চুরি হয়ে গিয়েছে ট্রান্সফর্মার, বিপাকে ময়ূরেশ্বরের চাষিরা

গ্রামীণ এলাকায় আর্থ-সামাজিক সম্পদ সৃষ্টি এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। অথচ পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুত্‌ বণ্টন কোম্পানির উদাসীনতায় সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীরই একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উত্‌পাদন প্রকল্প মাঝপথেই মাঠে মারা যেতে বসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে আবার ঋণের বোঝাও বাড়ছে। ওই গোষ্ঠীর দাবি, প্রশাসনের নানা স্তরে আবেদন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। এই বেগতিক পরিস্থিতিতে শেষমেশ চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের বিদ্যুত্‌মন্ত্রীর দ্বারস্থ হল ময়ূরেশ্বরের গিধিলা গ্রামের ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪০
Share:

গ্রামীণ এলাকায় আর্থ-সামাজিক সম্পদ সৃষ্টি এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। অথচ পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুত্‌ বণ্টন কোম্পানির উদাসীনতায় সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীরই একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উত্‌পাদন প্রকল্প মাঝপথেই মাঠে মারা যেতে বসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে আবার ঋণের বোঝাও বাড়ছে। ওই গোষ্ঠীর দাবি, প্রশাসনের নানা স্তরে আবেদন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। এই বেগতিক পরিস্থিতিতে শেষমেশ চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের বিদ্যুত্‌মন্ত্রীর দ্বারস্থ হল ময়ূরেশ্বরের গিধিলা গ্রামের ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীটি।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০৫ সালে নিজেদের বর্গা এবং পাট্টা পাওয়া খাসজমির পাশাপাশি সংলগ্ন চাষিদের জমিতে সেচের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি সাবমার্সিবল পাম্প বসান ময়ূরেশ্বরের গিধিলা গ্রামের ‘মা লক্ষ্মী স্বনির্ভর গোষ্ঠী’র সদস্যেরা। বিদ্যুত্‌ সংযোগের জন্য তারা আবেদন করেন বিদ্যুত্‌ কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই শাখায়। এলাকা পরিদর্শনের পরে ওই শাখা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেতা উত্তম বায়েনের নামে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৫ টাকার কোটেশন পাঠায়। নিয়ম অনুযায়ী, স্বনির্ভর সেচ প্রকল্পের বিদ্যুত্‌ সংযোগের ব্যয় বহন করে রাজ্য সরকার। এ জন্য কোটেশনের কাগজপত্র জমা দিতে হয় স্থানীয় বিডিও অফিসে। বিডিও অফিস সব কিছু খতিয়ে দেখার পরে তা পাঠায় জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরে। সেখান থেকে কোটেশন অনুযায়ী চেক যায় বিডিও অফিসে। ওই চেক পাওয়ার পরেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সেচ প্রকল্পে সংযোগ দেয় বিদ্যুত্‌ দফতর।

এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে গিয়ে ২০০৭ সালে সাবমার্সিবল পাম্পে বিদ্যুত্‌ সংযোগ পায় ‘মা লক্ষ্মী স্বনির্ভর গোষ্ঠী’। কিন্তু, গত জুলাই মাসে হঠাত্‌-ই চুরি হয়ে যায় ওই সেচ প্রকল্পের ১৬ কেভিএ ট্রান্সফর্মারটি। পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরে তার প্রতিলিপি-সহ নতুন ট্রান্সফর্মারের জন্য গোষ্ঠীর সদস্যেরা আবেদন করেন বিদ্যুত্‌ বণ্টন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট শাখায়। জানা গিয়েছে, সাধারণত পুড়ে যাওয়া, খোওয়া যাওয়া ট্রান্সফর্মার-সহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী বদলে দেওয়ার দায়িত্ব বিদ্যুত্‌ কোম্পানিরই। কিন্তু বারবার প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন করেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেতা উত্তমবাবুরা আজও কোনও সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ। এর ফলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে তাঁদের নানা দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে বলে সদস্যদের দাবি। উত্তমবাবুরা বলেন, “যে সময় ট্রান্সফর্মার চুরি যায়, তখন মাঠে কচি ধান ছিল। কিন্তু, সেচের অভাবে আমাদের তো বটেই, যাঁরা ভাড়া চুক্তিতে আমাদের থেকে জল নিয়েছিলেন, তাদের জমির ধানও শুকিয়ে মরে যায়।” তার জেরে ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠী সেচের ভাড়ার টাকাও পায়নি।

Advertisement

উত্তমবাবু বলেন, “শুধু আমাদেরই নয়, সেচ প্রকল্প চালু হলে প্রায় ৩০-৪০ বিঘা জমিতে বছরে তিন বার চাষ হতো। কিন্তু, এখন সব মার খাচ্ছে। মাঝখান থেকে সময় মতো কিস্তি দিতে না পারায় ঋণের বোঝাও বাড়ছে।” আবার ওই গোষ্ঠীর সদস্য জিতেন বায়েন, কার্তিক কোনাইরা বলেন, “ওই সেচ প্রকল্প চালু হলে আমরাও ভাড়া দিয়ে চাষের সুযোগ পেতাম। কিন্তু, ট্রান্সফর্মারের অভাবে চাষের জমি খালি পড়ে থাকছে।” এ দিকে, ওই সময় চাষ মার খাওয়ায় টাকার অভাবে বকেয়া ২৫ হাজার টাকার বিদ্যুত্‌ বিলও তাঁরা মেটাতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। যদিও স্বনির্ভর গোষ্ঠী এখন দাবি করছে, এর পরেও তাঁরা বকেয়া বিল মেটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যুত্‌ দফতর ট্রান্সফর্মার দেওয়ার কোনও নিশ্চয়তা না দেওয়া বকেয়া টাকা জমা দেননি বলে উত্তমবাবুরা দাবি করেছেন। গোষ্ঠীর-সহ দলনেতা ফটিক বায়েন বলেন, “প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েও কোনও কাজ না হওয়ায় আমরা বিদ্যুত্‌ মন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছি। এখন বিদ্যুত্‌ মন্ত্রী সদয় হলে আমরা গ্রীষ্মের ধান চাষের প্রস্তুতি শুরু করতে পারি।”

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্কট নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। গোষ্ঠীর সদস্যেরা যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তা হলে বিদ্যুত্‌ দফতরে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।” তবে, বিদ্যুত্‌ দফতরের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বকেয়া বিল না মেটানো অবধি ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সমস্যার সমাধানে এগোনো সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই শাখার স্টেশন ম্যানেজার সৌম্যজিত্‌ ভৌমিকের বক্তব্য, “উপভোক্তারা যদি বকেয়া বিল জমা দেন, তা হলে চুরি যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রান্সফর্মা বদলের কোনও নিয়ম আছে কিনা, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন