বোলপুরে এই ব্যারাজের উদ্বোধন করেন সেচমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
বর্ষার মরসুম শুরু হলেই কাঁদরের এ-পার, ও-পারের মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেত। তার ঠিক উল্টো চিত্র গ্রীষ্মে। জলের অভাবে চাষ করতে সমস্যায় পড়েন চাষিরা। এ বার এই সব সমস্যা মিটবে বলে আশা করছেন বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, সোমবার উপরখাঁড়া মৌজায় ‘কানা’ অজয়ের উপরে একটি সেতু ও মিনি ব্যারাজের উদ্বোধন হল। এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, বাম জমানা থেকে ওই কাঁদরের উপর সেতুর কাজ কোনও এক অজ্ঞাত কারণে থমকে ছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে বারে বারে জানিয়েও কোন সুরাহা হইনি। ফের ওই এলাকার বাসিন্দারা নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা এবং স্থানীয় বিধায়ক তথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের দ্বারস্থ হন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ পাওয়ার পরেই দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানান রাজীববাবু। স্থানীয় বাসিন্দা কালীদাস মুর্মু, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তরুণ চৌধুরীরা বলেন, “ব্যারাজ এবং সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। ১০-১২ হাজার একর জমি যেমন সেচ সেবিত হবে, আশপাশের ২৪ গ্রামের বর্গাদার ও পাট্টাদার, আদিবাসী এবং অন্য চাষিরা এর সুফল পাবেন।”
রাজ্যের সেচ ও জলপথ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৬ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই মিনি ব্যারাজের কাজ মাস তিনেক আগে সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিদ্যুদয়নের কাজ বাকি থাকায় স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠেনি ওই মিনি ব্যারাজ। আপাতত ব্যারাজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা গেটগুলি খুলবেন এবং বন্ধ করবেন। রাজীববাবু বলেন, “বিদ্যুতের কাজ ছাড়া মাস তিনেক আগে এই ব্যারাজের সব কাজ গয়ে গিয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ এসে যাবে।” এই ব্যারাজের উদ্বোধন করতে এসে সেচ মন্ত্রী রাজ্য সরকারের একাধিক দফতরের উন্নয়ন সংক্রান্ত ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৩৩ মাসের সরকার এই রাজ্যে ৩৩০ কিলোমিটার নদী ও খাল সংস্কার করেছে। ভারতের কোথাও কোনও দিন হয়নি। অজয় নদে ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভাঙ্গনরোধের কাজ শুরু হচ্ছে। জঙ্গলমহল থেকে শুরু করে, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ নিয়ে প্রায় ৩ লক্ষ ৪৪ হাজার একর জমিতে সেচ সেবিত এলাকা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। বীরভূমকে মুখ্যমন্ত্রী সব সময়ে আলাদা নজর দেন। ৫ কোটি টাকার কিছু বেশী ব্যয়ে এই জেলায় ব্রাহ্মণী এবং অজয় নদের উপর তিনটি সেতু তৈরি করা হচ্ছে।”
এ দিকে, সাঁইথিয়া বাসস্ট্যান্ডকে ঢেলে সাজতে এবং সেচ দফতরের লাগোয়া পরিত্যক্ত জায়গায় যাত্রীদের উন্নতমানের পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জমির আর্জি নিয়ে মন্ত্রী এবং মুখ্য বাস্তুকারের কাছে যান সাঁইথিয়া পুর-কর্তৃপক্ষ। অবিলম্বে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সেচমন্ত্রী। এ দিন উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধায়ক গদাধর হাজরা, সংশ্লিষ্ট দফতরের মুখ্য বাস্তুকার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।