এক কলেজ শিক্ষকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জেরে গুরুতর জখম হল দুই স্কুলছাত্র।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে খয়রাশোলের পাঁচড়া মোড়ে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে। দুই ছাত্রই বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের পুরশুণ্ডা গ্রাম থেকে অন্য দিনের মতো সাইকেল চালিয়ে পাঁচড়া হাইস্কুলে আসছিল পঞ্চম শ্রেণির রোমন বাদ্যকর এবং নবম শ্রেণির আশিস বাদ্যকর। সেই সময় ছোট একটি চার চাকা গাড়ি চালিয়ে বোলপুর থেকে পাণ্ডবেশ্বরের দিকে যাচ্ছিলেন বোলপুর কলেজের এক শিক্ষক। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পাঁচড়া মোড়ে কাছাকাছি প্রথমে তিনি রোমনকে ধাক্কা মারেন। অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরে নিজের গাড়ি থামিয়ে সাহায্যে এগিয়ে আসেননি ওই শিক্ষক। উল্টে, স্কুলপড়ুয়াকে সাইকেল থেকে ছিটকে পড়তে দেখে গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। আর পালাতে গিয়েই তিনি এ বার ধাক্কা মারেন আশিসকে।
চোখের সামনে দুই স্কুলছাত্রকে এ ভাবে ধাক্কা মেরে জখম করতে দেখে আর চুপ থাকতে পারেননি উপস্থিত বাসিন্দারা। তাঁরাই গাড়ি এবং চালক ওই শিক্ষককে ধরে পুলিশে খবর দেয়। আহত পড়ুয়াদের হাসপাতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থাও করেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রোমনের ডান হাত ভেঙেছে। হাঁটুতেও চোট লেগেছে। সিউড়িতেই তার চিকিৎসা চলছে। আর আশিসকে রেফার করা হয়েছে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে। তার মাথায় চোট লেগেছে। এখনও জ্ঞান ফেরেনি। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকেরা।
গোটা ঘটনায় বিপর্যয় নেমেছে দুই ছাত্রের পরিবারে। দু’জনই দিনমজুর পরিবারের সন্তান। আশিসের বাবা মধু বাদ্যকর, মা সখী বাদ্যকর বলছেন, ‘‘ও-ই আমাদের পরিবারের প্রথম যে স্কুলে যাচ্ছে। কষ্ট করে ওকে পড়াচ্ছি। স্কুলে যেতে গিয়ে এমন বিপদ হবে ভাবিনি।’’ দু’জনেই হাসপাতালে ছেলের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছেন। ঘটনার পরেই সিউড়ি হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন রোমনের বাবা ক্যানেল বাদ্যকর, মা ডলি বাদ্যকর। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা একই পাড়ায় থাকি। ছেলে প্রাথমিক গণ্ডি পেরিয়ে সবে হাইস্কুলে যেতে শুরু করেছিল। রোজ আশিসের সঙ্গেই যেত। আশিসের জন্য খুব খারাপ লাগছে।’’ দুই গরিব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে গ্রামের মানুষ। আপাতত তাঁরা এবং স্কুলের শিক্ষকেরা দুই ছাত্রের চিকিৎসার খরচ জোগাচ্ছেন। ঘটনার জেরে এ দিন স্কুলের পঠনপাঠন ব্যহত হয়েছে।
এ দিকে, ওই কলেজ শিক্ষকের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাঁচড়া হাইস্কুলের শিক্ষক কল্যাণ দে এবং হাসপাতালে পড়ুয়াদের পৌঁছে দেওয়া স্থানীয় যুবক সন্তু মুখোপাধ্যায়। তাঁরা বলছেন, ‘‘উনি অত্যন্ত দায়িত্ববোধহীন ভাবে গাড়ি চালিয়েছেন। আমরা আন্তরিক ভাবে চাইছি ছেলে দুটো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক। সঙ্গে পুলিশকেও আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত অভিযুক্ত চালক এবং তাঁর গাড়িটিকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।