সাজা হয়, অপরাধে রাশ কই

দুই শহরে নারী নির্যাতন ছাড়াল ১০০, ধর্ষণ ১৯

জেলার দুই বড় শহর বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের থানার তথ্যই জানান দিচ্ছে, নারী নিগৃহের ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। কেবল মাত্র বাঁকুড়া মহিলা থানাতেই চলতি বছরে গত এগারো মাসে মোট এগারোটি ধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share:

এমনই আলো-আঁধারি পথে চলে যাতায়াত। বাঁকুড়া শহরে। নিজস্ব চিত্র

কেন আমি আমার নিজের ভারতে নিরাপদ নই?— সংসদ ভবনের বাইরে সেই প্রশ্ন তুলেছেন দিল্লির মেয়ে অনু দুবে। অনুর মত প্রকাশ্যে বলতে না পারলেও একই প্রশ্ন ঘুরছে বাঁকুড়া জেলার বহু মেয়ের মনে। কেউ টিউশনে বেরিয়ে পরিচিত ‘কাকু’র হাতে নিগৃহীতা হয়েছেন, কেউ আবার বন্ধুর সঙ্গে সরস্বতী পুজো দেখতে দেখতে বেরিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আবার বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন বধূও রক্ষা পাননি। তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে তাঁকেও!

Advertisement

জেলার দুই বড় শহর বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের থানার তথ্যই জানান দিচ্ছে, নারী নিগৃহের ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। কেবল মাত্র বাঁকুড়া মহিলা থানাতেই চলতি বছরে গত এগারো মাসে মোট এগারোটি ধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকজন নির্যাতিতা নাবালিকাও। অন্যদিকে বিষ্ণুপুর থানায় চলতি বছরে গত নভেম্বর পর্যন্ত দায়ের হওয়া ধর্ষণের অভিযোগের সংখ্যা সাতটি। ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটলেও অভিযোগ অনেকেই করেন না। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “ইভটিজিং-এর মত ঘটনা রুখতে জেলার মহিলা পুলিশ নিয়মিত সাদা পোশাকে রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে। এই বিষয়ে বিশেষ নজর রয়েছে।’’

নারী নিগ্রহের ঘটনাগুলির কয়েকটির ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করেছে। কেবল পুলিশি সক্রিয়তাই নয়, গত কয়েক বছরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধর্ষণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে কড়া সাজা ঘোষণাও হয়েছে।

Advertisement

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাঁকুড়া শহরের এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বন্ধুর সঙ্গে সরস্বতী পুজো দেখতে বেরিয়ে শহর লাগোয়া গড়াবাড়ি এলাকায় গণধর্ষণের শিকার হন। ওই ঘটনার দু’বছরের মাথায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা বিচারক অপূর্ব সিংহরায় এই মামলায় সাত জন অভিযুক্তকে কুড়ি বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। অথচ তার পরেও ফের একই ঘটনার অভিযোগ ওঠে মাসখানেক আগে বাঁকুড়াতেই। এক মানসিক ভারসাম্যহীন বধূ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে রাস্তা থেকে ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে ঝোপঝাড়ে ভরা নির্জন এলাকায় গণধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ সাত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। ঘটনার চার্জশিট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।

আবার পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা ও নিগৃহীতার পরিবারকে সাহায্য না করার অভিযোগ ওঠে বিষ্ণুপুরের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায়। গত জানুয়ারিতে বিষ্ণুপুরের ওই স্কুল ছাত্রী টিউশনে যাওয়ার পথে এক ব্যক্তির হাতে নিগৃহীতা হয় বলে অভিযোগ। তার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ প্রথমে এই ঘটনার অভিযোগই নিতে চায়নি। অভিযুক্তও থানা-পুলিশ না করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। অভিযোগ জানাবেন বলে অনড় থাকেন ছাত্রীর মা। শহরের মানুষও এই ঘটনার বিরুদ্ধে পথে নামেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ পরে অভিযোগ নেয় ও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। তবে অভিযুক্ত বর্তমানে জামিনে মুক্ত।

নারী নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনায় সাজা দেওয়ার পরেও এই ঘটনাগুলিতে রাশ পড়ছে না কেন?— প্রশ্ন উঠছে। বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্ত বলেন, “শুধু পুলিশি সক্রিয়তার উপরে ভরসা করে নারী নির্যাতন নির্মূল করা সম্ভব নয়। নারী নিগ্রহ বা ধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে গোটা সমাজকে এক হয়ে এগিয়ে এসে নিগৃহীতার পাশে দাঁড়াতে হবে। যাতে দুষ্কৃতীরা বুঝতে পারে নিগৃহীতারা অসহায় নন।”

মনোবিদ তথা বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজের শিক্ষিকা সানুশ্রী ভট্টাচার্য বলেন, “ধর্ষণের সাথে শারীরিক তৃপ্তির কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ ধর্ষণ একটা অপরাধ। এই ঘটনা রুখতে মেয়েদের প্রতি পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন আনা দরকার। এর সূচনা করতে হবে স্কুলস্তর থেকেই। অনেক সময় দেখি বিভিন্ন মহিলা বা সামাজিক সংগঠন মেয়েদের স্কুলে গিয়ে তাদের সচেতন করে। এই কর্মসূচি ছেলেদের স্কুলে নেওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন