শিশু খুনে গ্রেফতার দুই পড়শি

বাড়ির উঠোনে খেলতে খেলতে হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়েছিল শিশুটি। বয়স মোটে তিন। নিজে নিজে বেশি দূরে যেতেও পারে না। কী হল, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না অভিভাবকেরা

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

  পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০৪:১৬
Share:

বাড়ির উঠোনে খেলতে খেলতে হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়েছিল শিশুটি। বয়স মোটে তিন। নিজে নিজে বেশি দূরে যেতেও পারে না। কী হল, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না অভিভাবকেরা। চার দিন পরে জঙ্গল থেকে রঞ্জিত মাহাতো নামে ওই শিশুর বস্তায় মোড়া দেহ উদ্ধার হয়। গোঁসাইডি গ্রামের ওই ঘটনায় দুই পড়শিকে গ্রেফতার করল পুরুলিয়া মফস্সল থানার পুলিশ। ধৃতেরা হল আলোমণি মাহাতো ও তার মা সিন্দুবালা মাহাতো। মঙ্গলবার বিকেলে গ্রাম থেকেই দু’জনকে ধরা হয়। বুধবার পুরুলিয়া আদালত ধৃতদের সাত দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।

Advertisement

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শিশুটির মায়ের সঙ্গে আলোমণির ঝগড়া হয়। ঝগড়ার কোনও কথা থেকে রাগের বশে আলোমণি শিশুটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গলায় প্লাস্টিকের দড়ি জাতীয় কিছু পেঁচিয়ে খুন করে।’’ তাঁর দাবি, ধৃতেরা জেরায় এ কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, খুনের পরে দেহ বাড়িতেই লুকিয়ে রাখে তারা। পরে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। তবে খুনের পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না সেটাও তদন্তে তলিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত ৭ মার্চ ছেলে রহস্যজনক ভাবে উধাও হওয়ার পরে বাড়ির আশপাশ, পুকুর ঘাট— সর্বত্র তন্নতন্ন করে খুঁজেও সন্ধান পাননি অভিভাবকেরা। পরের দিন শিশুর বাবা তরণী মাহাতো পুরুলিয়া মফস্সল থানায় নিখোঁজ ও অপহরণের মামলা দায়ের করেন। গত ১১ মার্চ আড়শার কড়েরিয়া জঙ্গল থেকে হলুদ রঙের একটি প্লাস্টিকের বস্তায় রঞ্জিতের পচাগলা দেহ মেলে। খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ। তদন্তের জন্য পুলিশ কুকুর আনা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা বস্তা শুঁকে গোঁসাইডি গ্রামের দিকেই দৌড় শুরু করেছিল কুকুরটি। কিছু দূরে গিয়ে একটি জোড়ের কাছে থেমে যায়।

Advertisement

তদন্তকারী দলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সে দিন কুকুরটি গোঁসাইডি গ্রামে গিয়ে আলোমণিদের উঠোনেও গিয়েছিল। সেই থেকে সন্দেহ দানা বাধে।

খোঁজ নেওয়া শুরু হয়, উধাও হওয়ার আঘে পাড়ার কার কার সঙ্গে শিশুটিকে দেখা গিয়েছে। পুলিশের দাবি— কয়েক জন জানান, তাঁরা শিশুটিকে শেষ আলোমণির সঙ্গে কথা বলতে দেখেছেন। কয়েক দিন আগে রঞ্জিতের মায়ের সঙ্গে কোনও ব্যাপারে আলোমণির ঝগড়া হয়েছিল, জানা যায় সে কথাও। এর পরেই আলোমণিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছিল। পুলিশের দাবি, জেরায় ভেঙে পড়ে আলোমণি খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।

পুলিশের দাবি, সে দিন কথা বলার ফাঁকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গলায় প্লাস্টিকের দড়ি জাতীয় কিছু পেঁচিয়ে ছেলেটিকে মেরে ফেলে আলোমণি। প্রথমে খাটের নীচে, পরে সেখান থেকে সরিয়ে ঝুড়ির মধ্যে লুকিয়ে রাখে দেহ। পরের দিন সুযোগ বুঝে বস্তায় ভরে জঙ্গলে ফেলে আসে। এই কাজে আলোমণির মা সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রঞ্জিতের বাবা তরণী মাহাতো বলেন, ‘‘সে দিন আমরা যখন তন্নতন্ন খরে খুঁজে বেড়াচ্ছি, ওদেরও জিজ্ঞাস করেছিলাম। বলেছিল, দেখেনি।’’ শিশুটির মা রবনী মাহাতো বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল বটে। কিন্তু তার থেকে যে এমনটা করে ফেলতে পারে দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। ও আমাদের বাড়িতেও আসত। সেদিন যখন খুঁজে মরছি, আমাদের সান্ত্বনাও দিয়েছিল।’’

বুধবার আদালতে তোলার সময়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে অভিযুক্তের কোন জবাব দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন