আজ সোমবার উল্টোরথে মাতবে বিষ্ণুপুর। কৃষ্ণগঞ্জে রবিবার তৈরি হচ্ছে বিশেষ রাজভোগ। মাধবগঞ্জে বসে গিয়েছে মেলা।—নিজস্ব চিত্র
রথকে ঘিরেই প্রতিবার দ্বৈরথ। তবে এ ‘দ্বৈরথ’ নিতান্তই ঐতিহ্যের অনুসরণ। উল্টোরথে এই দ্বৈরথেই মেতে উঠেছে বিষ্ণুপুর শহর!
উল্টোরথের শোভাযাত্রাকে ঘিরে প্রতিবারই ভাগ হয়ে যায় বিষ্ণুপুর। মাধবগঞ্জের ১১ পাড়ার শ্রী শ্রী মদনগোপাল জীউ-এর রথ এবং কৃষ্ণগঞ্জের ৮ পাড়ার দেবতা শ্রী শ্রী রাধালাল জীউয়ের রথ নিয়ে প্রতিবারই শহরে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা। জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার জায়গায় এই দু’টি রথে মদনগোপাল জীউ এবং রাধালাল জীউ থাকেন। কার্যত আজ, সোমবার দু’দলে ভাগ হয়ে যাবেন বিষ্ণুপুরের বাসিন্দারা। সে ভাবেই তাঁরা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করবেন। শুধু কি বিষ্ণুপুরের বাসিন্দারাই? এখানকার উল্টো রথ দেখতে জেলার বিভিন্ন গাঁ-গঞ্জ থেকে মানুষজন আসেন।
রবিবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে তার প্রস্তুতি। আলোকসজ্জা, রকমারি বাদ্যযন্ত্রে শহর মাতাতে তৈরি দুই রথ কমিটিই। শহরের দুই রথতলায় সাজানো হয়েছে বকুলকুঞ্জ। দু’টি নাটমন্দিরই সন্ধ্যা থেকে এলাকার বাসিন্দাদের ভিড়ে জমজমাট। মঞ্চ বেঁধে বিচিত্রানুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। রথকে ঘিরে বকুলকুঞ্জে রবিবার থেকেই শুরু হয়েছে রথের মেলা। এ দিন থেকে সেই মেলাতেই জনজোয়ারে ভাসল শহর।
কথিত আছে, বিষ্ণুপুরের রথ শুরু হয় সপ্তদশ শতকে। মল্লরাজা বীরসিংহদেব পাথরের রথ তৈরি করিয়ে বিষ্ণুপুরে শুরু করেছিলেন রথযাত্রা। পরবর্তীকালে বিষ্ণুপুরে পিতলের রথও ছিল। মল্লরাজধানীর এই দু’টি এলাকায় দুই রথ কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, শোভাযাত্রার রুট-চার্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। পুরসভা সেই সব রাস্তা সাফ করে দিয়েছে।
কৃষ্ণগঞ্জ ৮ পাড়া রথযাত্রা কমিটির সভাপতি তথা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবিলোচন দে বলেন, “শোভাযাত্রায় এ বার থাকছে চন্দননগরের আলো, কলকাতার তাসা, ব্যান্ড, কীর্তন-সহ ১১টি বাজনার দল ও ৬টি চৌদল।” অন্য দিকে, মাধবগঞ্জ ১১ পাড়া রথযাত্রা কমিটির সভাপতি সমীরণ ঘোষ বলেন, “আমরা আলো, বাজনা ও শোভাযাত্রার চৌদল সাজানোয় এ বার আরও অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করেছি। ব্যাঞ্জো, সানাই-সহ ১২টি বাজনা থাকবে। শোভাযাত্রায় থাকবে ৫টি চৌদল।”
ইতিমধ্যেই দুই রথ কমিটি এবং পুলিশ-প্রসাশনকে নিয়ে বৈঠক করেন বিষ্ণুপুরের মহকুমা প্রশাসন। পুরপ্রধান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানান, শহরবাসীকে মেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।