পাহাড়তলি মেতে উঠল বাহা আর দাঁশাইয়ে

আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতিকে তুলে ধরার উদ্দেশে প্রতি বছর শিউলিবনায় বছরের শেষ দিন থেকে দু’দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করে থাকে শময়িতা মঠ। এ বছর ছিল মেলার ২২তম বর্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শুশুনিয়া শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৯
Share:

নাচ: শিউলিবনা গ্রামে লোকসংস্কৃতি উৎসব। নিজস্ব চিত্র

শাল-পিয়ালের ঘন জঙ্গল ভেদ করে সূর্যের আলোও ভাল ভাবে ঢুকতে পারত না। বন্য জীবজন্তুরা ঘুরে বেরাত এলাকায়। দিনের বেলাতেও কেউ ওই জঙ্গলের আশপাশ মাড়াতেন না।

Advertisement

শুশুনিয়ার পাহাড় কোলে এমনই জঙ্গলের বুকে কী ভাবে গড়ে উঠল আদিবাসীদের গ্রাম শিউলিবনা, সেই কাহিনীই জনসমক্ষে আনল শময়িতা মঠ। রবিবার থেকে শময়িতা মঠের উদ্যোগে শিউলিবনা গ্রামে শুরু হয়েছে আদিবাসী লোকসংস্কৃতির মেলা ‘খেরওয়াল তুখৌ’। সেই মেলাতেই একটি বিশেষ স্টলে প্রায় দু’শ বছর আগে শিউলিবনা গ্রামের সৃষ্টি কথা তুলে ধরা হয়েছে। যা নজর কেড়েছে মেলায় আসা লোকজনের।

আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতিকে তুলে ধরার উদ্দেশে প্রতি বছর শিউলিবনায় বছরের শেষ দিন থেকে দু’দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করে থাকে শময়িতা মঠ। এ বছর ছিল মেলার ২২তম বর্ষ। বছরের শেষ ও প্রথম দিন শুশুনিয়ায় পর্যটকদের ঢল নামে। এই দু’টি দিনে পাহাড়ের সৌন্দর্যের পাশাপাশি মেলাতে গিয়েও ঢুঁ মারেন বহু পর্যটক।

Advertisement

মঠের সম্পাদক ঋষিঋদ্ধা অনাহতা বলেন, “আদিবাসী ও লোক সংস্কৃতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি শিউলিবনা গ্রামের ইতিহাসও মানুষকে জানানোর উদ্দেশ্যেই গ্রামের সৃষ্টি কথা তুলে ধরেছি আমরা। রাম হেমব্রম ও রঘু হেমব্রমের হাত ধরেই এই গ্রাম গড়ে উঠেছিল। আমরা চাই যুব প্রজন্মও জানুক তাঁদের লড়াইয়ের কথা।”

সোমবার মেলায় উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত, জেলার উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আশিসকুমার বেরা-সহ অনেকে। মহাপ্রসাদবাবু বলেন, “শুশুনিয়া পাহাড়ের সৌন্দর্য ও আদিবাসী সংস্কৃতির মিশেলে মেলার পরিবেশটাই একটা অন্য মাত্রা পায়। বছরের শুরুর দিনেই এমন একটি উৎসব আমাদের কাছে বাড়তি পাওনা।”

খেরওয়াল তুকৌ উপলক্ষে শিউলিবনা গ্রামের ঘরে ঘরে আত্মীয়দের ভিড় জমে ওঠে। শালতোড়ার কুলবহাল এলাকা থেকে স্ত্রী ভবানীকে নিয়ে মেলা দেখতে এসেছিলেন সুনীল হেমব্রম। সুনীলবাবু বলেন, “এখানে আমার বেয়াই বাড়ি। প্রতি বছর এই মেলায় না আসতে পারলে ভাল লাগে না। এই উৎসব গোটা গ্রামের মানুষের।”

শিউলিবনার পড়শি গ্রাম ছাতনার বালিখুন এলাকা থেকে মেলায় লেবু বিক্রি করতে এসেছিলেন মঙ্গল সোরেন। তিনি বলেন, “স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন বছরভর। মেলা দেখাও হয়, ব্যবসাও করা হয়।”

মেলায় আটটি করে মহিলা ও পুরুষ আদিবাসী দল যথাক্রমে বাহা ও দাঁশাই নৃত্য প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে। বাহা নাচের বিভাগে ছাতনার গুড়সুকরা আদিবাসী সাঁওতা সতৌ গাঁওতা দল এবং দাঁসাই নাচে গঙ্গাজলঘাটির সিধো-কানহো রসিকা মানডোয়া সুয়াবাসা দল জয়ী হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন