আলিমার পাশে দাঁড়াল সানজিদা, শাহিদারা। শনিবারই পাত্রপক্ষ পণের জন্য জোরাজুরি করায় আসরেই পাত্রকে প্রত্যাখ্যান করে মুরারইয়ের ভাদীশ্বরের আলিমা খাতুন। মুরারই গৌরাঙ্গিনী স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা আখতারা, শাহিদা খাতুনরা কিন্তু ভাদীশ্বরের আলিমার প্রত্যয়ী ভূমিকায় উদ্বুদ্ধ। সোমবার তারা বলল, “আমরা পণপ্রথা, বাল্যবিবাহের বিরোধী। সাবালক না হলে বিয়ে করব না।”
ঘটনা হল, বাল্যবিবাহ রুখতে আইন থাকা সত্ত্বেও এ জেলায় প্রচারের অভাবে এখনও একটি অংশের মানুষের কাছে এ নিয়ে কড়া বার্তা পৌঁছে দিতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন। পুলিশ-প্রশাসনের শিথিলতার সুযোগে বাল্যবিবাহের বীজ এখনও অনেক স্থানেই রয়ে গিয়েছে। আবার কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের সুবিধা থাকতেও অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রকৃত প্রাপকদের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছে। আর তার জন্যই আলিমাদের মতো গরিব পরিবারের মেয়েরা মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েও উচ্চ শিক্ষা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যার ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে, উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে মেয়েদের। কয়েকটি ক্ষেত্রে সেই বিয়ে রোখা গেলেও এই জেলায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার নিরিখে সমাজ কর্মীরা কিন্তু অশনি সঙ্কেতই দেখছেন।
রামপুরহাটের তরুণ আইনজীবী সৈয়দ হিমেল ইব্রাহিম বলছেন, “আলিমাদের মতো মেয়েকে যখন বাবা-মায়ের পারিবারিক অবস্থার দিকে তাকিয়ে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করতে রাজি হতে হয়, তখন তার হয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। পাত্রপক্ষ যদি পণ নিয়ে সমস্যা তৈরি না করতেন, তাহলে হয়তো সমাজে আরও একটি বাল্যবিবাহের অপরাধ ঘটে যেত। পুলিশ-প্রশাসনের উচিত এ নিয়ে কড়া মনোভাব দেখানো।” এই পরিস্থিতিতে জেলার বিশিষ্ট জনেরা সরকারি প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। এমন প্রশ্নও উঠছে, এ ক্ষেত্রে গ্রামের আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরাই বা কী ভূমিকা নিচ্ছেন। আবার ব্লকের সমাজ কল্যাণ আধিকারিকরাও তাঁদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। রামপুরহাট মহকুমার একটি গ্রামের আশা কর্মী ওয়াহিদা খাতুন বললেন, “আমরা এ রকম কোনও বিয়ে হওয়ার খবর পেলেই সেখানে গিয়ে পরিবারকে বোঝায়। কিন্তু অনেক সময়ই সমাজের একটা বড় অংশ বাল্যবিবাহের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় আমরা একা পড়ে যাই।” এ দিকে, রবিবারের মতোই এ দিনও মুরারই ১ বিডিও আবুল কালাম বলেন, “আমার কাছে এখনও কেউ অভিযোগ জানায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।” আর আলিমার বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। সানজিদাদের মতো প্রশাসনও কবে, আলিমাদের পাশে দাঁড়ায় এখন সেটাই দেখার।