কার্ড স্মৃতি, তরুণ মন ঝুঁকে সোশ্যাল মাধ্যমে

বছরের শেষ সপ্তাহ মানেই গ্রিটিংস কার্ড কিনতে দোকানে হুড়োহুড়ি, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জমাটি ভিড়। দিনের শেষে কার্ড বিক্রির টাকা গুনতে গুনতে ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি। এসএমএস, ফেসবুক, হোয়্যাটস অ্যাপের গুঁতোয় এ সবই কার্যত এখন ইতিহাস হতে বসেছে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৭
Share:

মোবাইলে বার্তা।—নিজস্ব চিত্র।

বছরের শেষ সপ্তাহ মানেই গ্রিটিংস কার্ড কিনতে দোকানে হুড়োহুড়ি, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জমাটি ভিড়। দিনের শেষে কার্ড বিক্রির টাকা গুনতে গুনতে ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি। এসএমএস, ফেসবুক, হোয়্যাটস অ্যাপের গুঁতোয় এ সবই কার্যত এখন ইতিহাস হতে বসেছে। উল্টে পরিস্থিতি এমনই বাঁকুড়া শহরের বহু নামিদামি দোকান এখন নতুন বছরের শুভেচ্ছা লেখা কার্ড রাখাই বন্ধ করে দিয়েছে। তাঁদের অনেকেরই অভিমত, বর্তমানে গ্রিটিংস কার্ডের পিছনে টাকা ঢালাটা বেশ ঝুঁকির।

Advertisement

রানিগঞ্জ মোড়ের এক কার্ড ব্যবসায়ী অসিতবরণ দে জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরেই কার্ড বিক্রি ক্রমে কমে আসছে। ২০১৩ সালের বর্ষ শেষের মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার কার্ড বিক্রি হয়েছিল। তার আগের বছরের টাকার অঙ্কটা আরও কয়েক হাজার বেশি ছিল। তবে চলতি মরসুমে কার্ড বিক্রি কমে হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, “অনেকেই কার্ড রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্রমশ কার্ড বিক্রি কমে যাচ্ছে। তাই গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় এ বার আমরা আর বেশি টাকার কার্ড নিয়ে আসিনি। সামনের বছর আর কার্ড তুলব কি না ভাবতে হবে।” রানিগঞ্জ মোড়ে অন্যান্য বছর এই সময় একের পর এক দোকানে রঙ বাহারি গ্রিটিংস কার্ড ঝুলতে দেখা যেত। সেই চিত্রটাই চোখে পড়ল না এ বার। রাসতলার ব্যবসায়ী প্রবীর রজক বলেন, “কার্ড রেখে আর লাভ নেই। এই বছর ৫০০০ টাকার কার্ড নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় পাইকারি দরে অন্যান্য দোকাকে তা বিক্রি করে দিয়েছি।”

বস্তুত মোবাইল, ইন্টারনেটের এই জামানায় গ্রিটিংস কার্ড-এর খাতির কিছুটা কমতির দিকে। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের, মূলত স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীর ভরসাতেই গ্রিটিংস কার্ডের ব্যবসাটা নির্ভর করত বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। “এখন অনেকের হাতে-হাতে অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন উঠে এসেছে। হোয়্যাটস অ্যাপ, ফেসবুকের মতো সুপারফার্স্ট মাধ্যমের এই জমানায় এসএমএস-ও পাত্তা পাচ্ছে না। আর গ্রিটিংস কার্ড!’’ মন্তব্য বাঁকুড়ার খ্রিস্টান কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৌভিক নন্দীর। তিনি জানান, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত তিনি গ্রিটিংসকার্ড কিনতেন। তখন বন্ধুবান্ধবের সংখ্যাটাও খুব একটা ছিল না। এখন তাঁর প্রচুর বন্ধু। ফলে এত কার্ড কিনে দেওয়া মানে অনেক টাকার খরচ। তাই হোয়্যাটস অ্যাপেই তিনি সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

Advertisement

কেন্দুয়াডিহির দশম শ্রেণির পড়ুয়া রানি চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “খুব কাছের বন্ধুদের দেব বলে সাত-আটটি কার্ড কিনেছি। কিন্তু বাকিদের এসএমএস-এ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।” বাঁকুড়ার রামপুরের যুবক পরমার্থ মণ্ডল, কাটজুড়িডাঙার রাধামাধব দত্ত, ব্যাপারীহাটের রাজীব খান্ডেলওয়ালেরাও কার্ডের বদলে এসএমএস, ফেসবুকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর পক্ষেই সওয়াল করলেন। তাঁদের বক্তব্য, “এতে খরচ যেমন কম, তেমনই বাড়িতে বসেই জানানো যায়। আজকালকার এই গতিময় যুগে দোকানে গিয়ে কার্ড কিনে বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ।”

তবে অনেককেই এ দিনও বাছাই করে কিছু বিশেষ ব্যক্তির জন্য কার্ড কিনতে দেখা গিয়েছে। বাঁকুড়ার চকবাজার এলাকার একটি দোকানে গ্রিটিংস কার্ড কিনতে কিনতে সারদামনি গার্লস কলেজের এক ছাত্রী বললেন, “বিশেষ মানুষটিকে তো এসএমএস করে শুভেচ্ছা জানাতে ভালো লাগে না। ও সব মেসেজ তো ‘ডিলিট’ হয়ে যায়। কিন্তু গ্রিটিংস কার্ড একটা স্মৃতি হয়ে থেকে যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন