মল্লারপুরে স্কুল ছাত্রীর অপমৃত্যু

মৃতের পরিবার সূত্রের খবর, মল্লারপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সোনালী লেট তার মা ও দাদার সঙ্গে বাহিনা মোড়ের কাছে একটি বাড়িতে থাকত। ওই বাড়িতে কোনও শৌচাগার না থাকায় মৃতার মা মঙ্গলী লেট সম্প্রতি বাহিনা মোড় সংলগ্ন এলাকা থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে লেট পাড়াতে আর একটি পাকা বাড়ি তৈরি করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মল্লারপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০২:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল মল্লারপুরে। মৃত কিশোরীর নাম সোনালি লেট (১৫)। বাড়ি মল্লারপুর বাহিনা মোড় এলাকায়। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হলেও পরিবারের লোকেদের নানা প্রশ্ন থাকায় শুক্রবার সকালে রামপুরহাট হাসপাতালে ময়না-তদন্ত করতে রাজি হননি চিকিৎসক। আজ, শনিবার ময়না-তদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে দেহ পাঠানো হবে। এই নিয়ে ক্ষোভ ছড়ায় এলাকায়। রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে ময়না-তদন্ত হচ্ছে না এই খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে মল্লারপুরে বাহিনা মোড়ে কিছু সময়ের জন্য জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ অবরোধ তোলে।

Advertisement

মৃতের পরিবার সূত্রের খবর, মল্লারপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সোনালী লেট তার মা ও দাদার সঙ্গে বাহিনা মোড়ের কাছে একটি বাড়িতে থাকত। ওই বাড়িতে কোনও শৌচাগার না থাকায় মৃতার মা মঙ্গলী লেট সম্প্রতি বাহিনা মোড় সংলগ্ন এলাকা থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে লেট পাড়াতে আর একটি পাকা বাড়ি তৈরি করেন। মৃতার মা পুলিশকে জানিয়েছেন, অন্য দিনের মতোই বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ সোনালি সেই বাড়িতে একা স্নান করতে গিয়েছিল। অনেক ক্ষণ কেটে গেলেও ফিরে না আসায় চিন্তিত হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাঁর ছেলের দুই বন্ধু ছেলেকে ফোন করে জানায় যে, সোনালি নতুন বাড়ির কলতলাতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে সোনালির দাদা তার মামাতো দাদাকে সঙ্গে নিয়ে নতুন বাড়িতে পৌঁছায়। কিন্তু তাঁরা সেখানে গিয়ে দেখেন বাড়ির সদর দরজা বন্ধ। বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে তাকে কলতলায় অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে সোনালির মা এবং অন্যদের খবর দেয়।

সোনালির মা মঙ্গলীদেবী পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান যে, কলতলায় একটি কার্বলিক অ্যাসিডের শিশি পড়েছিল। তিনি জানান, তাঁদের ঘরটি মাঠের ধারে হওয়ায় সাপের উপদ্রব ছিল। সেই উপদ্রব থেকে বাঁচতেই কার্বলিক অ্যাসিড কিনে বাড়িতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই অ্যাসিডের শিশির বিষয়ে সোনালির জানার কথা নয়। শিশিটি কী করে সেখানে গেল তা নিয়ে ধন্দে পুলিশও। মঙ্গলীদেবীর দাবি, ‘‘মেয়েকে খুন করা হয়েছে।’’ কিশোরীর পরিবারের অনান্য সদস্যদের দাবি, বন্ধ ঘরে একা স্নান করছিল কিশোরীটি। সে ক্ষেত্রে দাদার দুই বন্ধু কলতলাতে পড়ে থাকার কথা কিভাবে জানতে পারল। এই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। পাড়া প্রতিবেশীদের না জানিয়ে কেন সরাসরি তার দাদাকে ফোন করা হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

Advertisement

মৃতার পরিজনেদের অভিযোগ, কিশোরীটির দাদার দুই বন্ধু খুনে জড়িত থাকতে পারে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে কিশোরীটির সঙ্গে পাড়ার একটি কিশোরের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কিশোরীটির পরিবারের আপত্তিতে সেই সম্পর্কে ছেদ পড়ে। তাই পাড়ার ওই কিশোরও সোনালির মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারে এমনই দাবি মৃতার পরিজনদের। পুলিশ কিশোরীর দাদার দুই বন্ধু-সহ পাড়ার ওই কিশোরটিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

এ দিকে, অচৈতন্য কিশোরীকে প্রথমে রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্ধমান নিয়ে যাওয়ার পথে সাঁইথিয়ার কাছে অবস্থার অবনতি ঘটলে দুপুরে রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, কিশোরীটির ঘাড়ের নীচের অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের অনুমান, কলতলায় পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত লেগেও মৃত্যু হতে পারে। আবার কিশোরীটির ঠোঁটে অ্যাসিডে পোড়ার দাগ থাকায় অ্যাসিড খাওয়ার কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন