জেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে ডিভিসি-র আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার পরে আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিল রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের জমিহারা কমিটি। মঙ্গলবার প্রকল্প এলাকার মধ্যে বিকেল থেকে ঘণ্টা দুয়েক ত্রিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। সেখানে ছিলেন রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত।, ডিভিসি-র প্রকল্পের আধিকারিক (মানবসম্পদ বিভাগ) রুদ্রপ্রতাপ সিংহ-সহ কয়েক জন কর্তা এবং আন্দোলনকারী ‘ল্যান্ডলুজারস অ্যাসোসিয়শন’-এর কিছু প্রতিনিধি।
স্থানীয় জমিহারাদের পরিবর্তে বাইরে থেকে অদক্ষ শ্রমিক এনে কাজ করানো হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে সোমবার থেকে প্রকল্পের মূল গেটের সামনে বিক্ষোভ- অবস্থানে বসেছিলেন স্থানীয় ল্যান্ডলুজারস অ্যাসোসিয়শনের সদস্যরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তও বিক্ষোভ চলে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, জমিহারাদের আন্দোলনের জেরে প্রকল্পে ঢুকতে পারেনি শতাধিক শ্রমিক। যাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ উত্পাদনের কাজে যুক্ত থাকা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শ্রমিক। এর ফলে পরপর দু’দিন প্রকল্পের উত্পাদন প্রক্রিয়া যথেষ্ট ব্যাহত হয়েছে। যদিও কমিটির দাবি, তারা শুধুই বহিরাগত অদক্ষ শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধা দিয়েছে। ডিভিসি সূত্রের খবর, এ দিন কেন্দ্রীয় বিদ্যুত্ মন্ত্রক থেকে রঘুনাথপুরের প্রকল্পের অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছিল চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। জমিহারাদের আন্দোলনের জেরে প্রকল্পে সমস্যা হচ্ছে বলে মন্ত্রককে জানিয়েছে ডিভিসি।
উত্পাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার খবর জানাজানি হওয়ার পরে প্রশাসনিক মহলে নড়াচড়া শুরু হয়। তারই ফল, এ দিনের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থেকে যে ৩৬ জন অদক্ষ শ্রমিককে কয়লা বাছাইয়ের কাজে আনা হয়েছে, তারা অগস্ট মাস পর্যন্ত কাজ করবেন। পরে নতুন টেন্ডার ডেকে ওই কাজ শুরু হওয়ার পরে কাজ করবেন স্থানীয় জমিহারারা পরিবারের সদস্যেরা। এরই পাশাপাশি ডিভিসি কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, রঘুনাথপুর প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ পুরোদমে শুরু হওয়ার পর থেকে অদক্ষ শ্রমিক হিসাবেও কাজ পাবেন জমিহারারা। জমিহারাদের মধ্য দক্ষ শ্রমিক থাকলে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আলোচনায় ডিভিসি জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক উত্পাদনের কয়েক মাসের মধ্যে তারা বিদ্যুত্কেন্দ্র পরিচলনার কাজে টেন্ডার ডাকবে। সেই কাজ শুরু হলে অপারেশন ও মেনটেন্যান্সের কাজেও জমিহারা পরিবারগুলি থেকে কর্মী নেওয়া হবে। কিন্তু, সেক্ষেত্রে প্রশাসনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী জমিহারাদের কাজে নিয়োগ করা হবে।
মূলত এই তিনটি বিষয়ে আলোচনার পরে সন্তুষ্ট হয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে মঙ্গলবার রাতে জানান আন্দোলনকারী কমিটির নেতা চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এ দিনের আলোচনায় সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে, আমরা আন্দোলন আপাতত প্রত্যাহার করে নিয়েছি।” যদিও অগস্ট মাস থেকে প্রকল্পে অদক্ষ শ্রমিকদের কাজ জমিহারারা না পেলে ফের আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কমিটির নেতারা। রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা বলেন, “প্রশাসন গত ভাবে আমরা ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে অদক্ষ শ্রমিকদের কাজে জমিহারাদের নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছি। ওঁরা সম্মত হয়েছেন। তাতেই এ দিন সমস্যা মিটেছে।” ডিভিসি-র এই প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ইতিবাচক আলোচনার পরে আমরা আমাদের বক্তব্য জমিহারা কমিটির সদস্যদের বোঝাতে পেরেছি। আশা করছি, বুধবার থেকে প্রকল্পে স্বাভাবিক ভাবে কাজ করা যাবে।”