বিস্ফোরণ-কাণ্ডে এ বার জালে কোষাধ্যক্ষ

গত ২৯ জুন গভীর রাতে তিন তলা ওই ক্লাবের নীচের ঘরে বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশের দাবি, ফরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী নীচের ঘরের স্টিলের আলমারির ভিতরে বোমা মজুত করে রাখা ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মল্লারপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০১:০৯
Share:

ধৃত বিপ্লব দত্তকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

মল্লারপুরে ক্লাবে বিস্ফোরণের ঘটনায় এ বার গ্রেফতার হলেন ওই ক্লাবেরই কোষাধ্যক্ষ বিপ্লব দত্ত। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে পুলিশ ধরেছিল ক্লাব সদস্য মিঠু শেখকে।

Advertisement

গত ২৯ জুন গভীর রাতে তিন তলা ওই ক্লাবের নীচের ঘরে বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশের দাবি, ফরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী নীচের ঘরের স্টিলের আলমারির ভিতরে বোমা মজুত করে রাখা ছিল। সেই কারণেই বিস্ফোরণের তীব্রতায় আলমারি ছিটকে বেশ কিছুটা দূরে রাস্তায় গিয়ে পড়ে। ওই আলমারির চাবি থাকত বিপ্লবের কাছে। সে জন্যই তাঁকে ধরা হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে, কী কারণে ক্লাবঘরে বোমা মজুত করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

পুলিশ সূত্রের খবর, নিজের কাছে থাকা আলমারির চাবি বিপ্লবই পুলিশকে জমা দিয়েছিলেন। তার পরেই পুলিশ তাঁর বাড়িতে শুক্রবার তল্লাশি চালায়। বিপ্লব তখন বাড়িতে ছিলেন না। শনিবার বিকেলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার বিপ্লবকে রবিবার রামপুরহাট আদালতে তোলার পরে সরকারি আইনজীবী ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আর্জি জানান। বিচারক সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়চৌধুরী ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিস্ফোরক মজুত আইনে ২৮৬ ধারায় এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনায় ৪৩৬ ধারায় মামলা রুজু করেছে। এছাড়াও ৩/৪ এক্সপ্লোসিভ অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৬ ধারা জামিনযোগ্য হলেও ৪৩৬ এবং ৩/৪ বিস্ফোরক আইন দু’টি জামিনঅযোগ্য ধারা। সরকারি আইনজীবী সুরজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘মল্লারপুর বিস্ফোরণকাণ্ডে ফরেন্সিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ক্লাবের ওই আলমারির নীচের তাকে বিস্ফোরক মজুত ছিল এবং আলমারির চাবি কোষাধ্যক্ষ বিপ্লব দত্তের কাছে থাকত। স্বাভাবিক কারণে তদন্তে বিস্ফোরণের সঙ্গে বিপ্লবের যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে।’’

Advertisement

ওই বিস্ফোরণের সাত দিন পরে পুলিশ মল্লারপুর রেলপাড় এলাকার বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রি মিঠু শেখকে গ্রেফতার করেছিল। আদালতের নির্দেশে তাঁর পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। শনিবার মিঠুকে ফের আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক জেল হাজতের নির্দেশ দেন। ২৬ জুলাই মিঠুকে ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, মিঠুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মল্লারপুর রেলপাড়ের আর এক বাসিন্দার নাম পাওয়া যায়। ওই দু’জন বিস্ফোরক কেনা-বেচার কারবার করতেন। পুলিশের আরও দাবি, যে ক্লাবে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, সেই ক্লাবের কোনও এক জন সদস্যকে মিঠু ওই বিস্ফোরক বিক্রি করেছিলেন বলে জেরায় জানিয়েছেন। পুলিশ মিঠুর কাছ থেকে বিস্ফোরক বাজেয়াপ্তও করেছে।

বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের ঘটনায় ফরেন্সিক তদন্তের এখনও পর্যন্ত একটিই রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। কী ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে, সেই রিপোর্ট এখনও আসেনি। কোষাধ্যক্ষ-সহ দু’জন গ্রেফতার হলেও তদন্তের স্বার্থে এখনই সবটা বলা যাচ্ছে না।’’

মল্লারপুর বাজারে কাঁসা পিতলের বাসনের পৈতৃক ব্যবসা বিপ্লবের। দীর্ঘদিন ধরেই মল্লারপুর মেঘদূত ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এলাকায় শান্ত এবং নির্বিবাদী যুবক হিসেবে পরিচিত। নিজের ব্যবসা এবং ক্লাব— এই নিয়েই তিনি ব্যস্ত থাকতেন বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। বিস্ফোরক রাখার ঘটনায় বিপ্লবের জড়িত থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। বিপ্লবের বাবা আনন্দবাবু অসুস্থ। তাঁর খুড়তুতো দাদা বাপ্পা দত্তের দাবি, ‘‘পুলিশ এক জন নির্দোষ ছেলেকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার সঙ্গে ভাইয়ের কোনও যোগসাজশ নেই।’’ ক্লাবের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শেখর গুপ্ত, সহ সভাপতি সন্দীপ সিংহ জানান, বিপ্লব ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আলমারির চাবি নিজের কাছে রাখলেও ক্লাবে তেমন একটা আসতেন না। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘পুলিশের তদন্তের উপরে বিশ্বাস রাখলেও একজন ভাল ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ কোন পথে তদন্তকে নিয়ে যেতে চাইছে, বুঝে উঠতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন