West Bengal Municipal Election 2022

West Bengal Municipal Election Results 2022: জেলে বসেই জয়ের খবর পেলেন সঞ্জীব

জামিন পেয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তিনি বলেন, ‘‘ওয়ার্ডবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। এই রায় মেনে নিয়ে পুরসভার কাছে সহযোগিতা চাইছি।’’

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২২ ০৭:৩৮
Share:

লড়াকু: জেল থেকে ফিরে সঞ্জীব মল্লিক। বুধবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

ভোটের দিন, রবিবার তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে তোলা হয়েছিল পুলিশ ভ্যানে। ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতার হন রামপুরহাট পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সঞ্জীব মল্লিক। বুধবার, ফল বেরোনোর দিন দেখা গেল ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তাঁর পক্ষেই রায় দিয়েছেন। ভোট গণনা কেন্দ্রের থেকে অনতিদূরে জেলখানায় বসে নিজের ওয়ার্ডে জয়ী হওয়ার ঘোষণা শুনলেন সঞ্জীব।

ভোটের দিন ওয়ার্ডে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিপিএমের অভিযোগ, ভোট লুট আটকাতে গেলে তুলে নিয়ে গিয়ে সঞ্জীবকে মারধর করেছিল বহিরাগতরা। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন স্ত্রী ডালিয়া মল্লিকও। ওয়ার্ডের অধিকাংশ ভোট তখনও বাকি। সেই অবস্থায় যাঁকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল সেই সঞ্জীবকেই ওয়ার্ডবাসী চতুর্থবারের জন্য জয়ী করতে উচ্ছ্বসিত সিপিএম। এ দিন জামিন পেয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল দুষ্কৃতীদের দিয়ে ভোট লুট করে ওয়ার্ড দখল করার চেষ্ঠা করেছিল। কিন্তু ওয়ার্ডের মানুষ দলমত নির্বিশেষে তা রুখে দিয়েছেন। এ জন্য ওয়ার্ডবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। এই রায় মেনে নিয়ে পুরসভার কাছে সহযোগিতা চাইছি।’’
সকালে ১৫৩ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের আব্দুল মালেক পরাজিত হওয়ার ঘোষণা হতেই সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে উচ্ছসিত কর্মীরা নিজেদের মধ্যে লাল আবির খেললেন। ছুটলেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর বাড়িতে, যেখানে সঞ্জীবের পরিজনেরা তাঁর বাড়ি ফেরার জন্য অধীর ভাবে অপেক্ষা করছিলেন। ডালিয়াদেবী বললেন, ‘‘ওয়ার্ডের মানুষের ভরসায় এতদূর এগিয়ে যেতে পেরেছি। তাই এই জয় ওয়ার্ডের মানুষের ভালোবাসার জয়। তবে ছাপ্পা ভোট না পড়লে এই জয়ের ব্যবধান আরও বাড়ত।’’ ফলাফলে দেখা যায় যে বুথে ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল সেই ১৩৭ নম্বর বুথে সঞ্জীব মল্লিক ২৭৯টি ভোটে পেয়েছেন। তৃণমূল প্রার্থী আব্দুল মালেক ২৬৬টি ভোট পেয়েছেন। ১৩ ভোটে এগিয়ে সঞ্জীব মল্লিক।
গত ১৫ বছর এই ওয়ার্ড থেকে সিপিএমের সঞ্জীব জয়ী হয়েছেন। গত বিধানসভা সিপিএমের থেকে তৃণমূল ৫৩৫ ভোট বেশি পেয়েছিল। সেই ফলাফলকে সামনে রেখেই এই ওয়ার্ডে বদলের ডাক দিয়েছিল শাসক তৃণমূল। ওয়ার্ড পুনরুদ্ধারের জন্য আদিবাসী এলাকায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের জেলা নেতাদের নিয়ে প্রচার চালিয়েছিল তৃণমূল। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন খাতে আদিবাসী পাড়ায় সিধো কানহুর মূর্তিও স্থাপন করা হয়। সংখ্যালঘু ভোট যাতে প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের ভোট বাক্সে না যায় তারও চেষ্টা চালিয়েছিল তৃণমূল। সঞ্জীবও বিরোধী কাউন্সিলর হিসেবে তাঁর অধিকার খর্ব করে ওয়ার্ডের উন্নয়নে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলে লিফলেট বিলি করেন।
এ দিন পরাজয়ের পরে দলের কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তোলেন আব্দুল মালেক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দলের কর্মীদের গদ্দারির জন্য এই পরাজয়।’’ তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন এই হার তা দলীয় স্তরে আলোচনা করা হবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, ‘‘ভোটের দিন পুলিশ-প্রশাসন ও শাসক দলের বহিরাগত বাহিনী একসঙ্গে মিলিত ভাবে জনগণের মতদানকে বাধা দিয়েও ওয়ার্ডের কাজের মানুষের জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি। আর এই একটা জয় শাসক দলের সমস্ত ওয়ার্ডের জয়কে ম্লান করে দিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement