চলছে জোরকদমে প্রস্তুতি।—নিজস্ব চিত্র।
কালীপুজো মানেই আলোর রোশনাই আর চোখ ধাঁধানো বাজি। প্রথম শীতের হিমে ভিজে রাত জাগা। সেই সঙ্গে খিচুড়ি, আলুর দমে পাড়ায় পাড়ায় পংক্তিভোজ!
এ সব কিছু নিয়ে মেতেছে বাণিজ্য শহর সাঁইথিয়ার অধিকাংশ ক্লাবও। মেতেছে, বাউড়ি পাড়া, নিহারীপট্টির ধুলোর কালি-সহ বেশ কিছু প্রাচীন পারিবারিক ও বারোয়ারি পুজো। সাঁইথিয়ার প্রথম পুজো বলতে, রয়েছে বাউড়ি পাড়ার বড় কালি পুজো। উদ্যোক্তাদের দাবি, সাঁইথিয়ায় যখন কালী পুজো শুরু হয়, সে সময় দুর্গা পুজোর প্রচলন ছিল না শহরে। প্রথম পুজো বলেই, শহরের সমস্ত স্তরের মানুষ শুরু থেকেই পুজোয় অংশ নেন এখনও।
পুজোর রাতে বড় কালীতলা প্রাঙ্গনে তিল ধারনের যায়গা থাকে না। প্রতিবারই হাজার হাজার ভক্তের পুজোর ডালি ও প্যাকেট সামলাতে রীতি মতো হিমশিম খেতে হয় উদ্যোক্তাদের। এবার পুজোর পালি পড়েছে প্রশান্ত বাউড়ির। তিনি বলেন, “প্রায় ৭০০ বছরেরও আগে সাঁইথিয়ার জমিদাররা প্রহরী ও কাজ কর্মের জন্য আমাদের পূর্ব-পুরুষদের এখানে নিয়ে আসেন। তখন সাঁথিয়ায় কোনও ছিল না। পূর্ব-পুরুষরা পুজোর সময় আদিগ্রাম কাঁকুরতলার ময়নাডাল ফিরে যেতেন। তাতে কাজের অসুবিধে হত। তাই কালীর বেদী নিয়ে এসে এখানে জমিদারদের দেওয়া জায়গায় তাঁরা কালী প্রতিষ্ঠা করেন।”
এ পুজোতে শুধু সাঁইথিয়া বা জেলা নয়, কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও পুজো দিতে আসেন বহু ভক্ত। পুজোর পরদিন ৬-৭ হাজার লোককে খিচুড়ির ভোগ খাওয়ানো হয়। প্রশান্তবাবু জানান, প্রতিবার পুজোর পর দিন দেবী বিসর্জন করা হয়ে থাকে। এবার মায়ের স্বপ্নাদেশে, প্রথা ভেঙে ভাই ফোঁটার দিন সন্ধ্যায় বিসর্জন হবে।
পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন ক্লাবের কালী পুজোর জাঁক জমকও দেখার মতো। বিশেষ করে আলোকসজ্জা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় নিজেদের মধ্যে। হাইস্কুলের সামনের ইয়ংস্টার ক্লাবের পুজো দীর্ঘ দিনের। ক্লাবের আলোকসজ্জা বরাবরই দেখার মত। এবারের আলোকসজ্জাতেও থাকছে চমক। কমকর্তা চন্দন ভট্টাচার্য বলেন, “এখানে স্থায়ী মন্দিরে প্রতিদিন গ্রহরাজের পুজো হয়। কালী পুজোর সময় পাশেই কালী পুজো করা হয়। আলোকসজ্জা ছাড়া বিশাল সুসজ্জিত দেবী মূর্তিও পুজোর অন্যতম আকর্ষন।” এখানে প্রতিমা বিসর্জনের পরদিন খিচুড়ির ভোগ খাওয়ানো হয়। সঙ্গে আলুরদম ও টক।
ময়ূরাক্ষী ক্লাব এবার শিলা মূর্তি করেছে। ক্লাবের কমকর্তারা বলেন, “এবারে আমাদের পুজো ১৪ বছরে পা দিল। প্রথম থেকেই ক্লাবের সবার স্বপ্ন ছিল। আলোকসজ্জা দেখার মত। এবারও পংক্তি ভোজের আয়োজন করা হয়েছে।” জাঁকজমক পুজো গুলোর অন্যতম রুপালি ক্লাবের পুজো। এবার ৪০ বছরে পড়ল। ক্লাবের পক্ষে গৌতম রায় বলেন, “এলাকার মানুষ রুপালির কালী পুজো দেখার জন্য প্রতিবার মুখিয়ে থাকেন। এবারের পুজোর আকর্ষন দেবী মূর্তি ও আলোকসজ্জা।”
এছাড়াও ঐক্য সন্মিলনী ক্লাবের পুজো শহরের নামকরা কালী পুজোগুলির অন্যতম। স্থায়ী মন্দিরে অনেকদিন আগেই একটি মুর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে কালী পুজোর সময় নানা রকমের পুতুল ও আলোকসজ্জা ক্লাবের ঐতিহ্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এলাকার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব হল বীণাপানি। স্থায়ী মন্দিরে অনেকদিন আগেই কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নিত্য পুজো হয়। এ ছাড়াও ছয়ের পল্লি ও জুয়েলস ক্লাব-সহ আরও বেশ কয়েকটি পুজোও সকলের নজর কাড়ে। এই সমস্ত ক্লাবগুলি ছাড়াও শহরের অধিকাংশ ক্লাবেই খিচুড়ির ভোগ খাওয়ানো ও বাজি পোড়ানো হয়ে থাকে।