ছেঁড়া জুতো পায়েই দৌড়  

ছেঁড়া জুতো পায়েই কলকাতার রেডরোডে ওয়ার্ল্ড ম্যারাথনে নামতে চলেছেন পুরুলিয়ার কাশীপুরের যুবক নির্মল মাহাতো। আজ, রবিবার কুয়াশা জড়ানো ভোরে ওই দৌড় শুরু হচ্ছে। আর সেখানে এক বুক প্রত্যাশা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ম্যারাথনে সেরা হওয়া নির্মলও নিজেকে আরও এক বার প্রমাণ করতে দৌড়তে চলেছেন। 

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৭
Share:

বাড়ির উঠোনে। নিজস্ব চিত্র

ছেঁড়া জুতো পায়েই কলকাতার রেডরোডে ওয়ার্ল্ড ম্যারাথনে নামতে চলেছেন পুরুলিয়ার কাশীপুরের যুবক নির্মল মাহাতো। আজ, রবিবার কুয়াশা জড়ানো ভোরে ওই দৌড় শুরু হচ্ছে। আর সেখানে এক বুক প্রত্যাশা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ম্যারাথনে সেরা হওয়া নির্মলও নিজেকে আরও এক বার প্রমাণ করতে দৌড়তে চলেছেন।

Advertisement

এক বছর ধরে এই দিনটির অপেক্ষায় থাকলেও প্রতিনিয়ত দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করা এই যুবকের কলকাতায় যাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। শুক্রবার কাশীপুরের রামবনি টোলার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, জমি থেকে ধান তুলে আনছেন। বলেন, ‘‘আগে তো অনেক জায়গায় দৌড়ছি। পুরস্কারও পেয়েছি। কিন্তু, কলকাতায় ওই ম্যারাথনে দেশ-বিদেশ থেকেও অনেকে আসেন বলে শুনেছি। তাঁদের সঙ্গে দৌড়নোর সুযোগ পেতে এক বছর ধরে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু, কলকাতায় যাওয়ার টাকাই জোগাড় হচ্ছিল না।’’

তবে, গত মাসে পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা নিতে গিয়ে এক হাজার টাকা পেয়ে তাঁর সেই দুর্ভাবনা কেটে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন খামের ভিতরে হাজার টাকা দেখে মনে হয়েছিল— যাক কলকাতার ওয়ার্ল্ড ম্যারাথনে যাওয়ার একটা হিল্লে হল।’’ তাঁর দাবি, গত বছর কলকাতায় জাতীয় পর্যায়ের একটি ম্যারাথনে ২১ কিলোমিটার দৌড়ে তিনি দ্বিতীয় স্থান দখল করেন। সেই সুবাদে মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরের হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিলেন। তারপর থেকেই রেডরোডে ওয়ার্ল্ড ম্যারাথনে নামার প্রস্তুতি নিয়ে চলেছেন।

Advertisement

তার সুফলও পেতে শুরু করেছেন নির্মল। কয়েক দিন আগে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে বেঙ্গল মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক মিটে চল্লিশোর্ধ্ব বিভাগে ১০ হাজার ও পাঁচ হাজার মিটার দৌড়ে জোড়া সোনা জিতেছেন।

কিন্তু, তাঁর দ্বিতীয় কোনও জুতো নেই। যে জুতো পায়ে গত বার কলকাতায় সাফল্য পেয়েছেন, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে দৌড়তে গিয়ে সেই জুতো আরও জীর্ণ হয়ে পড়েছে। নির্মল বলেন, ‘‘আমার সম্বল এই এক জোড়া জুতোই। ছিঁড়ে গিয়ে পায়ের আঙুল বেরিয়ে যাচ্ছিল। তাই কলকাতায় যাওয়ার আগে মুচিকে দিয়ে সেলাই করিয়ে নিয়েছি।’’

পরিশ্রমও কম করেননি। তিনি জানান, প্রতি দিন ভোরে বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরের দ্বারকেশ্বর নদের চরে ঘণ্টা দুয়েক ধরে অনুশীলন করে গিয়েছেন। বাড়ি ফিরে ভাত বা মুড়ি খেয়ে ধান জমিতে নেমে পড়েছেন।

তবে, চিন্তা তাঁর জুতো নিয়েই। নির্মল বলেন, ‘‘জুতোটা ছেঁড়া হলেও এটা পরেই কোয়েম্বাটুর, গোয়াতে ন্যাশনাল মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্সে ম্যারাথনে সাফল্য পেয়েছি। দেখা যাক, এ বার কলকাতায় মাটিতে

কী হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন