তারাপীঠে গ্রামীণ হাট গড়বে রাজ্য

‘বিশ্ব বাংলা হাটে’র ধাঁচে তারাপীঠের কাছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি হস্তশিল্পীদের জন্য গড়ে উঠতে চলেছে একটি ‘গ্রামীণ হাট’। সম্প্রতি এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার বলে জানিয়েছে জেলা শিল্প উন্নয়ন দফতর।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৫ ০১:২৬
Share:

শান্তিনিকেতনের খোয়াইয়ের হাটের মতো কি জনপ্রিয় হতে পারবে? সংশয় নতুন হাট নিয়ে। —ফাইল চিত্র।

‘বিশ্ব বাংলা হাটে’র ধাঁচে তারাপীঠের কাছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি হস্তশিল্পীদের জন্য গড়ে উঠতে চলেছে একটি ‘গ্রামীণ হাট’। সম্প্রতি এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার বলে জানিয়েছে জেলা শিল্প উন্নয়ন দফতর।

Advertisement

কেন্দ্র সরকারের ‘ন্যাশনাল ফাইবার মিশনে’র আওতাধীন রাজ্যের পশ্চাদপদ এলাকার বিশেষ উন্নয়ন খাতের টাকায় ‘কর্মতীর্থ’ প্রকল্প নাম দিয়ে ওই গ্রামীণ হাট নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। রামপুরহাট–সাঁইথিয়া রাস্তার পাশে তারাপীঠ ঢোকার আগে স্থানীয় কৌরা গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৭৯ শতক জমিতে ওই হাট তৈরি করা হবে। জেলা শিল্প উন্নয়ন দফতরের আধিকারিক সুব্রত হাজরা বলেন, “গত ২৬ অগস্ট ওই পরিমাণ জমি জেলা শিল্প দফতরের নামে হস্তান্তরিত হয়েছে। জেলায় এই ধরনের গ্রামীণ হাট রামপুরহাট মহকুমায় এই প্রথম।’’ তিনি আরও জানান, প্রকল্পের সমস্ত কাগজপত্র রাজ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের মুখ্য সচিবকে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও জেলাস্তরের সমস্ত প্রশাসনিক দফতরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়ে গিয়েছে।

দফতর সূত্রের খবর, প্রকল্পের নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যেই ওই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের দেখভালে প্রকল্পটি নির্মাণ হবে। আপাতত ২৭টি ঘর তৈরি করা হবে। দফতরের বীরভূম জেলার জেনারেল ম্যানেজার তন্ময় ব্রহ্ম জানান, ঘরগুলি তৈরির পরে হস্তশিল্পীদের মধ্যে দল গঠন করে বিলি করা হবে। তবে, কাউকেই স্থায়ী ভাবে ঘর দেওয়া হবে না। সব ধরনের শিল্পীদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাঁদের উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করার সুযোগ দেওয়া হবে। তন্ময়বাবুর কথায়, ‘‘জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি হস্তশিল্পীরা যাতে একটি জায়গায় বসে তাঁদের উৎপাদিত দ্রব্য নির্মাণ করে সরাসরি বিক্রি করতে পারেন, তার জন্যই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তারাপীঠকে কেন্দ্র করে বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ এখন বেড়াতে আসেন। মূলত সেই সমস্ত মানুষ জনের কাছে জেলার হস্তশিল্পীরা যাতে উৎপাদিত দ্রব্য তুলে দিতে পারেন, তার জন্যই এই হাট তৈরির জন্য ওই এলাকাটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

ঘটনা হল, গ্রামীণ হস্ত শিল্পের প্রসারের জন্য এ বছরের গোড়ায় শান্তিনিকেতনের প্রান্তিকে ২৫ বিঘে জায়গায় গড়ে উঠেছে ‘বিশ্ব বাংলা হাট’। প্রথম দিকে এলাকার হস্ত শিল্পীদের উৎসাহিত করলেও, পরবর্তী কালে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যায়। সেখানে নিজেদের হস্তশিল্পের পসার নিয়ে বসেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের শতাধিক হস্তশিল্পী। কাঁথা স্টিচের কাপড়, কাঠ খোদাই নানা আসবাব সামগ্রী, পোড়া মাটি ও পাটের শিল্প কর্ম, পট ইত্যাদি হস্ত শিল্পের সম্ভার নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসে থাকলেও কেউ-ই বিক্রির হাল নিয়ে সন্তুষ্ট নন বলে অভিযোগ। ফলে শান্তিনিকেতনের মতো সদা ব্যস্ত ট্যুরিস্ট স্পটে থাকা হাটের যদি এমন হাল হয়, তা হলে রামপুরহাটের ওই এলাকায় তৈরি হওয়া হাটের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

নতুন হাট নিয়ে অবশ্য এমন কোনও সমস্যা হবে না বলেই দাবি করছে জেলা শিল্প দফতর। তারাপীঠকে মাথায় রেখে হাটের সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী সুব্রতবাবুরা। এমনকী, শান্তিনিকেতনের হাট নিয়েও সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে দাবি তন্ময়বাবুর। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলার হস্তশিল্পীদের একাংশও। মাড়গ্রাম থানার বিষ্ণুপুরের বাঁশের ঝুড়ি নির্মাণ শিল্পী গৌতম মেহেনা, একই থানার বসোয়া গ্রামের শোলাশিল্পী গৌরহরি সিমলান্দিরা বলছেন, ‘‘প্রশাসন থেকে আমাদের শিল্পের বিপণনের এমন সুযোগ করে দিলে তো ভালই হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন