ডাঙালিকালীর পরই শহরে শুরু শ্যামাপুজো

শ্যামা পুজোয় তান্ত্রিক মতে সন্ধ্যায় নিশি পুজোর চল আজও অমলিন কোথাও কোথাও। পাঁচশো বছরের প্রাচীন বোলপুরের গোয়ালপাড়ার পশ্চিমপাড়া ভট্টাচার্য পরিবার যেমন। সাবেক রীতি মেনে বলভদ্র কালীর পুজোতে এখনও সেই চল। প্রথা মেনেই, ভট্টাচার্যদের পাঁচ শরিক থেকে ওই পুজো আজ পাঁচশো সদস্যর মাথায় এসে পড়েছে।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

বোলপুর শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৯
Share:

শ্যামা পুজোয় তান্ত্রিক মতে সন্ধ্যায় নিশি পুজোর চল আজও অমলিন কোথাও কোথাও। পাঁচশো বছরের প্রাচীন বোলপুরের গোয়ালপাড়ার পশ্চিমপাড়া ভট্টাচার্য পরিবার যেমন। সাবেক রীতি মেনে বলভদ্র কালীর পুজোতে এখনও সেই চল। প্রথা মেনেই, ভট্টাচার্যদের পাঁচ শরিক থেকে ওই পুজো আজ পাঁচশো সদস্যর মাথায় এসে পড়েছে।

Advertisement

পালা করে ষোলো বছর অন্তর অন্তর এক এক জনের কাছে ওই পুজোর দায়িত্ব এলেও, উত্‌সবে মাতে গোটা গ্রাম। ভট্টাচার্য পরিবারের প্রবীণ সদস্য জয়দেব ভট্টাচার্য, চিত্তরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য ও মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যরা জানান, বাবা কাকাদের কাছে শুনেছি, প্রায় পাঁচশো বছর আগে কোপাই নদীর ধারে একটি শেওড়া গাছের তলায় বিশিষ্ট তান্ত্রিক বলভদ্র গোস্বামী এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। তাঁর বার্ধক্যে তিনি ওই পুজোর দায়িত্ব গোয়ালপাড়ার ভট্টাচার্য পরিবারের কাশীনাথ ভট্টাচার্যের হাতে দিয়ে দেন। কিন্তু পুজো কেমন করে হবে? কাশীনাথবাবু তান্ত্রিক বলভদ্র গোস্বামী কে প্রশ্ন করলে, ওই তান্ত্রিক তাঁকে অভয় দেন।

পরে গ্রামের বাসিন্দা থাকুমণি বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের নয় বিঘে জমি কালী পুজোর জন্য ভট্টাচার্য পরিবারের হাতে তুলে দেন। কোপাই নদীর পাড় থেকে ওই কালী পুজো উঠে আসে গোয়ালপাড়া গ্রামের মাঝে বটতলার কাছে। গ্রামের কালিদাস সরকারের দেওয়া জমিতে কালী পুজো হয়।

Advertisement

ভট্টাচার্য পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা জানান, ওই তান্ত্রিকের শেষ ইচ্ছে মতো মা কালীর পূজোর জায়গায় সমাধিস্থ করা হয় বলভদ্র গোস্বামীর দেহ। ওই বটতলার নীচে ১০৮ মড়ার খুলির কাছেই তান্ত্রিকের দেহ সমাধি দেওয়া হয়েছে। বলভদ্র গোস্বামীর দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, কার্ত্তিক অমাবাস্যা তিথিতে সন্ধ্যা নিশির পুজো হয়। প্রাচীনপ্রথা মেনে এখনও রয়েছে বলিদান রীতিও।

বলভদ্র গোস্বামীর প্রয়াণের পর, এই পুজো বলভদ্র কালী পুজো নামে খ্যাত হয়েছে। এ বছর এই পুজোর দায়িত্ব পড়েছে গোয়ালপাড়া ভট্টাচার্য পরিবারের শরিক কিশোর ভট্টাচার্যের ওপর। তিনি বলেন, “ওই প্রাচীন রীতি এবং প্রথা মেনে তান্ত্রিক মতে পুজো শতাব্দী ধরে হয়ে আসছে। ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো হলেও, গোটা গ্রাম শরিক হন পুজো ক’দিন।”

জানা গেল, ভট্টাচার্য পরিবার বা গ্রামই নয় আশেপাশের হাজারো ভক্তদের জনসমাগম হয়ে এই ক’দিন। গ্রামের বর্তমানের যুব সমাজও এই পুজোতে সমান হাত লাগিয়ে এগিয়ে এসেছেন এবারও সহায়তায়।

শুধু পারিবারিক বা বাড়ি পুজোই নয়, বোলপুর শহরে দেবী দুর্গার আরাধনার মতো কালী আরাধনায় ব্রতী হয়েছেন এলাকার বিভিন্ন ক্লাবগুলি। নেতাজি ক্লাবের উদ্যোগে শ্যামাপুজো এ বার পড়ল ৪৭ বছরে। বাঁশ, খড়, কুলো, তাল পাতা এবং হাত পাখা দিয়ে তৈরি হয়েছে সুদৃশ্য মণ্ডপ। নতুন পুকুর-সিস্টার নিবেদিতা রোড়ের সাবেকী প্রতিমায় ডাকের সাজে পুজিত হচ্ছেন এবার কালী। উদ্যোক্তারা আয়োজন করেছেন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

শহরের নিমতলা- কালিমোহন পল্লি সর্বজনীন শ্যামা পুজো কমিটি মধুবনি শিল্পের ওপর সাজিয়েছে নানা শিল্প কর্ম। কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্র শিল্পী দীপঙ্কর হালদার গোটা মণ্ডপ সাজিয়েছেন মধুবনি কাজে। মিস্ত্রী পাড়া আর্য সঙ্ঘের শ্যামা পুজোতে এ বারও আলোক সজ্জা নজর কেড়েছে দর্শকদের। নায়েকপাড়া যুব সঙ্ঘ, সতীঘাটের শ্মশান কালী নিশি রাতের পুজোতে শরিক হন শতাধিক ভক্ত। বোলপুরের শ্যামবাটি, ক্যানেলপাড়, ভুবনডাঙা এলাকার বাসিন্দা এবং ক্লাব উদ্যোক্তারা শ্যামা পুজো করেন আড়ম্বরে। তবে এই এলাকার বাড়ি পুজোই হোক অথবা কোনও সর্বজনীন পুজো, সকলে তাকিয়ে থাকেন বোলপুরের ডাঙ্গালী কালী তলার দিকে। আসলে ডাঙ্গালি কালীতলার ওই পুজো হওয়ার পরেই একে একে শুরু হয় এই এলাকার শ্যামা পুজো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন