মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই সক্রিয় গ্রামবাসীরা, ‘তোলার’ টাকা ফেরত চেয়ে নেতার বাড়িতে বিক্ষোভ

মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চের বৈঠকে তোলাবাজির টাকা ফেরত দিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের জন্য বরাদ্দ প্রকল্প থেকে তোলা নেওয়া দলের এক শ্রেণির লোকের ‘অভ্যাস’ হয়ে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন মমতা।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ

ইলামবাজার শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ২৩:১১
Share:

জমায়েত: তৃণমূল নেতার বাড়িতে গ্রামবাসীরা। ইলামবাজারে। নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরেই মুখ খুলতে শুরু করল আম জনতা।

Advertisement

মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চের বৈঠকে তোলাবাজির টাকা ফেরত দিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের জন্য বরাদ্দ প্রকল্প থেকে তোলা নেওয়া দলের এক শ্রেণির লোকের ‘অভ্যাস’ হয়ে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন মমতা। গরিবদের জন্য বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা থেকে ২৫ শতাংশ কমিশন দলের লোকেরা নিচ্ছে, এ খবর তিনি রাখেন বলেও জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টা পরেই আবাস যোজনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের দুই নেতার বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। ন্যায্য টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও উঠল। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে ইলামবাজার থানার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামে। এই গ্রামটি ইলামবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন। ক’দিন আগে একই অভিযোগ তুলে ইলামবাজার পঞ্চায়েতেরই গোপালনগর গ্রামে তৃণমূলের বুথ সভাপতির বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীর একাংশ। তাঁদের দাবি ছিল, ওই গ্রামে সরকারি সমস্ত কাজ দেখাশোনা করেন শাসকদলের ওই নেতা। কে ১০০ দিনের কাজ করবেন, কে করবেন না, তা-ও তিনিই ঠিক করেন। মজুরি থেকে টাকা কেটেও নেন। এ দিন শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামেও বাসিন্দাদের অভিযোগের কাঠগড়ায় শাসকদলের বুথ সভাপতি এবং পঞ্চায়েত সদস্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীচন্দ্রপুরে আড়াইশো থেকে তিনশোটি পরিবারের বসবাস। ভোটার সংখ্যা এক হাজারের বেশি। গ্রামের বেশির ভাগই গরিব। দিন আনি দিন খাওয়া। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই গ্রামে সরকারি সমস্ত কাজ দেখাশোনা করেন গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য উত্তম বাউড়ি ও তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজীব আঁকুড়ে। কে ১০০ দিনের কাজ করবেন, কে করবেন না, কে আবাস যোজনার বাড়ি পাবেন, কে পাবেন না— তা-ও ওই দু’জনই ঠিক করেন বলে গ্রামবাসীর দাবি। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও উঠেছে এই দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে।

Advertisement

বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা ফেরতের দাবিতে এ দিন সকাল থেকেই দুই নেতার বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীদের একাংশ। এ ছাড়াও বেশ কয়েক জনের বাড়িতে শৌচাগার করে দেওয়ার নামেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে। গ্রামবাসী ভজহরি বাউড়ি, সন্ধ্যা বাউড়ি বলেন, ‘‘মাস চারেক আগে ১০০ দিনের কাজ করে এখনও মজুরি পাইনি। যতবারই ওই দু’জনকে জিজ্ঞেস করেছিস, ততবারই ‘দেখছি, দেখব’ করে ওঁরা কাটিয়ে দিয়েছেন। আর মানতে পারছি না। এখন আমরা সকলে এককাট্টা হয়ে ন্যায্য টাকা নিতে তাঁদের বাড়িতে এসেছি।’’ প্রশান্ত বাউড়ি, সন্তোষ বাউড়িদের আবার দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা থেকে কমিশন দিতে হয়েছে ওই দু’জনকে। এখন আমরা সব ফেরত চাই।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ চলার পরে পুলিশ আসার পর তৃণমূলের ওই দুই নেতা ঘেরাও মুক্ত হন। মধ্যস্থতার আশ্বাসে গ্রামবাসীরা ফিরে যান। যদিও এ দিন গ্রামে গিয়ে তৃণমূল নেতা উত্তম বাউড়ি ও রাজীব আঁকুড়ের দেখা পাওয়া যায়নি। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া মেলেনি। বিজেপি-র জেলা সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে অভিযোগগুলো নিয়ে আমরা বারবার সরব হয়েছিলাম, মঙ্গলবার সেই সব অভিযোগ কার্যত মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন। আমরা চাই এই সমস্ত দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’

বিডিও (ইলামবাজার) দেবদুলাল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে ইলামবাজার পঞ্চায়েতের জন্য মোট ৩৭০০ বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা পঞ্চায়েতকে দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা প্রাপকদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বিডিও বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত ভাবে জানালে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ইলামবাজার পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের কৃষ্ণকান্ত হাজরা বলেন, ‘‘এই দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। দোষ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এই ঘটনায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোথাও লিখিত অভিযোগ হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন