টাকা ফেরত দিয়ে আমাদের বাঁচান, আবেদন এজেন্টদের

কয়েক বছর ধরে জেলাজুড়ে ব্যবসা ছড়িয়ে কয়েকশো কোটি টাকা তুলে নিয়ে পাততাড়ি গুটিয়েছে বেসরকারি লগ্নি সংস্থাগুলি। কোনও কোনও সংস্থা অফিস খোলা রাখলেও আমানতকারীদের টাকা না দিয়ে ঘোরাচ্ছে। এই অবস্থায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে পথে নামলেন পুরুলিয়ার বিভিন্ন বেসরকারি লগ্নি সংস্থার এজেন্টরা। ‘সারা ভারত ক্ষুদ্র আমানতকারী ও এজেন্ট সুরক্ষা কমিটি’ নামে এই সংগঠনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার জেলাশাসককে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০০:২৬
Share:

লগ্নি সংস্থার কর্তাদের ছবি হাতে বিক্ষোভ এজেন্ট-আমানতকারীদের। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

কয়েক বছর ধরে জেলাজুড়ে ব্যবসা ছড়িয়ে কয়েকশো কোটি টাকা তুলে নিয়ে পাততাড়ি গুটিয়েছে বেসরকারি লগ্নি সংস্থাগুলি। কোনও কোনও সংস্থা অফিস খোলা রাখলেও আমানতকারীদের টাকা না দিয়ে ঘোরাচ্ছে। এই অবস্থায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে পথে নামলেন পুরুলিয়ার বিভিন্ন বেসরকারি লগ্নি সংস্থার এজেন্টরা। ‘সারা ভারত ক্ষুদ্র আমানতকারী ও এজেন্ট সুরক্ষা কমিটি’ নামে এই সংগঠনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার জেলাশাসককে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

Advertisement

এ দিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজারেরও বেশি এজেন্ট পুরুলিয়া শহরে জমায়েত করে মিছিল করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আমানতকারীরাও। তাঁদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। কোনটাতে ছিল লগ্নি সংস্থার কর্তার ছবি, নীচে লেখা এই কর্তার কঠোরতম শাস্তি চাই। কারও হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, টাকা ফেরত না দিলে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সঙ্গে সংস্থাগুলির পদাধিকারীদের নাম ধরে স্লোগান ওঠে ‘ধাপ্পাবাজ এমডি, সিএমডিদের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করতে হবে। গরিব মানুষের টাকা নিয়ে যাঁরা গা ঢাকা দেয়, তাঁদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। গরিব মানুষের টাকা কোথায় গেল জবাব চাই।” সাহেব বাঁধ এলাকা থেকে শহরের কিছু এলাকা ঘুরে এ দিন বিকেলে মিছিলটি জেলাশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছয়।

সারা ভারত ক্ষুদ্র আমানতকারী ও এজেন্ট সুরক্ষা কমিটির পক্ষে সাবুদ্দিন,শঙ্কর ঘোষ, চিন্ময় পাত্র ও অন্য এজেন্টরা জানান, এ দিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারে হাজারে এজেন্ট ও আমানতকারীরা জড়ো হয়েছেন। জেলায় ১০টি বেসরকারি লগ্নি সংস্থা গত কয়েক বছরে কমবেশি দেড়শো কোটি টাকার বেশি আমানতের ব্যবসা করেছে। পিছিয়ে পড়া এই অনুন্নত জেলার বেকার যুবক-যুবতীরা এই সংস্থাগুলির হয়ে বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে আমানত সংগ্রহের কাজ করেছেন। কিন্তু প্রায় বছর খানেক ধরে কোনও সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ, কোন সংস্থার কর্তাদের হদিশ নেই। কোন সংস্থা জানাচ্ছে, এখন সেবির নির্দেশ নেই টাকা ফেরত দেওয়ার, কোনও সংস্থা বলছে ফের লগ্নি করতে। কিন্তু আমানতকারীরা টাকা ফেরতের দাবি করছেন। এই অবস্থায় তাঁরা জেলাপ্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।

Advertisement

একটি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট রঘুনাথপুরের বাসিন্দা অহিদ আনসারি জানান, তাঁদের সংস্থা দাবি করেছিল স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রে ৪ বছরে দ্বিগুণ, ৮ বছরে চারগুণ, ১০ বছরে ছ’গুণ এবং সাড়ে ১২ বছরে ১০ গুণ টাকা আমানতকারীদের দেবে। তার সঙ্গে এম আই নামে একটি মাসিক রোজগার প্রকল্পও ছিল। এক লক্ষ টাকা রাখলে মাসে ২০০০ টাকা এবং ছ’বছরের প্রকল্প. মেয়াদ শেষে মিলবে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে রেকারিং ডিপোজিট সঞ্চয় প্রকল্পও ছিল। তিনি বলেন, “এই সংস্থা জেলায় সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে। ব্যবসার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি। সংস্থাটি পুরুলিয়া শহর, রঘুনাথপুর, সাঁওতালডিহি, বলরামপুর-সহ মোট সাতটি অফিসও খুলেছিল। কিন্তু প্রায় বছর খানেক সব বন্ধ। ২০১৩ সালের অগস্টের মাঝামাঝি থেকে সংস্থা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমানতকারীদের টাকা কী ভাবে দেবেন ভেবে পাচ্ছি না।”

আনাড়ার বাসিন্দা গুলাম আলি আনসারি দাবি করেন, “আমি এই সংস্থায় কমবেশি ৪০ লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। ১৫ লক্ষের মতো ফেরত পেয়েছি। তারপর বন্ধ।” পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার সোনাইজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ভ্রমর সহিসের কথায়, “আমরা বেকার যুবক। আমানত সংগ্রহের কাজ করলে দু’টো পয়সা পাব এই আশায় কাজ করেছিলাম। এখন বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না।” এজেন্টরা জানান, এই সংস্থা পুরুলিয়া শহরে একটি হোটেল কিনেছে। পুরুলিয়া মফস্সল থানার কাছে চাকলতোড় গ্রামের কাছে ৮৬ বিঘা জমি কিনেছে। যেখানে ছাগলের খামার গড়া হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছিল। এই থানারই আমজোড়া গ্রামের কাছে ৩৪ বিঘা জমি কেনা রয়েছে, যেখানে সিমেন্ট কারখানা হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। এজেন্টদের কেউ কেউ ওই সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা দেওয়ার দাবি করেন।

এজেন্টরা জানান, ওই সব সম্পত্তি দেখেই আমরা পরিচিতদের আশ্বস্থ করে আমানত সংগ্রহ করেছিলাম। এখানকার অফিস বন্ধ। সংস্থার এক কর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানাচ্ছেন, সেবির নিষেধাজ্ঞার জন্য টাকা ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকী সম্পত্তি বিক্রি করে যে টাকা ফেরত দেওয়া হবে, তাতেও না কি সেবি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে ওই কর্তা দাবি করছেন। ঝালদার বাসিন্দা শেখ হাফিজুল্লা, শেখ হোসেনরা দাবি করেছেন, “আমরা সংস্থার হয়ে গরিব মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছি। সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ। আমরা বাড়িতে থাকতে পারছি না। ঘরছাড়া হয়ে কাটাতে হচ্ছে। আমানতকারীরা বাড়িতে হানা দিচ্ছেন।”

ক্ষুদ্র আমানতকারী ও এজেন্ট সুরক্ষা কমিটির দাবি, ২০১৩-র মে মাসের পর থেকে বিভিন্ন চিটফান্ড কোম্পানিগুলি তাদের লক্ষ লক্ষ আমানতকারীদের আমানতের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। তাঁদের দাবি, প্রত্যেক আমানতকারীর লগ্নিকৃত সম্পূর্ণ অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে সংস্থাগুলির কর্ণধারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে এজেন্টদের আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা করারও দাবি জানানো হয়।

জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “ওঁদের স্মারকলিপি পেয়েছি। রাজ্য সরকারের কাছে তা পাঠানো হবে। ওঁদের বলেছি, পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে পুলিশও তদন্ত শুরু করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন