পাশে মেয়ে। রক্ত দিচ্ছেন ইয়াদত।—নিজস্ব চিত্র
এত দিন তিনি ভাবতেন, রক্ত দিলে বুঝি শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তা ছাড়া অন্যের জন্য খামোখা নিজের রক্ত দিতে যাওয়া কেন! তাই ভুলেও কোনও দিন রক্তদান শিবিরের ধারে কাছে পা মাড়াননি ওই যুবক। ময়ূরেশ্বরের বেজা গ্রামের সেই ইয়াদত শেখকেই কিনা হাসিমুখে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল রক্তদান শিবিরের। রক্ত দিয়ে নিজেই জানালেন, ঠেকে শিখে রক্ত দিতে এসেছেন পেশার দিনমজুর ইয়াদত।
কী সেই শিক্ষা?
ছোট থেকেই ইয়াদতের দু’বছরের মেয়ে নিশাদ পারভিনের থ্যালেসেমিয়া ধরা পড়ে। তার পর থেকেই নিয়মিত রক্ত দিতে হয় তাকে। মাস দুয়েক আগে মেয়ের রক্ত জোগাড় করতে চরম সমস্যায় পড়তে হয় ইয়াদতকে। ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, রক্তদাতা কিংবা রক্তদানের কার্ড ছাড়া রক্ত মিলবে না। বহু ঘুরেও রক্তদাতা জোগাড় করতে পারেননি তিনি। শেষমেশ স্থানীয় ষাটপলশার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে একটি কার্ড মিলেছিল। সে যাত্রা ওই কার্ডের বিনিময়েই রক্ত পেয়ে মেয়েকে বাঁচাতে পেরেছিলেন ইয়াদত। সেই থেকেই বুঝেছিলেন রক্তদানের মূল্য কতটা।
তাই এ দিন ষাটপলশায় জাতীয় স্বেচ্ছা রক্তদান দিবস উপলক্ষে শিবির হচ্ছে শুনেই স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে ছুটেছিলেন ইয়াদত। শিবিরের আয়োজন করেছিল ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেখানে রক্ত দিয়ে ইয়াদত বলেন, ‘‘মেয়ের রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খাই। ওই অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছি রক্তদানের মূল্য কতটা। আমার মতো অনেককেই তো একই সমস্যায় পড়তে হয়।’’ তাই শুধু নিজেই নন, পরিজনদেরও নিয়ে এসেছেন তিনি।
শুধু ইয়াদতই নন, একই সমস্যায় পড়ে রক্তদানের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ দিন রক্ত দিয়েছেন স্থানীয় বারুইগাছির বামাচরণ মণ্ডল, রঞ্জিত মণ্ডল, ষাটপলশার জয়ন্ত সেন, সুশান্ত সেন, শম্পা সেনরাও। তাঁরা বলেন, ‘‘স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কার্ডেই বিভিন্ন সময় পরিজনদের রক্তের সমস্যা মিটেছে। অন্যের রক্ত পরিজনদের জীবনরক্ষা করেছে। রক্ত দিয়েই সেই ঋণ শোধ করতে এসেছি।’’
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার হলধর মণ্ডল জানান, এ দিন ৩৮ জন রক্ত দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই তাঁদের কাছে এসে কার্ড নিয়ে রক্তের সমস্যা মিটেছে। তাই শিবিরের খবর পেয়ে তাঁরা নিজে থেকেই রক্ত দিতে হাজির হন। শিবিরে ছিলেন ময়ূরেশ্বর ২-এর সদ্য প্রাক্তন বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমানও। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে সবাই এগিয়ে এলে রক্তের আকাল ঘুচে যাবে।’’