তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দাবি করছেন, জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। জঙ্গলমহলের বাসিন্দা সিপিএমের পোড়খাওয়া নেতারাও আড়ালে স্বীকার করছেন, তৃণমূলের সন্ত্রাস থাকলেও মাওবাদী আতঙ্ক নেই। তাঁরা ভাল আছেন। সেই জঙ্গলমহলের মহকুমা সদর খাতড়ায় শুক্রবার প্রচারে নেমে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার। মিছিলে ছিল কমবয়সী ছেলেদের ভিড়।
এ দিন সকালে ট্যাবলো গাড়ি নিয়ে খাতড়ায় প্রচার চালানোর কথা ছিল বিজেপি-র। কর্মী সমর্থকেরাও জড়ো হয়েছিলেন খাতড়া রাজবাড়ির দুর্গামন্দিরের সামনে। কিন্তু যান্ত্রিক বিপত্তিতে বাঁকুড়া থেকে ট্যাবলো গাড়ি সময় মতো আসেনি। সুভাষবাবু পৌঁছে গিয়েছিলেন সকাল সাড়ে ৯ টাতেই। সকাল ১০টাতেও ট্যাবলো গাড়ি না আসায় শেষে বিজেপি প্রার্থী হেঁটেই প্রচার শুরু করলেন।
রীতিমত ব্যান্ড ও তাসা পার্টির সঙ্গে ধামসা-মাদল নিয়ে মিছিল চলল বিজেপি-র। মাইকে কর্মীরা হাঁকছেন, “আপনাদের সবার প্রিয় বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার এসেছেন। দলে দলে মিছিলে যোগ দিন।” বিজেপি-র প্রার্থী ‘ডাক্তারবাবু’ (সুভাষ সরকার স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ) এগিয়ে চলেছেন। পিছনে শ’পাঁচেক বিজেপি কর্মী-সমর্থক।
কংসাবতী রোডে একটি চায়ের দোকানে ঢুকে বসে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন সুভাষবাবু। পথে দেখা হয় খাতড়া আদালতের আইনজীবী সমরেশ দে, অসীম গোপ ও শিক্ষক মানিক পতির সঙ্গে। সমরেশবাবু সুভাষবাবুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি ডাক্তারবাবু, চিনতে পারছ?” ঘাড় নেড়ে হেসে প্রত্যুত্তর দেন সুভাষবাবু “চিনতে পেরেছি, সমরেশবাবু না?” এরপরেই আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলেন দু’জনেই। শিক্ষক মানিকবাবু উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেই ফেললেন, “ডাক্তারবাবু, আপনি আমাদের কাছের মানুষ। শুনে মৃদু হেসে হ্যান্ডসেক করে ভোটটা চেয়ে নিলেন ডাক্তারবাবু।
কংসাবতী কলোনির বাসিন্দা সুভাষ দত্তের পরিবারের মহিলারা এ দিন গাঁদাফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর জন্যই। মিছিল আসতেই ফুল ছড়িয়ে মালা পরিয়ে প্রার্থীকে বরণ করলেন তাঁরা। মালা অবশ্য গলায় রাখলেন না বিজেপি প্রার্থী। ওঁদের বাড়িরই এক খুদের গলায় পরিয়ে দিলেন সেই মালা। জলডোবরা এলাকায় রাস্তার পাশে কয়েকজন মহিলাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। ভিড়ের মধ্য থেকে এক মহিলা বলেন,“ আপনাকে চিনি ডাক্তারবাবু। সন্তান প্রসবের সময় আপনার কাছেই গিয়েছিলাম। আপনি যথেষ্ট করেছেন।” তাঁদের কাছেও ভোট চাইলেন তিনি। দুর্গামন্দিরে এসে মিছিল যখন শেষ হল ঘড়িতে তখন সাড়ে ১২টা। তার আগেই অবশ্য ট্যাবলো এল। তবে ট্যাবলো আর সে ভাবে কাজে এল না বিজেপি প্রার্থীর।
তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন এই কেন্দ্রের ন’বারের সাংসদ, পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়া, অন্যজন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মুনমুন সেন। তাঁর জেতার সম্ভাবনা কতটা? চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে চেয়ারে বসে বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষবাবু বলেন, “জেতা হারা পরের কথা, মানুষ আমাকে চেনেন। নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের ঝড়ে সারা দেশ জুড়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিজেপি-র প্রতি সমর্থনের হাওয়া বইছে। সেই হাওয়া এই কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি এলাকায় গিয়ে টের পাছি। আমি আশাবাদী।” চৈত্রের মাঝেও এ বার কালবৈশাখী আসেনি। মোদীর ঝড় কি খাতড়ায় এসেছে?