অভিনব উদ্যোগ সাঁইথিয়ার সাংড়া পঞ্চায়েতের

স্কুলে ফলছে সব্জি, পাল্টাচ্ছে মিড-ডে মিলের স্বাদ

মাস সাতেক আগেও অনাবাদী হয়ে পড়েছিল ঝোপ জঙ্গলে ভরা পুকুরপাড়। সেখানেই এখন কলাবাগানের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বিভিন্ন সাথী ফসল। আর সেই ফসলই এখন এলাকার ৮/১০ টি স্কুলে মিড-ডে মিলে স্বাদ বৈচিত্র ফেরাচ্ছে।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০০:৪২
Share:

পরিচর্যা: সাংড়ায় ফসলে ভরে উঠেছে খেত। নিজস্ব চিত্র।

মাস সাতেক আগেও অনাবাদী হয়ে পড়েছিল ঝোপ জঙ্গলে ভরা পুকুরপাড়। সেখানেই এখন কলাবাগানের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বিভিন্ন সাথী ফসল। আর সেই ফসলই এখন এলাকার ৮/১০ টি স্কুলে মিড-ডে মিলে স্বাদ বৈচিত্র ফেরাচ্ছে। অভিনব উদ্যোগটি নিয়েছে সাঁইথিয়ার সাংড়া পঞ্চায়েত।

Advertisement

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে মিড-ডে মিলের মেনু নিয়ে একঘেয়েমির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কিন্তু সীমিত বরাদ্দে স্বাদ বৈচিত্র ফেরানোও সম্ভব নয় বলে প্রশাসনেরই অভিমত। তাই সীমিত বরাদ্দেই কী করে মিড-ডে মিলে স্বাদ বৈচিত্র ফেরানো যায় তা নিয়ে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তারই অন্যতম পতিত জমিতে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে সব্জি বাগান তৈরি। সেইমতো উদ্যোগটি নেয় ওই পঞ্চায়েত। স্থানীয় সুমিতা দে’র অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকা ১ একর ৪০ শতক একটি পুকুরের পাড়কে ভেঙে জমি হিসাবে তৈরি করে দেওয়ার শর্তে ৫ বছরের চুক্তিতে নেওয়া হয়। তারপর ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে সেখানে তৈরি করা হয় কলাবাগান। কলা বাগানের ফাঁকেই সাথী ফসল হিসাবে করা হয় বিভিন্ন সব্জির চাষ।

রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০ জন জবকার্ডধারীকে নিয়োগ করা হয়েছে। কয়েকমাস আগেও যেখানে দেখা যেত আগাছা আর কাঁটার ঝোপ সেখানে এখন কলাবাগানের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বিভিন্ন রকম সব্জি। ইতিমধ্যেই ৫ দিন এলাকার ১০টি স্কুলে সেই সব্জি বিতরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীও বিভিন্ন স্কুলে ওই বাগানের সব্জি বিলি করে গিয়েছেন।

Advertisement

এ দিকে, পঞ্চায়েতের ওই বাগান থেকে সব্জি পেয়ে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় ধোবাজোল সাঁওতাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মধুসূদন পাল, সোমসা আংশিক বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সাধন মণ্ডলরা জানান, ৫ দিন পঞ্চায়েতের বাগান থেকে সব্জি পাওয়ায় আমাদের কেনার প্রয়োজন হয়নি। সেই টাকায় আমরা ছাত্রছাত্রীদের পাতে মাছ ডিম দিতে পেরেছি। এ ভাবে সব্জি পেলে সীমিত বরাদ্দেই মিড-ডে মিলে অনেকটাই স্বাদ বৈচিত্র ফেরানো সম্ভব হবে মনে করছেন তিনি। খুশি পড়ুয়ারাও। সোমসা আংশিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুবর্ণা হাজরা, নানুবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুজাতা অঙ্কুররা জানিয়েছে, ‘‘রোজ রোজ একই সব্জি দিয়ে মিড-ডে মিল খেতে খেতে বিরক্ত ধরে গিয়েছিল, পঞ্চায়েতের বাগান থেকে বিভিন্ন রকম সব্জি পাওয়ায় স্বাদ বদলেছে। বাড়তি ১ দিন মাছ–ডিমও হয়েছে।’’

শুধু স্বাদ বৈচিত্র ফেরানোই নয়, ওই প্রকল্পে বহুমুখি সম্ভবনাও রয়েছে। পঞ্চায়েত জানাচ্ছে, পতিত জমি চাষযোগ্য করার পাশাপাশি বাগান তৈরির সময় ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে অন্যান্য বহু জবকার্ডধারী তো বটেই বাগান পরিচর্চার জন্য ১০জন মজুরের বছরে ১০০ দিনের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। রয়েছে লাভেরও সম্ভাবনা। পঞ্চায়েতের হিসাব বলছে, কলাবাগান তৈরিতে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে খরচ হয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা। একবছরে তিন লক্ষ ১০ হাজার টাকার মোচা এবং কলা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাগানের জন্য খরচ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সারা বছরে ৩৫ হাজার টাকার সব্জি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধান মিতারানি মণ্ডল বলেন, ‘‘মোচা এবং কলা স্কুলগুলিতে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। অন্য দিকে জেলাশাসক জানান, মিডডে মিলকে আরও গ্রহণযোগ্য করতে প্রতিটি পঞ্চায়েত বাগান তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন