অযোধ্যা উৎসব ঘিরে উঠল শব্দবিধি বিতর্ক

রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরুর দিনই শব্দবিধি ভাঙার বিতর্কে জড়াল অযোধ্যা উৎসব। সোমবার সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো। এ দিনই প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ডিওয়াইএফ। উৎসবের উদ্বোধক, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা পযর্টন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু র অবশ্য দাবি, “উদ্বোধন করেছি বিকেল তিনটের পরে। তখন পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে!” অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপ মাঠে তিন দিন ব্যাপী এই পর্যটন উৎসবের উদ্যোক্তা পুরুলিয়া জেলা পরিষদ।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

অযোধ্যা পাহাড় শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৩
Share:

বক্তৃতায় মন্ত্রী। মঞ্চের পাশে সাউন্ডবক্স। ছবি: সুজিত মাহাতো

রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরুর দিনই শব্দবিধি ভাঙার বিতর্কে জড়াল অযোধ্যা উৎসব। সোমবার সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো। এ দিনই প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ডিওয়াইএফ।

Advertisement

উৎসবের উদ্বোধক, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা পযর্টন মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর অবশ্য দাবি, “উদ্বোধন করেছি বিকেল তিনটের পরে। তখন পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে!” অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপ মাঠে তিন দিন ব্যাপী এই পর্যটন উৎসবের উদ্যোক্তা পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। ব্রাত্যবাবুর সঙ্গে ছিলেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। সোমবারই ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরুর দিন। অভিযোগ ওঠে, শব্দবিধি লঙ্ঘন করে একাধিক সাউন্ডবক্স ব্যবহার করে মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যেই ওই উৎসবের উদ্বোধন হয়েছে। আরও অভিযোগ, মঞ্চের দু’দিকে একাধিক সাউন্ডবক্স ব্যবহার করার জন্য মাঠ ঘেরা থাকলেও মাথার উপরে কোনও ঢাকা ছিল না।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে খোলা জায়গায় (ঘেরা জায়গাতেও) এভাবে সাউন্ডবক্স ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, কোন যুক্তিতে এভাবে শব্দবিধি লঙ্ঘন করে সরকারি উৎসবের উদ্বোধন করা হল। ঘটনা হল, উৎসব যে প্রশাসনিক তা উদ্বোধনী বক্তব্য শুরুর আগেই উপস্থিত মানুষজনকে জানিয়েছেন খোদ পযর্টনমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে মাধ্যমিক শুরুর দিন শব্দবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানিয়ে দেন, পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর, তিনি উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অবশ্য পাহাড়ের বাসিন্দাদের উপস্থিতি সেভাবে চোখে পড়েনি। অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঈশ্বর সোরেন বলেন, “আমাকে উৎসবের বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।”

Advertisement

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লোক না এলেও, মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, “এখন মানুষ পাহাড়ে বেড়াতে আসছেন। এখানকার অতিথি আবাসগুলিতে ঘর খালি থাকছে না। এই অবস্থা ছিল না। পযর্টক এলেই এখানকার অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে। সেই লক্ষ্যেই এই উৎসবের আয়োজন।” পর্যটনের বিকাশের কথা ভেবেই পাহাড়ে অনেকগুলি নতুন রাস্তা নির্মাণ করছে প্রশাসন, সেই তথ্যও দেন শান্তিরাম তাঁর বক্তৃতায়।

কিন্তু পরীক্ষার মধ্যে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা নিয়ে বিরোধীরা অভিযোগ তুলছেন, সে কথা জানতে পেরে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে যান ব্রাত্যবাবু। তিনি দেখিয়ে দেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোকে। বলেন, “এই প্রশ্নের জবাব উনি দেবেন।” সভাধিপতি বলেন, “আমরা শব্দবিধি মেনেই উৎসব করছি। তাছাড়া উৎসবের মাঠ থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও পরীক্ষা কেন্দ্র নেই।”

পুরুলিয়ার চিত্তরঞ্জন বালিকা বিদ্যালয়ে চলছে পরীক্ষা। ছবি: প্রদীপ মাহাতো

এ ধরনের উৎসব-অনুষ্ঠানে শব্দবিধির বিষয়টি দেখেন মহকুমাশাসক। এ দিন উৎসবের মঞ্চে থাকা পুরুলিয়া (পশ্চিম) মহকুমাশাসক নিমাইচাঁদ হালদার অবশ্য বলেন, “সাউন্ডবক্স ব্যবহারের বিষয়ে আমার কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। উদ্বোধনের সময়ে মোটেই জোরে সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা হয়নি।”

শান্তিরামবাবুর বক্তব্য, সভা বা উৎসব করার জন্য শব্দবিধি মানা দরকার। ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে ঘেরা জায়গায় সাউন্ডবক্স ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা নেই। সাউন্ডবক্স ব্যবহার হলেও অত্যন্ত কম শব্দে তার ব্যবহার হয়েছে। আর উদ্বোধন হয়েছে ঘেরা জায়গায়। “আমরা নির্বাচনের সময়ও তো এ ধরনের কর্মসূচি নিই।” —বলছেন মন্ত্রী।

পাহাড়ের বাসিন্দাদের একাংশ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে এই উৎসব করার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়ে, উৎসবের সময় এগিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গ উঠতেই শান্তিরামবাবু বলেন, “এবার একটু দেরি হয়েছে। পরের বছর আমরা শীতকালেই এই উৎসব করব।” আর সৃষ্টিধর মাহাতো বলছেন, “এই সময় ছাড়া পর্যটনমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন, সেই কারণেই এই সময় উৎসব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন