থমথম করছে পাড়াটা। যে ছেলেটা হাসিমুখে ব্যাগ নিয়ে দু’দিন আগে সহকর্মীদের সঙ্গে মন্দারমণি ঘুরতে গেল, আর কিছু পরেই তার দেহ ফিরবে এলাকায়। মানতে পারছেন না কেউই। কিন্তু কী ভাবে এমন হল, এই প্রশ্নটাই ঘুরছে বিষ্ণুপুর শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাইতিপাড়ায়।
এই পাড়া থেকেই গত সোমবার একটি মোবাইল কোম্পানির তরফ থেকে মন্দারমণি ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের জনা পঞ্চাশেক মোবাইলের দোকান মালিক-কর্মীদের। সেই দলেরই সদস্য ছিলেন বছর তেইশের আশিস দে। কিন্তু বুধবার দুপুরে আশিসের মামার কাছে খবর পৌঁছায়, আশিস আর নেই। সমুদ্রে স্নানে নেমে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। আশিসের মামা সত্যরঞ্জন কর্মকার বলছিলেন, ‘‘বছর পাঁচেক আগে জামাইবাবু মারা গিয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে দিদি টিউশনি পড়িয়ে মানুষ করেছেন। কয়েক মাস হল ছেলেটা একটা মোবাইল দোকানে ঢুকেছিল। ও এভাবে চলে গেল। দিদিকে বলতেই পারব না’’
আশিসের মা না জানলেও এমন খবর তো চাপা থাকে না! বন্ধু যে নেই তা জানতে পেরে হতবাক আশিসের সব বন্ধুরাই। আশিসের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে দেশবন্ধু ক্লাব। কাজের বাইরে সেখানেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন আশিস। খবর পেয়ে তাদেরই কয়েকজন গাড়ি নিয়ে ছুটে গিয়েছেন বন্ধুর দেহ আনতে। স্থানীয় কৃত্তিবাস মুখার্জী উচ্চ বিদ্যালয়ে আশিসের সহপাঠী অরিজিৎ কাইতি ক্লাবঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “কোনও দিন রাগতে দেখিনি। সব সময় হাসি লেগে থাকত মুখে। এ ভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল ভাবতে পারছি না।’’ ক্লাবেই দেখা আর এক সহপাঠী উজ্জ্বল চক্রবর্তীর সঙ্গে। তাঁর কথায়, ‘‘রোজের দেখা-সাক্ষাৎ, ক্লাবে আড্ডা। বাবার মৃত্যুর পর সামান্য মুষড়ে পড়লেও কোনও ক্লান্তি ছিল না চোখে মুখে। এত স্মৃতি ভিড় করছে!’’ আশিসের সঙ্গে একই দোকানে কাজ করতেন সুরজিৎ কর্মকার। ঘটনার কথা জেনে ক্লাবের সামনে ভিড় জমিয়েছেন তিনিও। বললেন, “প্রথমে কথা হয়েছিল বাঁকুড়ার একটি হোটেলে হবে অনুষ্ঠান। সেটা হলেই হয়তো ভাল হত। আমার এক সহকর্মীকে এভা বে হারাতে হত না।”
প্রতিবেশীরা জানান, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কাঁথি থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেহ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছেন। নিজের ঘরে বসে সত্যরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘আমরা দিদিকে সব আড়াল করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ছেলেটার দেহ এলে কীভাবে সামলাবো সেটাই চিন্তা।’’ সমুদ্র না কি সব কিছুই ফিরিয়ে দেয়। কপালে হাত দিয়ে সত্যরঞ্জনবাবুর আক্ষেপ, ‘‘সমুদ্র ফিরিয়ে দিল ঠিকই। কিন্তু ছেলেটার শরীরে প্রাণটা ফেরত দিল না।’’