সাত বছরেও চালু হয়নি সজলধারার জল প্রকল্প

দু’-এক বছর নয়, সাত-সাতটা বছর পরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রশাসন সেটুকু করতে না পারায় চালু হয়নি রামপুরহাটের মহেন্দ্রপুর গ্রামের সজল ধারা প্রকল্প। প্রশাসনের হিসেব বলছে, প্রকল্প চালু হলে মহল্লার শ’খানেক পরিবার উপকৃত হত।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০২:১৬
Share:

হয়েও পড়ে রামপুরহাটের মহেন্দ্রপুর গ্রামের সজল ধারা প্রকল্পের কাজ।— সব্যসাচী ইসলাম

প্রয়োজন শুধু একটা বিদ্যুৎ সংযোগের!

Advertisement

দু’-এক বছর নয়, সাত-সাতটা বছর পরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রশাসন সেটুকু করতে না পারায় চালু হয়নি রামপুরহাটের মহেন্দ্রপুর গ্রামের সজল ধারা প্রকল্প। প্রশাসনের হিসেব বলছে, প্রকল্প চালু হলে মহল্লার শ’খানেক পরিবার উপকৃত হত।

পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য সজল ধারা প্রকল্প গৃহিত হয়েছিল। প্রকল্প অনুযায়ী, জল সরবরাহের জন্য গ্রামের ভিতরে ২ কিলোমিটার জুড়ে পাইপ বসানোর কাজও শেষ হয়। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে, রাস্তার ধারে, স্কুলের ধারে, গ্রামের ভিতরে ২৪টি ট্যাপ পয়েন্ট করে কোথাও কোথাও সেগুলিও সিমেন্টের ঢালাই করে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর স্বেচ্ছায় দান করা এক শতক জায়গায় পাম্প হাউস তৈরি করা হয়। কিন্তু গোল বাধে ওই বিদ্যুৎ সংযোগের বেলায়।

Advertisement

গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হতে বসেছে ট্যাপের স্ট্যান্ড পয়েন্টগুলি। জল সরবরাহের জন্য পানীয় জলের লাইনগুলিও ভেঙে গিয়েছে। আর কাজের কাজ না হওয়ায় এলাকার লোকজনকে দূর থেকে পানীয় জল বয়ে আনতে হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, গ্রামের দুর্গামন্দির তলার সরকারি নলকূপ অকেজো থাকায় এলাকার ত্রিশটি পরিবার স্থানীয় জুনিয়র হাইস্কুল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সজল ধারার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গরমে জল আনতে যাওয়ার দুর্ভোগ পোয়াতে হত না!’’

গ্রামের যুবক সহিদুল ইসলাম জানান, প্রায় সাত বছর আগে ২০০৭ –০৮ আর্থিক বছরে রামপুরহাট ১ ব্লকের মধ্যে একমাত্র মহেন্দ্রপুরে সজলধারা প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপ লাইনে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প গৃহিত হয়। প্রকল্পটি চালু করার পরে ১১ জনের কমিটি গঠিত হয়। সহিদুল ছিলেন কমিটির সম্পাদক। পাম্প হাউস নির্মাণের জন্য স্বেচ্ছায় এক শতক জায়গা দানকারী আব্দুল কাদের সভাপতি হন। সহিদুল জানান, প্রকল্পটির জন্য প্রায় ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ নুরুজ্জামান, রবিউল আলমেরা জানাচ্ছেন, কেবলমাত্র বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার জন্যই প্রকল্পটি চালু করা যায়নি। প্রথমদিকে গ্রামবাসী হুকিং করে দু’একদিন প্রকল্প থেকে পানীয় সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু পরে বেআইনি ভাবে বিদ্যুত সংযোগ নেওয়ার জন্য আপত্তি ওঠায় তা আর হয়নি। তখনই বন্ধ হয়ে যায় জল সরবরাহ।

রামপুরহাট ১ ব্লকের অধীন দখলবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দারা সম্প্রতি প্রকল্পটি চালু করার জন্য রামপুরহাট ১ ব্লকের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁরা লিখিত ভাবে বিডিওর কাছে ডেপুটেশন দিয়েছেন।

কেন সাত বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হল না? রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম দফতরের রামপুরহাট বিভাগীয় বাস্তুকার অশোক শ্যামলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ঠিক কী হয়েছে না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’’ তবে তাঁর আশ্বাস, ওই গ্রামের বাসিন্দারা দেখা করলে বা সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানালে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

একই আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও নীতিশ বালা। তিনি বলেন, ‘‘প্রকল্পটির বাস্তব অবস্থা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’ বিষয়টি নিয়ে পথে নামার কথা বলেছে কংগ্রেসও। দখলবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অঞ্চল প্রধান সিপিএম এর সাফিক হোসেনও বলছেন, ‘‘আগের বোর্ড ওই প্রকল্পটি চালু করতে পারেনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

সকলেই যখন আন্তরিক তখন প্রকল্প চালু হচ্ছে না কেন, সেটা স্পষ্ট হচ্ছে না এলাকাবাসীর কাছে। এঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘আসলে সকলেই শুধু আশ্বাস দেন। কেউই দোড়-ঝাঁপ করে কাজটা হাসিল করার চেষ্টা করছেন না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন