Dengue

ডেঙ্গি কেন, বোঝানো হবে স্কুলের প্রার্থনায়

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় পাঁচটি উচ্চমাধ্যমিক, একটি নিম্ন মাধ্যমিক ও গোটা ২০ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই স্কুলগুলিতে বেশ কয়েক হাজার পড়ুয়াকে যদি আগামী কয়েক সপ্তাহ লাগাতার এই প্রচারের আওতায় রাখা যায়, তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১৫
Share:

ডেঙ্গি মোকাবিলায় জন-সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। দুবরাজপুরে স্কুল পড়ুয়াদের মাধ্যমে সেই চেষ্টাই শুরু করে দিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, জেলার দুবরাজপুর পুর এলাকায় এই রোগের প্রকোপ মারাত্মক আকার নিয়েছে।

Advertisement

ঠিক হয়েছে, প্রার্থনার সময় উপস্থিত স্কুল পড়ুয়াদের এই রোগ প্রতিরোধে সচেতন করবেন শিক্ষক ও শিক্ষিকারা। যাতে বাড়ি গিয়ে পড়ুয়ারা অভিভাবকদের সতর্ক করতে পারে। নিজেরাও সতর্ক থাকতে পারে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি জানান, সম্প্রতি জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শকদের অনুরোধ করা হয়েছে বিদ্যালয়গুলিতে যেন এই বার্তা পৌঁছে দেন ওঁরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল করিমরা বলছেন, ‘‘এমনিতেই পড়ুয়াদের মধ্যে পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি নির্দেশ রয়েছে শিক্ষা দফতরের। সিএমওএইচও বলছেন। এটা ঠিকই যে পড়ুয়ারা বার্তা বহনের সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হতে পারে। আমরা ইতিমধ্যেই দুবরাজপুরের স্কুলগুলিতে বার্তা পাঠিয়েছি।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় পাঁচটি উচ্চমাধ্যমিক, একটি নিম্ন মাধ্যমিক ও গোটা ২০ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই স্কুলগুলিতে বেশ কয়েক হাজার পড়ুয়াকে যদি আগামী কয়েক সপ্তাহ লাগাতার এই প্রচারের আওতায় রাখা যায়, তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বেই। এ নিয়ে আশাবাদী স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দফতর। যে হারে রোগ ছড়াচ্ছে তাতে এই নির্দেশ খুব জরুরি মানছেন শিক্ষকেরাও।

Advertisement

গত মাসের ২৪ তারিখ জেলায় প্রথম তিন জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু মেলে। তার মধ্যে দুবরাজপুরের এক স্কুল ছাত্রী ছিল। সেই শুরু। তারপর থেকে ডেঙ্গির থাবা দুবরাজপুর পুর এলাকায় একেবারে জাঁকিয়ে বসেছে। প্রথমে দুবরাজপুর পুর এলাকার সাত নম্বরের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। সেটা ক্রমশ ছাড়িয়ে পড়ছে অন্য ওয়ার্ডেও। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। জেলার ডেঙ্গি রোগী শতাধিক। তার মধ্যে দুবরাজপুরেই আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ এর বেশি। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের উদ্বেগ স্বাভাবিক। আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যেও।

রোগ প্রতিরোধে ও মশার বংশবিস্তার রোধে স্বাস্থ্য দফতর, দুবরাজপুর পুরসভা যৌথ ভাবে প্রচার চলাচ্ছে। মেডিক্যাল ক্যাম্প, মশার বংশবৃদ্ধি রুখতে রাসায়নিক স্প্রে, কামান দাগা এবং জনসচতনতা প্রচার চলেছে। বাড়ি বাড়ি প্রচারে স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশাপাশি কাজে লাগানো হচ্ছে পুর এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী, সহায়িকা এবং শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের দিদিমণিদের। তবুও সচেতনতায় খামতি থাকছে। তা নিয়েই দুঃশ্চিন্তায় ছিল স্বাস্থ্য দফতর। স্কুল পড়ুয়াদের সচেতন করার ভাবনা সেখান থেকেই।

দুবরাজপুর আরবিএসডি স্কুলের নবম শ্রেণির এক পড়ুয়া দিন কয়েক আগেই জ্বরে ভূগে মারা গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর স্বীকার না করলেও ওই পড়ুয়া ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছে এক প্রকার নিশ্চিত সকলেই। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধূসূদন মণ্ডল বলছেন, ‘‘যে দিন ওই ছাত্র মারা যায়, সে দিন ওর শোকসভা থেকেই ডেঙ্গি সচেতনতা প্রচার করা হয়েছিল। নির্দেশ না পেলেও এটা আমাদের সকলের স্বার্থেই চালিয়ে যেতে হবে।’’ একই বক্তব্য দুবরাজপুর সারদেশ্বরী বিদ্যামন্দির ফর গার্লসের টিআইসি সুরভী বক্সীর। দুবরাজপুর শ্রী শ্রী সারদা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস চট্টোরাজ বলেন, ‘‘অনেক আগে থেকেই এই প্রচার চালাচ্ছি।’’

সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ পাঠ বেসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন ঘোষ, কলুপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অরুণ খান এবং আব্দুল মেমোরোরিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের-সহ শিক্ষিকা সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়রা। ওঁরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চাদের প্রতিদিনই সচেতন করার চেষ্টা চালাচ্ছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন