দখলবাটি পঞ্চায়েত

দেখা নেই কর্মীদের, তালা খুলল ভরদুপুরে

ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা। রামপুরহাটের দখলবাটি পঞ্চায়েত অফিসের সামনের গেটের তালা খুলছিলেন অস্থায়ী কর্মী শের আলি। এত দেরিতে তালা খোলা হচ্ছে, ব্যাপারটা কী? বছর পঞ্চাশের শের আলির আমতা-আমতা জবাব, “না, মানে আমি সকাল ১০টায় এসে অফিসের অন্য গেটের তালা খুলে বসেছিলাম। কিন্তু লোকজন কেউ না থাকায় এ দিকের তালা আর খুলিনি।”

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০০:৫৩
Share:

দুপুর ১টা। চেয়ার আছে কর্মী নেই। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা।

Advertisement

রামপুরহাটের দখলবাটি পঞ্চায়েত অফিসের সামনের গেটের তালা খুলছিলেন অস্থায়ী কর্মী শের আলি।

এত দেরিতে তালা খোলা হচ্ছে, ব্যাপারটা কী?

Advertisement

বছর পঞ্চাশের শের আলির আমতা-আমতা জবাব, “না, মানে আমি সকাল ১০টায় এসে অফিসের অন্য গেটের তালা খুলে বসেছিলাম। কিন্তু লোকজন কেউ না থাকায় এ দিকের তালা আর খুলিনি।”

জবাব শুনে পিছনের গেট দিয়ে ওঠা গেল অফিসের দোতলায়। সেখানে তখন বসে রয়েছেন পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের সাফিক হোসেন। তবে কর্মীদের সমস্ত চেয়ার ফাঁকা। দু’একটি জানলা সবে খোলা হয়েছে।

ভোট ও ১ মে-র ছুটি কাটানোর পর দিন, শুক্রবার দখলবাটি পঞ্চায়েতের চিত্রটা ছিল এই রকমই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামপুরহাট ১ ব্লকের অন্য পঞ্চায়েতগুলিতেও কর্মী-উপস্থিতির হার ছিল বেশ কম। তবে দুপুর ১টাতেও কোনও কর্মী আসেননি, দখলবাটি পঞ্চায়েতের মতো এমন দৃশ্য অন্যত্র ছিল না বলেই খবর মিলেছে।

দখলবাটির এক বাসিন্দা জানালেন, এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি একটি কাজের জন্য পঞ্চায়েত অফিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখেন মূল গেটে তালা। প্রধানকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমি বাজারে আছি। জানি না তো। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” দুপুরেই পঞ্চায়েত থেকে নাতির জন্মের শংসাপত্র নিতে এসেছিলেন মুরারইয়ের রাজগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আলি হোসেন। তিনি বলেন, “রামপুরহাট হাসপাতালে দিন পনেরো আগে নাতি জন্মেছে। শংসাপত্র দখলবাটি পঞ্চায়েত অফিস থেকে পাওয়া যাবে শুনে এখানে এসেছি। কিন্তু পঞ্চায়েত তো বন্ধ। তালা ঝুলছে। বাড়ি ফিরে যাওয়া ছাড়া আর উপায় কী?” আলি হোসেন যখন পঞ্চায়েতের রাস্তা ছাড়িয়ে রামপুরহাটের দিকে, তখনই মূল গেটের তালা খুলতে এলেন শের আলি। পঞ্চায়েত ভবনের নীচের তলায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রেভিনিউ ইনস্পেক্টরের অফিস। সেখানেও কোনও কর্মীর দেখা নেই। জানলা বন্ধ, দরজাতেও তালা।

কেন এ দিন দুপুর পর্যন্ত অফিসে যাননি, ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে নির্বাহী আধিকারিক মানিক রবিদাস বলেন, “আমি প্রধানের সঙ্গে কথা বলে অফিসের কাজে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম।” বাকি ৮ কর্মী কোথায় গিয়েছিলেন? মানিকবাবু বলেন, “ভোটের পর দিন পর্যন্ত অনেক কর্মী কাজ করেছেন। অনেকে ক্লান্ত। সে জন্য কেউ কেউ হয়তো আসেননি।” পঞ্চায়েত ভবনের সামনে দেখা মিলল এক রিকশা চালকের। জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই রিকশা চালক মুচকি হেসে বললেন, “এখন তো পঞ্চায়েত অফিস বন্ধ থাকবেই। ভোটের ফল না বেরোনো পর্যন্ত খুলবে না।”

রামপুরহাট ১ বিডিও শ্রেয়সী ঘোষের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে রামপুরহাটের মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় বলেন, “এ রকম হওয়ার কথা নয়। পরিষেবা চালু রাখার জন্য অন্তত এক জন কর্মীর অফিসে থাকা উচিত। খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে কর্মীদের সতর্ক করে দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন