়ে ভাববেন।’’

ছবিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন উদ্যোগপতি অঞ্জন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘স্ক্রিপ্ট দেখার পরেই আমার রঘুনাথপুরের কথা মনে হয়েছিল। পরিচালক লোকেশন দেখেই রাজি হয়ে যান। আর দেরি করিনি।’’ অঞ্জনবাবুই যোগাযোগ করেন জেলা সভাধিপতির সঙ্গে। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘জেলায় পর্যটন শিল্পের প্রসারে বিশেষ নজর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। নতুন অনেক পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। তারই হাত ধরে সিনেমা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন এই এলাকাতে এলে আখেরে এলাকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।’’

অল্প বয়েসে গ্রামে প্রচুর যাত্রা আর নাটক করেছেন সুজয়বাবু। বলেন, ‘‘অভিনয়ের প্রস্তাবটা পেয়ে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। তাই আর না করতে পারলাম না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন