বারবার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষিপ্ত বাসিন্দাদের অবরোধ সারেঙ্গার আমঝোড়ে।—উমাকান্ত ধর
আগুন নিয়ে জমাট বেঁধে উঠল রহস্য। বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানার আমঝোড় গ্রামে কয়েকটি বাড়ির খড়ের পালুইয়ে গত কয়েক দিন ধরে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে পালাচ্ছিল। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগের ভিত্তিতে এক যুবককে গ্রেফতার করে হাজতবন্দি করে পুলিশ। কিন্তু তারপরেও যে কে সেই। শনিবার রাতের অন্ধকারে ফের দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আরও একটি পালুই। রাত পোহাতেই দুষ্কৃতীদের ধরার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ আমঝোড় মোড়ে পিড়রগাড়ি–সারেঙ্গা রাস্তা অবরোধ শুরু হয়। আটকে পড়ে রাস্তার দু’দিক থেকে আসা যানবাহন। সাতসকালেই ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সারেঙ্গা থানার পুলিশ। বিক্ষুব্ধদের বোঝানোর পরে সকাল ৭টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।
সারেঙ্গা–পিড়রগাড়ি রাস্তার পাশে আমঝোড় গ্রাম। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা পেশায় কৃষিজীবী। বাড়ি বাড়ি রয়েছে খড়ের পালুই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে অরুণকুমার সিংহ মহাপাত্রের খামারে রাখা খড়ের পালুইয়ে প্রথম আগুন লাগে। পুরো পালুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরের রাতে ফের আগুন লাগে অভয়চরণ সিংহ মহাপাত্র, সাধুচরণ সিংহ মহাপাত্র এবং বিষ্ণুচরণ সিংহ মহাপাত্রের পালুইয়ে।
আগুন লাগার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারে একাংশের অভিযোগের তির ছিল গ্রামেরই এক যুবকের বিরুদ্ধে। তাঁদের সন্দেহ, অমর সিংহ মহাপাত্র নামে ওই যুবক ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে একের পর এক পালুইয়ে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিল। শনিবার অমরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। সেই দিনই তাকে গ্রেফতার করে খাতড়া আদালতে হাজির করে পুলিশ। তার জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। কিন্তু, তার পরেও শনিবার রাতে ফের আগুন লাগে কল্যাণ সিংহ মহাপাত্র নামে গ্রামের এক বাসিন্দার খড়ের পালুইয়ে।
শনিবারের আগুন লাগার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার দাবিতে সরব হন উত্তেজিত গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, পালুই থেকে যে কোনও সময় আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে বাড়িতে। ঘটে যেতে পারে বড়সড় কোনও দুর্ঘটনা। শনিবারের আগুন লাগার ঘটনাতেও অভিযুক্ত যুবকের কোনও যোগসাজশ থাকতে পারে বলে গ্রামবাসীদের একাংশ এ দিন দাবি করেন।
প্রাকৃতিক কোনও কারণে আগুন লাগার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। কল্যাণ সিংহ মহাপাত্র বলেন, ‘‘কোনও একটি পালুইয়ে হঠাৎ যে আগুন লেগে গিয়েছে এমনটা নয়। রাতের অন্ধকারে আগুন লাগছে। তাও পর পর। যে সমস্ত পালুই বাড়ির বাইরে খোলা জায়গায় রয়েছে বেছে বেছে সেগুলোতেই আগুন লাগছে। সব মিলিয়ে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
যদিও অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি তার পরিবারের সদস্যরা। অভিযুক্তের এক ভাই বলেন, ‘‘অমর জেলে থাকা অবস্থাতেও আগুন লেগেছে। এর থেকেই বোঝা যায় আগুন লাগার ঘটনায় সে কোনও ভাবে জড়িত নয়।’’ তাঁর দাবি, গ্রামের কিছু মানুষ ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে অমরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছেন। এই ভাবে গ্রামে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, কে বা কারা আগুন লাগাচ্ছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পিছনে ব্যক্তিগত কোনও শত্রুতা রয়েছে কী না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।