রোজার মাসে খুশি আনল আবু

ফি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ধারাবাহিক ভাবে সাফল্য পেয়ে আসছে এই জেলার ছেলেমেয়েরা। মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষাতেও গত কয়েক বছর ধরে সফল হচ্ছে কিছু ছেলেমেয়ে। এ বারও সেই ধারা বজায় থাকল। 

Advertisement

শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০১:২৩
Share:

সফল: বাবার সঙ্গে আলিম-এ রাজ্যে সম্ভাব্য প্রথম আবু। নিজস্ব চিত্র

মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় সাফল্য পেল বাঁকুড়ার দুই ছেলে। শুক্রবার মাদ্রাসা বোর্ডের ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, আলিম-এ সম্ভাব্য প্রথম দশে সর্বোচ্চ পেয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিষ্ণুপুরের মড়ার গ্রামের আবু বক্কর দালাল। হুগলির ফুরফুরা ফাতেহীয়া সিনিয়র টাইটেল মাদ্রাসার এই পড়ুয়া ৯০০ নম্বরের মধ্যে ৮৪০ পেয়েছে। আর হাই মাদ্রাসার সম্ভাব্য প্রথম দশের মধ্যে অষ্টম স্থান পেয়েছে বাঁকুড়ার সানাবাঁধের সম্মিলনী হাই মাদ্রাসার শেখ মোজ্জাফর হোসেন। তার বাড়ি হিড়বাঁধের সালুইপাহাড়ির এলোরা গ্রামে।

Advertisement

ফি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ধারাবাহিক ভাবে সাফল্য পেয়ে আসছে এই জেলার ছেলেমেয়েরা। মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষাতেও গত কয়েক বছর ধরে সফল হচ্ছে কিছু ছেলেমেয়ে। এ বারও সেই ধারা বজায় থাকল।

টানাটানির সংসারের ছেলে আবুর এই সাফল্যে তাজ্জব এলাকাবাসী। টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে যেন খুশির জোয়ার। এ দিন দুপুরে বৃষ্টির মধ্যেই আবুকে শুভেচ্ছা জানাতে গ্রামবাসী ভিড় করেন। তার বাবা লোকমান দালাল বলেন, ‘‘ছোট থেকেই বড় শান্ত ছেলেটা। পড়াশোনাতেও ভাল ফল করে আসছিল। কিন্তু, রাজ্যে সেরা হবে, সেটা আশা করিনি।’’

Advertisement

তিনি জানান, মড়ার গ্রামের কাছে দুন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মড়ার সম্মেলনীতে আবু গোড়ার দিকে পড়াশোনা করে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার জন্য তাকে হুগলির ফুরফুরা শরীফে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ছেলের সাফল্যের পরে আবু বক্করের মা রাহেনা দালাল বলেন, ‘‘ছেলেকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হত। তবে সে কথা দিয়েছিল, ভাল ফল করবে। ছেলে কথা রেখেছে।’’ আবুর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার দিদি ও বোন সাইমা দালাল, আসমা দালালেরা।

আবুর কথায়, ‘‘দিনে প্রায় ষোলো ঘণ্টা লেখাপড়া করতাম। হস্টেলে সাড়ে তিনশো আবাসিক ছিল। মাদ্রাসার শিক্ষকেরা আলাদা করে হস্টেলে এসে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করিয়ে যেতেন।’’ সে জানায়, প্রধান শিক্ষক আবু আলহা সিদ্দিকিও তাদের সবাইকে আগলে রাখেন সন্তান স্নেহে।

একঘেয়েমি কাটাতে হস্টেলে সে হুমায়ূন আহমেদ ও সমরেশ মজুমদারের গল্প-উপন্যাস পড়ত। মাঝে মধ্যে ক্রিকেটও খেলত। তবে মোবাইল ফোনে খুব প্রয়োজন না পড়লে হাতই দিত না। তার ইচ্ছা, ‘‘বড় হয়ে অধ্যাপক হতে চাই আর বাবা-মাকে যত্নে রাখতে চাই। আরবিক সাহিত্য নিয়ে পড়ার ইচ্ছা।’’ আবু ফুরফুরার ওই স্কুলের পরবর্তী পড়াশোনা করতে চায়।

কিন্তু, ছেলের সাফল্যেও বিমর্ষ লোকমান। তিনি বলেন, ‘‘সামান্য জমি চাষ করেই সংসার সামলাতে হয়। ছেলে আরও পড়তে চায়। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’’ পড়শি গুলজার বায়েন, নুর ইসলাম মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘রোজার মাসে খুশি নিয়ে এল আবু।’’

মোজ্জাফর হোসেনের বাড়ি হিড়বাঁধে হলেও সে বাঁকুড়ার বাদুলাড়ায় আলআমিন মিশনে থেকে পড়াশোনা করে। তার বাবা শেখ মাস্তাকিম আলি পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক। মা আজ্ঞুমআরা বেগম অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। দুই ছেলের মধ্যে মোজ্জাফর বড়। সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। ইতিমধ্যে সে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সূর্যপুরের আলআমিন মিশনের শাখায় বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়েছে। সে চিকিৎসক হতে চায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন