আজ লাভপুরে অধীর

জরিনাদের পাশে থাকার আশ্বাস বাম প্রতিনিধিদের

খুনের মামলা থেকে দলীয় বিধায়ককে রেহাই দিতে পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করছে শাসক দল, এমনটাই অভিযোগ করলেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা মিনতি ঘোষ। শুক্রবার নিহত তিন সিপিএম সমর্থক ভাইয়ের মা জরিনা বিবির সঙ্গে দেখা করতে লাভপুরে সিপিএমের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লাভপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০১:০০
Share:

পাশে আছি। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

খুনের মামলা থেকে দলীয় বিধায়ককে রেহাই দিতে পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করছে শাসক দল, এমনটাই অভিযোগ করলেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা মিনতি ঘোষ।

Advertisement

শুক্রবার নিহত তিন সিপিএম সমর্থক ভাইয়ের মা জরিনা বিবির সঙ্গে দেখা করতে লাভপুরে সিপিএমের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। মিনতিদেবী ছাড়াও সেই দলে ছিলেন ভারতী মুৎসুদ্দি, অঞ্জু কর, সাধনা মল্লিক, প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম, প্রাক্তন বিধায়ক নবনীতা মুখোপাধ্যায়, মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা শ্যামলী প্রধান, লাভপুর জোনাল সম্পাদক পল্টু কোঁড়া প্রমুখ। প্রতিনিধি দল জরিনা বিবির পরিবারকে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছে। দু’দিন আগেই জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি-সহ কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল জরিনা বিবির সঙ্গে দেখা করেছিল। জিম্মি জানিয়েছেন, আজ, শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও জরিনা বিবির সঙ্গে দেখা করবেন। সঙ্গে থাকবেন জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং হাঁসনের বিধায়ক অসিত মাল।

এ দুপুরে সিপিএমের ওই প্রতিনিধি দল লাভপুরে সানোয়ার শেখের বাড়িতে গিয়ে জরিনা বিবির সঙ্গে কথা বলেন। বাড়ি ঢুকতেই মিনতিদেবী জরিনা বিবিকে কাছে টেনে নেন। জরিনা বিবি প্রতিনিধি দলকে নিজেদের সমস্যার কথা জানান। সব শুনে মিনতিদেবীরা তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিন সন্তানের খুনের বিচারে দল তাঁদের সব রকম ভাবে সাহায্য চালিয়ে যাবে বলেও প্রতিনিধি দল জানায়। ঘণ্টাখানেক ওই পরিবারটির সঙ্গে কাটানোর পরে প্রতিনিধি দল ফিরে যায়। ফেরার আগে সাংবাদিকদের কাছে মিনতিদেবী বলেন, “তৃণমূল নিজেদের দলীয় বিধায়ককে খুনের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পুলিশ-প্রশাসনকে নিজের মতো ব্যবহার করছে। তার জন্যই চার্জশিট থেকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনিরুল ইসলামেরই নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ন্যায় বিচারের জন্য জরিনা বিবিরা যে আইনি লড়াই শুরু করেছেন, আমরা তার পাশে আছি। দলগত ভাবে সব রকমের সাহায্য করব।”

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে লাভপুরের নবগ্রামে খুন হন তিন ভাই জাকের আলি, কোটন শেখ এবং ওইসুদ্দিন শেখ। বালির ঘাটের বিবাদের মীমাংসার জন্য সালিশি সভায় ডেকে মনিরুলের নেতৃত্বে তাঁদের খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বহু দিন ফেরার থাকার পরে তৎকালীন তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মনিরুল গ্রেফতারও হন। কিন্তু ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ চার্জশিট জমা করতে না পারায় তিনি জামিনে ছাড়া পান। তার পরেই ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে দলের টিকিটে জিতে লাভপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হন। এর পরেই নিহতদের পরিবারের স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলেমেয়েকে অপহরণ করে আদালতে তাঁকে নির্দোষ জানিয়ে পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দি আদায় করে নেওয়ার অভিযোগও উঠে মনিরুল এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। তার পরেই কার্যত ওই হত্যাকাণ্ডের কথা ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় মনিরুল সাঁইথিয়ার একটি জনসভায় নিজেই খুনের কথা স্বীকার করে ফের তা প্রকাশ্যে এনে ফেলেন। সংবাদমাধ্যমে সেই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় পড়ে যায়। রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ দিকে, চার বছরেও চার্জশিট জমা না পড়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নিহতদের ভাই সানোয়ার শেখ। হাইকোর্টে ভর্ৎসিত হয়ে চাপে পড়ে সম্প্রতি বোলপুর আদালতে মামলার চার্জশিট জমা করেছে। কিন্তু সেখানে কোনও নামই নেই মূল অভিযুক্ত মনিরুলের। সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফের সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরব হয়ে ওঠে বিরোধী দলগুলি। ইতিমধ্যেই ঘটনায় সিবিআই সদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন জরিনা বিবি। তার শুনানি অবশ্য এখনও শুরু হয়নি।

এ দিন যোগাযোগ করা হলেও লাভপুরের বিধায়ক ফোন ধরেননি। তবে, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “২০১০ সালের ওই ঘটনায় আর কারও কোনও আগ্রহ নেই। যে সব রাজনৈতিক দলের পায়ের তলায় মাটি নেই, তাদের এবং সংবাদমাধ্যমেরই যত আগ্রহ। তাই ওদের (জরিনা বিবি) বাড়িতে গিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করছে।” তাঁর দাবি, “ওই খুনে মনিরুল কোনও ভাবেই জড়িত নন। তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন