অনাস্থা ভোটের আগে ‘অপহৃত’ তৃণমূল সদস্য

আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে দিন কয়েক আগেই অনাস্থা এনেছেন দলেরই সাত তৃণমূল সদস্য। আগামী ১৩ জানুয়ারি সেই অনাস্থা প্রস্তাবেরই ভোটাভুটি হওয়ার কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৫
Share:

অনাস্থা প্রস্তাবের দিন তোফা বাদ্যকর (বেগুনি চাদর গায়ে)।—ফাইল চিত্র।

আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে দিন কয়েক আগেই অনাস্থা এনেছেন দলেরই সাত তৃণমূল সদস্য। আগামী ১৩ জানুয়ারি সেই অনাস্থা প্রস্তাবেরই ভোটাভুটি হওয়ার কথা। আর তারই আগে রাতের অন্ধকারে এক বিক্ষুব্ধ মহিলা সদস্য এবং তাঁর স্বামীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল প্রধানের বিরুদ্ধেই। সোমবার গভীর রাতে দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের কাপসতোড় গ্রামের ঘটনা। মঙ্গলবার সকালে দুবরাজপুর থানায় তোফা বাদ্যকর নামে ওই মহিলা তৃণমূল সদস্য এবং তাঁর স্বামী জিতেন বাদ্যকরকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

Advertisement

পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১১ জন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট ৯টি আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। দু’টি আসন পায় সিপিএম। প্রধান হন তৃণমূলের শিবঠাকুর মণ্ডল। যিনি দলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্রের কাছের লোক বলেই এলাকায় পরিচিত। কিন্তু, গত কয়েক মাস থেকেই বেশ কিছু বিষয় নিয়ে প্রধানের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় দলেরই অন্যান্য পঞ্চায়েত সদস্যদের। পঞ্চায়েতের কাজের হিসেব চেয়ে কয়েকটি আরটিআই-ও হয়। কিছু দিন আগে নিখিল বাউড়ি নামে এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের মত্যুর পরেই প্রধানের বিরুদ্ধে অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়। গত ২৯ ডিসেম্বর ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল সদস্য টুম্পা দাস, আশিস বাগদি, সুনীল বাগদি, জামাল খান, কল্পনা দাস এবং তোফা বাদ্যকরেরা প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেন। গত ৩১ ডিসেম্বর সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখেন দুবরাজপুরের যুগ্ম বিডিও অসিতকুমার বিশ্বাস। নির্দিষ্ট হয় ভোটাভুটির দিনও। দলের বিদ্রোহী সদস্যদের অভিযোগ ছিল, প্রথমত প্রধান তাঁদের কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই বিভিন্ন বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের কার্যত পাত্তাই দেন না। পাশাপাশি পঞ্চায়েতের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্মে আর্থিক নয়ছয় এবং দুর্নীতিতে প্রধান যুক্ত বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, বহু বার এ নিয়ে ব্লক নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেও কোনও ফল মেলেনি। তার পরেই জমা পড়ে প্রধানের বিরুদ্ধে ওই অনাস্থা প্রস্তাব।

এ দিন তোফার শাশুড়ি সেবাদাসী বাদ্যকর অভিযোগ করে বলেন, “বৌমা ও ছেলেকে জনা সাত আট লোক আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে একটি গাড়িতে চাপিয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছে। ওই প্রধানের নির্দেশেই এটা হয়েছে। যাতে বৌমা অনাস্থা ভোটে যোগ দিতে না পারে।” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিবঠাকুরবাবু। তাঁর দাবি, “আমি অসুস্থ। বাড়িতেই রয়েছি। আমার বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই মিথ্যা আভিযোগ করা হচ্ছে। এটাও ভিত্তিহীন অভিযোগ। গোটাটাই সাজানো ঘটনা।” যদিও ঘটনা হল, বোর্ড গঠনের দেড় বছরের মধ্যেই এ ভাবে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে পড়ায় প্রথম থেকেই চূড়ান্ত অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিনের ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ভোলানাথবাবু বলেন, “ঘটনার কথা জানি। সমস্যা মেটাতে দলগত ভাবে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।” বিক্ষুব্ধ বাকি ছয় সদস্য অবশ্য দাবি করছেন, এই অপহরণের পরেও ভোটাভুটিতে প্রধানের হার নিশ্চিত।

Advertisement

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন