ভিটেহারা। উচ্ছেদের পরে নিজেদের সামগ্রী তুলে নিয়ে যাচ্ছে খুদেরাও। মঙ্গলবার রামপুরহাটে ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।
অবশেষে দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে জবরদখল হয়ে থাকা সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হল প্রশাসন। আর তারই সূত্রে রামপুরহাটে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমও পেল নিজস্ব জমি।
মঙ্গলবার মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস-এর নেতৃত্বে রামপুরহাট হাইস্কুল লাগোয়া এলাকা থেকে ছ’ফুঁকো পর্যন্ত উচ্ছেদন অভিযান চালাল প্রশাসন। অভিযান চালাতে গিয়ে অবশ্য তেমন একটা বাধা পেতে হয়নি প্রশাসনকে। এ দিন এসডিও ছাড়া ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত রায়, পুরপ্রধান অশ্বিনী তেওয়ারি, নিগমের রামপুরহাট বিভাগীয় বাস্তুকার অশোক শ্যামল উচ্ছেদ অভিযানে সামিল ছিলেন। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য সোমবার বিকালেই জবরদখলকারীদের শেষ বারের মতো বোঝাতে এলাকায় গিয়েছিলেন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে এসডিও এবং পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধানও ছিলেন।
এ দিকে, প্রথম দিকে রামপুরহাট ফুটপাথ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কংগ্রেস এবং সিপিএম প্রভাবিত সংগঠন এসডিও-র কাছে পুর্নবাসন ছাড়া উচ্ছেদ অভিযানের বিরোধিতা করেন। এসডিও তাঁদের সাফ জানিয়ে দেন, ‘‘কাউকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। যে সমস্ত দোকানদারকে সরানো হচ্ছে, তাঁদের অস্থায়ী ভাবে রামপুরহাট হাইস্কুল লাগোয়া এলাকায় পাঁচ ফুট করে জায়গা দেওয়া হচ্ছে। আর যাঁদের ঘর ভাঙা পড়েছে, তাঁদের পুরসভা থেকে বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন আগে শহরে বিভাগীয় অফিস, গ্রাহক সেবা কেন্দ্র ও অতিথিশালা নির্মাণের জন্য রামপুরহাট হাইস্কুলের পাশে ৩০ কাঠা জমি পেয়েছিল নিগম। কিন্তু, ওই জমির ১৬৮ বর্গফুট অংশ জবরদখল করে ছ’টি পরিবার বসবাস করছিল। এবং প্রায় ২১টি দোকানও এলাকায় ব্যবসা করছিল। অতীতে বহুবার জবরদখলকারীদের সরিয়ে প্রশাসন নিগমের জমি উদ্ধারের চেষ্টা করলেও নানা বাধায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে শহরেই বিপুল ভাড়া দিয়ে দফতর চালাতে হচ্ছে নিগমকে।
সম্প্রতি ওই জমিই উদ্ধারে উদ্যোগ নেন উমাশঙ্করবাবু। মাস দু’য়েক থেকে তিনি জবরদখলকারীদের নিজে থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য একাধিক বার মৌখিক অনুরোধ করে আসছিলেন। তাতে সাড়াও মেলে। সম্প্রতি দু’একজন নিজে থেকে সরে যান। এবং নিগমের অফিস নির্মাণ ও গাড়ি যাতায়াতের জন্য ১৫ ফুট জায়গা ছেড়ে দেন। মাঝে অবশ্য খানিক বিরোধিতার মুখেও পড়তে হয়। অভিযানের প্রতিবাদে এলাকার ফুটপাথ ব্যবসায়ীরা পুর্নবাসনের দাবিতে পুরপ্রধানকে স্মারকলিপি দেন। সেই দলে ছিলেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর আব্বাস হোসেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সঞ্জীব মল্লিক এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর জামালউদ্দিন শেখরাও। কংগ্রেস প্রভাবিত রামপুরহাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক শাহাজাদা কিনু এবং সিপিএম প্রভাবিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক কৃষ্ণগোপাল দে-র অভিযোগ, ‘‘পুরপ্রধান ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন মা–মাটি–মানুষের সরকারের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী পুর্নবাসন ছাড়া উচ্ছেদ করতে চান না। অথচ আজ পুর্নবাসন ছাড়াই ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করল প্রশাসন।’’ তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এক জন বলছেন, উঠে যান। আর এক জন বলছেন, পুর্নবাসন ছাড়া উচ্ছেদ হবে না। একই সরকারের দুমুখো নীতির জন্যই ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি পড়ল।’’
এ দিকে, হাইস্কুল লাগোয়া একটি হোটেলের মালিক এ দিন দাবি করেন, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের ৬০ বছরের পুরনো হোটেল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকী, ভাঙার আগে তাঁদের কোনও রকম আইনি নোটিসও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই এসডিও-র সাফ জবাব, ‘‘কিছু বলার থাকলে অভিযোগকারী মামলা করতে পারেন। কিন্তু, আমাকে তো আমার কাজ করতেই হবে।’’ অন্য দিকে, ওই জমিতে বসবাসকারী ছ’টি পরিবার এ দিনই এসডিও-র কাছে সরে যাওয়ার জন্য দু’দিন সময় চায়। তিনি তাঁদের সেই অনুরোধ রেখেছেন। এ দিনই দুপুরে আবার শহরের পাঁচমাথা মোড়েও বহু পুরনো একটি মিষ্টির দোকানে উচ্ছেদ অভিযান চালায় প্রশাসন।