মুখ্যমন্ত্রীকে জানালেন পুরপ্রধান

সিউড়ির জলসঙ্কট মিটছে এই মাসেই

বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে মুখ্যমন্ত্রীকে পুরপ্রধান জানান, নতুন জল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

বোলপুর শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৫
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

সিউড়ি পুরশহরে জলসঙ্কট কাটতে চলেছে এ মাসেই। বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে এমনই দাবি করলেন সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

বুধবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে মুখ্যমন্ত্রীকে পুরপ্রধান জানান, নতুন জল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। ৩১ মার্চেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে প্রকল্পের। উপকৃত হবেন সিউড়ি এলাকার সাতটি ওয়ার্ডের মানুষ।

শতাব্দী প্রাচীন পুরসভা তথা জেলা সদর সিউড়ি শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা পুর এলাকার সব ক’টি ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জল না পৌঁছনো। পুরসভা সূত্রে খবর, আগের জলপ্রকল্পকে সম্প্রসারিত করতে বেশ কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও জলসঙ্কট মেটেনি। ১৮ ওয়ার্ড বিশিষ্ট পুরসভার অন্তত সাতটি ওয়ার্ডে ঠিক মতো জল পৌঁছতো না। তথ্য বলছে, সিউড়ি শহরে প্রতিদিন ২০ লক্ষ গ্যালন জলের প্রয়োজন। টাকা ঢেলেও ৭ লক্ষ গ্যালনের বেশি জল সরবরাহ করা যাচ্ছিল না। ফলে সমস্যা ছিলই।

Advertisement

এই কারণেই গত পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল শাসিত পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জল সমস্যাই ছিল বিরোধীদের মূল বিষয়। নির্বাচনে জয়ী হলে শহরের জলকষ্ট দূর করবেন, তখনই আশ্বাস দিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী তথা জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম। কথা রেখেছেন তিনি। ফের ক্ষমতা দখলের পরই শহরের জলকষ্ট মেটাতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কাজের দায়িত্ব পায় পুর কারিগরি দফতর। সেই প্রকল্পই ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে শেষ হতে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, ‘‘বরাদ্দ হয়েছিল মোট ১৩ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। সিউড়ি পুরসভায় যে জলপ্রকল্প ছিল, সেটিকে সম্প্রসারিত করে সমস্ত ওয়ার্ডে জল পৌঁছনোই মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকল্পটির।’’ সিউড়ির দুর্গাপুর আদিবাসী পাড়া লাগোয়া মযূরাক্ষী নদীর বুকে তিনটি গভীর নলকূপ বসিয়ে জল তোলার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেই জল তুলে পরিস্রুত করে জমা করার জন্য ফের ৫.৪ কিমি দূরত্বের সিউড়ি শহরে দত্তপুকুরে একটা ১২ লক্ষ লিটার জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ওভারহেড জলাধার তৈরি হয়। দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জয়দেব মণ্ডল এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার চিন্ময় সিংহরা বলছেন, ‘‘৪৪ কিমি পাইপ লাইন দিয়ে জলসঙ্কটে থাকা পুরসভার ৬, ৭, ১০, ১১, ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জল পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই কাজ শেষ পর্যায়ে।’’ প্রকল্প শেষ হলে জলকষ্ট মিটবে বলে আশাবাদী পুর ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা।

এ দিন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, ‘‘সিউড়ির জলপ্রকল্পে প্রথমে কিছু বিচ্যুতি ছিল। সেটা কাটিয়ে জলপ্রকল্পের কাজ শেষের পথে। নলহাটি, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট কোনও পুর এলাকায় জল নিয়ে সমস্যা নেই। শুধু দুবরাজপুর পুরসভা এলাকায় জল প্রকল্পের কাজ চলছে। সে কাজও চার, পাঁচ মাসের মধ্যে শেষ হবে।’’ পরিস্থিতি জেনে খুশি হন মুখ্যমন্ত্রী।

কী অবস্থা দুবরাজপুরের?

দুবরাজপুর পুরসভা সূত্রে খবর, জলপ্রকল্পের জন্য ২০১৩ সালের শেষে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘শহর পরিকাঠামো উন্নয়ন’ অনুমোদিত অর্থ সাহায্যে মেলে। বরাদ্দ অঙ্ক মোট ২৩ কোটি ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। ‘শহর পরিকাঠামো উন্নয়ন’য়ের সেই টাকা ‘আর্বান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট স্কিম ফর স্মল অ্যান্ড মিডিয়ম টাউনস’-এর মাধ্যমে পুরসভার হাতে পৌঁছে যাওয়ার পরই মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টটের (এমইডি), পুর কারিগরি দফতরের তত্ত্বাবধানে সেই কাজে হাত পড়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি। প্রকল্পের নীল নকশা অনুযায়ী, গভীর নলকূপের সাহায্যে অজয় নদ থেকে জল তুলে ১২.৭ কিমি দূরত্বের দুবরাজপুর শহরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে পরিস্রুত পানীয় জল। সেই জন্য অজয় নদের পাড়ে রতনপুর মৌজায় তৈরি হয়েছে পাম্প হাউস ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।

পাইপলাইনের মাধ্যমে আসা সেই পরিস্রুত জল জমা করার জন্য একটি বড় ও একটি ছোট, মোট দুটি জলাধার তৈরি হওয়ার কথা দুবরাজপুর শহরে। ১১ লক্ষ ৯০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জলাধারটি তৈরি হবে পাহাড়েশ্বরের কাছে। অন্যটির ধারণক্ষমতা ১ লক্ষ ৫০ হাজার লিটার। সেটি শহরের সিনেমা হলের কাছে নির্মাণ হবে।এই দুটি জলাধার থেকে প্রায় ৫৬ কিমি ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইনের মাধ্যমে শহরের মোট ৮৩১১টি বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার কথা। সে কাজও শেষের পথে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন