কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতির অপেক্ষা

ভোটার তালিকা সংশোধনে প্রশংসা পেল জেলা

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আঠারো উত্তীর্ণ কলেজ পড়ুয়া, প্রতিবন্ধী এবং সরকার অনুমোদিত হোমে থাকা আবাসিকরা— মূলত এই তিনটি ক্ষেত্রে সাফল্যই প্রশংসার মূলে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভোটার তালিকা সংশোধন। আঠারো বছর উত্তীর্ণ হলেই হবু ভোটারদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তিকরণ। সেই ধারাবাহিক কাজে নানা রকম অভিনবত্ব এনে
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশংসিত হল বীরভূম।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আঠারো উত্তীর্ণ কলেজ পড়ুয়া, প্রতিবন্ধী এবং সরকার অনুমোদিত হোমে থাকা আবাসিকরা— মূলত এই তিনটি ক্ষেত্রে সাফল্যই প্রশংসার মূলে। ‘‘কী ভাবে এ কাজে এগিয়েছিল প্রশাসন। তার ডিজিটাল প্রেজেনন্টেশন (তথ্য, ছবি এবং তথ্যচিত্র) রাজ্য নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার পরই প্রশংসা জুটেছে’’— বলছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘রাজ্যে ইপি (ইলেক্ট্রোরাল পপুলেশন) এবং লিঙ্গ অনুপাতের যে সূচক, তার তুলনায় আমাদের জেলার সূচক এগিয়ে। আমরা তাই গুণগত দিকটার উপরে গুরুত্ব দিয়েছিলাম। তাতেই আমাদের কাজ রাজ্য নির্বাচন দফতরের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ওঁরা সেটা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনেও পাঠিয়েছেন।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরের ৫ জানুয়ারি নতুন সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়। নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম তোলা, নাম সংশোধন, বুথ বা কেন্দ্র বদলের আবেদন— বছরভর সে কাজ হয় ব্লকে ব্লকে। তারপরেও এমন অনেকে থাকেন, যাঁরা বৈধ ভোটার তালিকায় আসার যোগ্য হয়েও অসেন না। প্রতি বছরের অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই কাজই বিশেষ যত্ন নিয়ে করা হয়। যাকে বলে ‘বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধনী’। ভোটার তালিকায় নাম তোলা বা সংশোধন কেন জরুরি, সেটা মানুষকে বোঝাতে নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকে জেলা প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কোথাও ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করিয়ে, কোথাও লোকগানের প্রচার করে, কোথাও গাছ লাগিয়ে প্রচার চলে। ঘোরে ট্যাবলো। এর বাইরেও আঠারো উত্তীর্ণ কলেজ পড়ুয়া, প্রতিবন্ধী এবং হোমের আবাসিকদের নাম তালিকায় নিয়ে আসার জন্য অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিল জেলা প্রাশাসন।

Advertisement

কেমন সেই উদ্যোগ?

প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, লোকসভা কিংবা বিধানসভা নির্বাচন হলে অনেক কলেজ পড়ুয়া ভোটার তালিকায় নাম তোলাতে উৎসাহী হয়। কিন্তু, পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে অনেকেই ততটা উৎসাহ দেখান না। এমন পড়ুয়াদের কথা ভেবেই জেলার সরকারি ও বেসরকারি মোট ৩১টি কলেজের (ডিগ্রি কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পলিটেকনিক এবং আইটিআই কলেজে) প্রতিটিতে দুটি করে শিবির আয়োজিত হয়েছে। ‘ক্যাচ দেম ইয়ং’ নাম দিয়ে এই শিবিরগুলিতে সচেতন করা হয়েছে তরুণ ভোটারদের। যেহেতু তরুণ প্রজন্ম। তাই অনলাইনে আবেদন করতেও উৎসাহিত করা হয়েছ। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা। জেলা যুব কল্যাণ আধিকারিক সৈকত হাজরা বলছেন, ‘‘প্রায় প্রতিটিতেই ১০০ শতাংশ সাড়া মিলেছে।’’ তিনি জানান, ১৯৯৯ সালে জন্মেছেন এমন ২১৫৪ জন পড়ুয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫১৭ জন অনলাইনে তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় নথিভূক্ত করেছেন। বাকি ১৯৩৭ জন ৬ নম্বর ফর্ম পূরণ করে তলিকায় নাম তুলেছেন। একই ভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কষ্ট করে ব্লক ‘ফেসিলিটেশন সেন্টার’এ আসতে না দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন আধিকারিকরা। মিশনের নাম ছিল, ‘নো মোর হার্ডশিপ’। জেলায় কত প্রতিবন্ধী আছেন, আগেই তার ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি করিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সেই তালিকা ধরে
১১৪১ জন প্রতিবন্ধীর সঙ্গে যোগযোগ করে প্রশাসন। অন স্পট ১২৫৩ জনের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা গিয়েছে।

সৈকতবাবু বলছেন, ‘‘এত দিন সরকারি হোমের আবাসিকরা ভোটার তালিকার বাইরে থেকে যেতেন। ‘এক্সট্রা মাইল’ নাম দিয়ে জেলাশাসকের নির্দেশে জেলায় সরকার অনুমোদিত ৬টি হোমের ১৯০ জন আবাসিকের সঙ্গে দেখা করে ভোটার তালিকায় নাম তোলানোয় উপযুক্ত এমন ৪২ জন আবেদন পূরণ করানো হয়। সেই কর্মকাণ্ডকে একসূত্রে গেঁথেই নির্বাচন
কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। তাতেই মিলিছে প্রশংসা।

জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, আগের বিধানসভা নির্বাচনের সময় সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ‘ভরসা’ অ্যাপ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কর্তৃক
প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছিল। একই ভাবে ভোটার তালিকায় নাম তোলার এই অভিনব প্রয়াসকে মডেল হিসেবে তুলে ধরতেই এই প্রচেষ্টা। এখন অপেক্ষা কেন্দ্রীয় নির্বাচন দফতরের স্বীকৃতির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন