ছাতনায় অভিযুক্ত তৃণমূল প্রধানের স্বামী, খতিয়ে দেখছে দল

জল চেয়ে জুটল ঘাড়ধাক্কা, বিক্ষোভ

টিউবওয়েল সারানো জন্য প্রধানের কাছে দাবি জানাতে গিয়ে তাঁর স্বামীর কাছে জুটল ঘাড়ধাক্কা। ছাতনা ১ পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলে কয়েকশো গ্রামবাসী বুধবার ছাতনা ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখালেন। অনেকেই সঙ্গে করে হাঁড়ি-কলসি নিয়ে এসেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ছাতনা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০২:৫৩
Share:

হাঁড়ি ভেঙে প্রতিবাদ। ছাতনা ব্লক অফিসে তোলা নিজস্ব চিত্র।

টিউবওয়েল সারানো জন্য প্রধানের কাছে দাবি জানাতে গিয়ে তাঁর স্বামীর কাছে জুটল ঘাড়ধাক্কা। ছাতনা ১ পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলে কয়েকশো গ্রামবাসী বুধবার ছাতনা ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখালেন। অনেকেই সঙ্গে করে হাঁড়ি-কলসি নিয়ে এসেছিলেন। আছাড় মেরে হাঁড়ি-কলসি ভেঙে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান ব্লক অফিসে। ঘটনার বিবরণ-সহ এলাকার টিউবওয়েল মেরামতির দাবিতে তাঁরা বিডিওকে স্মারকলিপি দেন। ছাতনার জয়েন্ট বিডিও অমল ঘোষাল বলেন, ‘‘ওই গ্রামের বিকল হয়ে যাওয়া টিউবওয়েল সারাতে লোক পাঠানো হয়েছে।’’

Advertisement

ছাতনা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মালিরডাঙা এলাকায় তিনটি টিউবওয়েল প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। এলাকায় একটি পাইপলাইনের কল থাকলেও তাতে জল আসে না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। ফলে চরম জলকষ্টে ভুগছে গোটা গ্রাম। টিউবওয়েল সারানোর দাবিতে দিন দশেক আগেই পঞ্চায়েতে লিখিত ভাবে আবেদন করেছিলেন গ্রামবাসী। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে গ্রামের বাসিন্দা গৌতম গড়াই, শ্যামল গড়াই, মিঠুন গড়াই, মকর গড়াই-সহ জনা দশেক গ্রামবাসী পঞ্চায়েতে যান প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, সেই সময় পঞ্চায়েতে প্রধান মোনালিসা সেনের সঙ্গে বেশ কিছু বহিরাগত ছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম মোনালিসাদেবীর স্বামী প্রদীপ সেন ওরফে হুনা। কেন টিউবওয়েল সারানো হচ্ছে না তাঁরা তা প্রধানের কাছে জানতে চাইলে প্রদীপবাবু তাঁদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীর তরফে গৌতমবাবু, শ্যামলবাবুর প্রশ্ন, ‘‘প্রধানের স্বামী কোনও সরকারি পদে নেই। অথচ তিনি কী ভাবে হম্বিতম্বি শুরু করলেন আমাদের উপর? কল সারানো হবে না জানিয়ে তিনি ও অন্য বহিরাগতরা আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে প্রধানের অফিস থেকে বের করে দেন।” তাঁদের ক্ষোভ, “পঞ্চায়েত তো মানুষের জন্যই। আমাদের কী অভিযোগ জানানোর অধিকার নেই? প্রধানের যদিও সরকারি ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু তাঁর স্বামী কোন অধিকারে আমাদের বললেন কল সারনো হবে না?” ঘটনাটি জানতে পেরে বাসিন্দাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

উল্লেখ্য, গত পঞ্চায়েত ভোটে ছাতনা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে তৃণমূল। ১১টি আসনের মধ্যে ৯টিই রয়েছে শাসকদলের হাতে। বাকি ২টি আসনের মধ্যে ১টি সিপিএম ও ১টি আরএসপি জেতে। মালিরডাঙা এলাকা থেকে জয়ী হন আরএসপি প্রার্থী। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে গ্রামবাসীদের প্রধানের অফিস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী প্রদীপবাবু। তাঁর দাবি, “লোকে অনেক কিছুই বলে। ও সব মিথ্যা অভিযোগ।” প্রধান মোনালিসাদেবীও অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বিরোধীদলের লোকজনরাই গ্রামবাসীকে এই ধরনের অভিযোগ করতে প্ররোচনা দিচ্ছে। কল সারানোর সরঞ্জাম বা লোক ছিল না। সেটাই গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তাঁরা কোনও কথাই শুনতে চাননি। উল্টে আমাকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তবে আমরা কোনও কটূক্তি করিনি বা ঘাড় ধাক্কা দিয়েও কাউকে বের করে দিইনি।” যদিও ওই গ্রামবাসীর দাবি, দোষ করে এখন বিরোধীদের নাম জড়ানোর চেষ্টা চলছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। জলের দাবিতেই তাঁরা সবাই এককাট্টা হয়েছেন।

Advertisement

ছাতনার জয়েন্ট বিডিও অমল ঘোষাল জানান, ওই গ্রামের টিউবওয়েল সারাতে লোক পাঠানো হয়েছে। গ্রামবাসীর হেনস্থার অভিযোগটি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপান উতোর শুরু হয়ে গিয়েছে ছাতনায়। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি জীবন চক্রবর্তী শাসকদলকে কটাক্ষ করে বলেন, “৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় পরে বাম জনপ্রতিনিধিরা মানুষের সঙ্গে ঠিক এই রকমই ব্যবহার করতেন। তৃণমূল প্রথম থেকেই এই কাজ শুরু করে দিয়েছে। মানুষ বামেদের যেমন ছুঁড়ে ফেলেছে, তৃণমূলকেও তাই করবে।” তৃণমূলের ছাতনা ব্লক সভাপতি পরমেশ্বর কুণ্ডু এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “দলের নির্দেশ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না। প্রধান ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা আছে কি না খতিয়ে দেখে জেলা নেতৃত্বকে রিপোর্ট পাঠাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন