অর্থলগ্নি সংস্থার দুই ডিরেক্টর ধৃত

গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলে প্রতারণায় অভিযুক্ত বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার দুই কর্তা বছরখানেক ধরে পলাতক ছিলেন। ‘স্বর্ণভূমি ডেভেলপার্স লিমিটেড’ নামের ওই সংস্থার দুই ডিরেক্টর সঞ্জয়কুমার লায়েক ও প্রকাশ মণ্ডলকে শনিবার গ্রেফতার করল পুলিশ। তাঁদের বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গঙ্গাজলঘাটি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০৩
Share:

গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলে প্রতারণায় অভিযুক্ত বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার দুই কর্তা বছরখানেক ধরে পলাতক ছিলেন। ‘স্বর্ণভূমি ডেভেলপার্স লিমিটেড’ নামের ওই সংস্থার দুই ডিরেক্টর সঞ্জয়কুমার লায়েক ও প্রকাশ মণ্ডলকে শনিবার গ্রেফতার করল পুলিশ। তাঁদের বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে। ধৃতদের রবিবার বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা-সহ বিভিন্ন ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে রানিগঞ্জের একটি হোটেল থেকে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ সঞ্জয় ও প্রকাশকে গ্রেফতার করে। এই দু’জনের বিরুদ্ধে গঙ্গাজলঘাটি থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার পরে রাতেই রানিগঞ্জ থানার পুলিশ তাঁদের গঙ্গাজলঘাটি থানায় পাঠায় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

ওই সংস্থার এজেন্টরা জানাচ্ছেন, ২০০৮ সাল থেকে সংস্থাটি আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করে। মাঝে দু’বার সংস্থাটির নাম পরিবর্তন হয়ে শেষ পর্যন্ত ‘স্বর্ণভূমি ডেভেলপার্স লিমিটেড’ হয়। কলকাতার গোলপার্কে এই সংস্থার হেড অফিস থাকলেও বাঁকুড়া, বর্ধমান, পুরুলিয়া জেলায় রমরমিয়ে ব্যবসা চালিয়েছিল। এজেন্টদের দাবি, শুধুমাত্র বাঁকুড়া জেলাতেই ওই সংস্থার প্রায় ৫ হাজার
এজেন্ট ছিলেন।

Advertisement

বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, গঙ্গাজলঘাটি, বড়জোড়ার মতো বিভিন্ন এলাকা এই সংস্থার শাখা অফিসও ছিল। রাজ্যে সারদা কাণ্ড নিয়ে হইচই হওয়ার পরেই একের পর এক অন্যান্য বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাও ঝাঁপ বন্ধ করে পাততাড়ি গোটানো শুরু করে। সেই তালিকায় ছিল এই সংস্থার নামও। সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে গঙ্গাজলঘাটি থানায় এজেন্টদের তরফে মোট দু’টি অভিযোগ দায়ের করা হয় সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে।

সপরিবারে এলাকা থেকে ফেরার হয়ে যান ওই দুই কর্তা। এজেন্টরা জানাচ্ছেন তাঁদের সঙ্গে কলকাতার এক ব্যক্তিও এই সংস্থা চালাতেন। তাঁরও খোঁজ পায়নি পুলিশ।

সংস্থার দীর্ঘদিনের এজেন্ট গঙ্গাজলঘাটির খাঁটা গ্রামের বাসিন্দা বিজয় রায় দাবি করেন, ‘‘কেবল মাত্র বাঁকুড়া জেলা থেকেই সংস্থাটি একশো কোটির বেশি টাকা সংগ্রহ করেছিল গ্রাহকদের কাছ থেকে। রেকারিং, ফিক্সড ডিপোজিটের মতো বিভিন্ন প্রকল্পে চড়া সুদে টাকা রোজগারের আশায় এই সংস্থায় বিনিয়োগ করতেন সাধারণ মানুষ। সংস্থাটি বাঁকুড়া জেলা ও অন্য জেলায় জমি কিনে কোথাও স্কুল বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল, কোথাও আবার আবাসনের প্রকল্প নিয়েছিল। বিজয়বাবু বলেন, “কিছু এজেন্ট কোটি টাকার বেশি ব্যবসা দিয়েছেন এই সংস্থায়। আমি নিজে অন্তত ১৩ লক্ষ টাকার ব্যবসা দিয়েছি। এমনকী নিজের জীবনের জমানো যত পুঁজি সবই বিনিয়োগ করেছিলাম এই সংস্থায়। সব গেল।’’

সংস্থার আরও এক দীর্ঘদিনের এজেন্ট তথা আমানত ও এজেন্ট সুরক্ষা মঞ্চের বাঁকুড়া জেলা সদস্য সমরেশ মহন্তের কথায়, “এলাকাবাসীর কাছ থেকে যেমন টাকা তুলেছি, তেমনই নিজের আত্মীয়দের কাছ থেকেও লক্ষাধিক টাকা তুলে সংস্থাকে দিয়েছিলাম। নিজেও টাকা রেখেছিলাম। এক টাকাও ফেরত পাইনি।”

বিজয়বাবু, সমরেশবাবুরা জানাচ্ছেন, এই সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পরে এজেন্টরা আমানতকারীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। অনেকেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। বর্তমানে ঘরছাড়া এজেন্টদের অনেকেই বাড়ি ফিরে এলেও প্রায়ই আমানতকারীদের রোষের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।

অবিলম্বে যাতে ওই সংস্থার সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার, সেই দাবি
তুলেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন