দরপত্র ডাকা হয়েছিল। কাজের বরাতও পেয়ে গিয়েছেন এক ঠিকাদার। তা সত্ত্বেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের আপত্তিতে শুরুই করা গেল না দুবরাজপুরের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের এমএসডিপি(মাল্টি সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) প্রকল্পে পাওয়া মার্কেটিং হাব তৈরির কাজ।
ঘটনা হল, মার্কেটিং হাব তৈরির পথে বাধা মূলত দুটি। এক, মার্কেটিং হাবের জন্য নির্বাচিত ৩.৫৪ একর জায়াগাটিকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর খাস বলে ছাড়পত্র দিলেও সাত নম্বর ওয়ার্ডের মসজিদ কমিটির দাবি, ওই জায়গার মধ্যে মসজিদের এক একর জায়গা ঢুকে রয়েছে। দুই, স্থানীয় কিছু যুবক ওই জায়গায় খেলাধূলা করেন। তাঁরাও খেলার জায়গা নষ্ট করে অন্য কিছু হোক এটা চাইছেন না। সমস্যা সেখানেই।
এ দিকে শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়াগায় কাজ শুরু না করা গেলে আড়াই কোটি টাকা ফেরত যাবে। এমন আশঙ্কার কথা বলছেন জেলার সংশ্লিষ্ট দফতর। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর থেকে শুরু করে তৃণমূল পুরপ্রধানও চিন্তায় পড়েছেন। কেন না, এলাকা উন্নয়নের জন্য আসা টাকা যদি ফেরত যায় সেটাও খুব ভাল বার্তা নয় দলের কাছে! কাজেই সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে সেই রাস্তা খুঁজতে ব্যস্ত এলাকার তৃণমূল।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য বলছেন, “পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যা মিটিয়ে শীঘ্রই কাজ শুরু করা যাবে আশা করছি। এতে অন্য কারও জায়গা যদি নির্বাচিত জায়গায় থেকেও থাকে, তবে সেক্ষেত্রে সেটা বাদ দিয়ে হাব গড়া হবে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর জেলায় এমন ১১টি মার্কেটিং হাব তৈরি জন্য সরকারি জমি দেখতে অনুরোধ করে জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে। দুবরাজপুর সেগুলির মধ্যে অন্যতম। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরেই জেলার অন্যান্য জায়গার মতো দুবরাজপুরেও জায়গা নির্বাচন করা হয়। আশ্রম মোড় - সাতকেন্দুরী বাইপাস রাস্তার ধারেই শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা খাস জায়গাটি মনে ধরে সংখ্যালঘু দফতরের। সংশ্লিষ্ট দফতরকে জায়গাটি হস্তান্তর করা হয়।
অন্য আর পাঁচটি প্রকল্পের মতো জেলা পরিষদকে এগজিকিউটিং অথরিটি করে ওই খাতে অর্থ বরাদ্দ, দরপত্র ডাকা, বরাত দেওয়া হয়। দিন কয়েক আগে দুবরাজপুরের ওই জায়গার উপর যখন নকসার কাজ চলছে তখনই কাজে বাধা পড়ে। কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ফিরে যান জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যান্য আধিকারিকেরা। এ দিকে মসজিদ কমিটি তাঁদের জমি ওই নির্বাচিত জায়গার মধ্য ঢুকে রয়েছে দাবি করে পুরপ্রধানকে একটি চিঠি দিয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলরকেও জানান তাঁরা। মৌখিক ভাবে আপত্তি তুলেছেন ওখানে খেলাধূলা করতে আসা যুবকেরাও।
জেলা পরিষদের পক্ষে জানানো হয়েছে, যে পরিমান খাস জমি ওখানে চিহ্নিত হয়েছে ততটা জমি মার্কেটিং হাব তৈরিতে প্রয়োজন নেই। বিল্ডিং নির্মাণের জন্য প্রয়োজন মাত্র দেড় বিঘা। এবং সমপরিমান ফাঁকা জায়গা। ফলে মোটামুটি এক একর বা সামান্য কিছুটা বেশি জায়গা হলেই সমস্যা মিটে যায়। সেখানে মসজিদের জায়গা থাকলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এ দিকে জেলা পরিষদ চাইলেও প্রকাশ্য না হলেও কাউন্সিলরদের কেউ কেউ আবার ওই জায়গায় মার্কেটিং হাব হোক সেটাই চাইছেন না। তাই সমাধান সূত্র এখনও মেলে নি। কমিটির বক্তব্য, যেহেতু তাঁদেরই জায়গার উপর ওই হাব তৈরি হবে, তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। তাঁদের আপত্তির কারণ সেটাই। স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ নাজিরউদ্দিন বলেন, “উন্নয়ন মূলক কাজ হলে উপকৃত হবেন এলাকাবাসীই। তাই আমি চাই মার্কেটিক হাব অবশ্যই হোক। তবে মসজিদের জমি ও খেলার মাঠ বাদ দিয়ে মার্কেটিং হাব তৈরি হলে ভাল হয়। কারণ খাস জমির পুরোটা ওই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না।”
সভাধিপতি বলেন, “শহর বাড়ছে। চাহিদা বড়ছে নতুন বাজারেরও। এতে যেমন কর্মসংস্থান হবে, তেমনি মার্কেটিং হাব হলে দুবরাজপুরকে ভবিষ্যতে শুধু মাত্র একটি বাজার কেন্দ্রীক শহর হয়ে থাকতে হবে না।”
দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে বলেন, “আমার কাছে আবেদন জানানো মসজিদ কমিটিকে বলেছি, আপনাদের জায়গা ওখানে থাকলে সেটা বাদ দিয়েই কাজ হবে।”