চড়া রোদ মাথায় নিয়ে অপেক্ষা মোদীর জন্য

রোদ যা চড়েছিল, তাতে ভির্মি খাবে বাঘও। তা মাথায় নিয়েই রবিবার বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামে প্রায় দু’ঘন্টা দাঁড়িয়েছিল জনতা। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী যখন যুবকদের ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ বলে অভিহিত করলেন, তখন গর্জন ভেসে এল জনতার থেকে। ঢাক, ঢোল, তাসা, ব্যান্ড বাজিয়ে সকাল থেকেই মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন।

Advertisement

সুব্রত সীট

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৪ ০০:০০
Share:

রোদ উপেক্ষা করেও ভিড় উপচে পড়ল বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর জনসভায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

রোদ যা চড়েছিল, তাতে ভির্মি খাবে বাঘও। তা মাথায় নিয়েই রবিবার বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামে প্রায় দু’ঘন্টা দাঁড়িয়েছিল জনতা। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী যখন যুবকদের ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ বলে অভিহিত করলেন, তখন গর্জন ভেসে এল জনতার থেকে। ঢাক, ঢোল, তাসা, ব্যান্ড বাজিয়ে সকাল থেকেই মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন। মোদীর বক্তব্যের মাঝে মাঝেই তাঁরা সেগুলি বাজিয়ে উচ্ছ্বাসের সুর আরও চড়িয়ে দিচ্ছিলেন। তালে তালে নাচছিলেনও অনেকে। পাশাপাশি, ‘মোদী-মোদী’ চিৎকার তো ছিলই সারাক্ষণ। তরুণ-যুবকদের উপস্থিতি এবং উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো।

Advertisement

কী বললেন মোদী? দিল্লির রুগ্ন সরকারের চিকিৎসার জন্য বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারকে জিতিয়ে দিল্লিতে পাঠাতে বললেন তিনি। বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ ময়দানে সুভাষবাবুকে পাশে নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “দিল্লির সরকার এখন হাসপাতালে চলে গিয়েছে। তাই এখান থেকে ডাক্তারকে জেতান। একজন প্রকৃত চিকিৎসক মানুষের পাশাপাশি দেশের রোগের চিকিৎসাও করতে পারেন।” গোটা মাঠ চিৎকার করে মোদীর কথায় সম্মতি জানাল। সভা শেষে সুভাষবাবু বলেন, “লাখ দুয়েক ভোটে জিতছিই।”

প্রার্থী হওয়ার আগে গুজরাত ঘুরে এসেছেন পেশায় চিকিৎসক সুভাষবাবু। জঙ্গলমহলের গ্রামে গ্রামে চিকিৎসক হিসাবে সুনাম রয়েছে তাঁর। বিজেপি প্রার্থী হিসাবে তাঁর দাবি, তিনি জিতলে বাঁকুড়ায় প্রধান সমস্যা পানীয় জল ও সেচের জলের সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হবেন। কৃষিভিত্তিক শিল্প গঠনেও জোর দিতে চান তিনি। “প্রচারে ভাল সাড়া মিলছিল। কিন্তু এ দিন নরেন্দ্র মোদী নিজে এসে এক ধাক্কায় আমাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেলেন,” বলেন সুভাষবাবু। মোদীও সভায় বলেন, “আমি উন্নয়ন করব দিল্লি থেকে। কিন্তু এখান থেকে সাংসদ না গেলে তা পাঠাবো কার মাধ্যমে? আপনারা সুভাষকে দিল্লি পাঠান।” এ দিন উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, ময়ুরভঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী নেপাল রঘু মুর্মু-সহ দলের একাধিক কেন্দ্রীয় স্তরের নেতা।

Advertisement

বাঁকুড়ায় মোদী যে আসবেন তা বেশি দিন আগে ঠিক হয়নি। এত তাড়াতাড়ি জনসভার আয়োজন করা হলেও মাঠে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। জেলা পুলিশের হিসাবে, প্রায় ৫০ হাজার লোক এসেছিলেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মাথার উপরে চড়া রোদ নিয়েই তাঁরা অপেক্ষা করেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মোদীর আসার কথা ছিল, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর হেলিকপ্টার পাশের বাঁকুড়া স্টেডিয়ামে নামেন পূর্ব নির্ধারিত সময়ে পৌনে ২ ঘণ্টা পরে। মঞ্চে উঠেই দেরির জন্য ক্ষমা চান মোদী।

মোদীর মুখ আঁকা টি-শার্ট, মুখোশ এমনকি রং দিয়ে আদুল গা রাঙিয়ে মোদীর মুখ এঁকেও ঘুরতে দেখা গিয়েছে কমবয়সী সমর্থকদের। মাঠ ছিল ভিড়ে ঠাসা। বাইরে বড় পর্দায় অনেকে মোদীর বর্ক্তৃতা দেখেন। যাঁরা সভায় ঢুকতে পারেননি, তাঁদের চোখ কিন্তু সেই বড় পর্দায় সেঁটে ছিল।

মোদীকে দেখে ও তাঁর বক্তব্য শুনে উচ্ছ্বসিত বাঁকুড়ার দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। তবে তারই মাঝে কেউ কেউ আবার বিষণ্ণও। যেমন, বেলিয়াতোড় এলাকা থেকে এসেছিলেন বুধন বাউড়ি। মাথায় বিজেপির পদ্মফুল আঁকা টুপি পরে চড়া রোদে দাঁড়িয়েছিলেন সেই সকাল থেকে। মোদীর ভাষণ শেষে তিনি বললেন, “হাতির উৎপাতে নাভিশ্বাস উঠেছে আমাদের। ভেবেছিলাম, ভাবী প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে কিছু বলবেন! তা তো শুনলাম না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন