দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থাই বাধা পর্যটনে

শৈব তীর্থক্ষেত্র, সতীপীঠ এবং উষ্ণ প্রস্রবণ। একসঙ্গে সবই রয়েছে বক্রেশ্বরে। পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সাজানো গোছানো উষ্ণ প্রস্রবণ, স্নানাঘাট, মনোরম পরিবেশে ঝকঝকে শিব ও মহিষমর্দিনীর মন্দির। নেই শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর তাই এক বেলা-আধ বেলার জন্য ভিড় জমে এই পুণ্যপীঠে। একজন পর্যটক বা পুণ্যার্থী বক্রেশ্বরে সতীপীঠ এবং উষ্ণ প্রস্রবণের টানেই ছুটে আসেন।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

বক্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৫
Share:

উষ্ণপ্রস্রবণে স্নান করার ভিড়। —নিজস্ব চিত্র

শৈব তীর্থক্ষেত্র, সতীপীঠ এবং উষ্ণ প্রস্রবণ।
একসঙ্গে সবই রয়েছে বক্রেশ্বরে। পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সাজানো গোছানো উষ্ণ প্রস্রবণ, স্নানাঘাট, মনোরম পরিবেশে ঝকঝকে শিব ও মহিষমর্দিনীর মন্দির। নেই শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর তাই এক বেলা-আধ বেলার জন্য ভিড় জমে এই পুণ্যপীঠে।
একজন পর্যটক বা পুণ্যার্থী বক্রেশ্বরে সতীপীঠ এবং উষ্ণ প্রস্রবণের টানেই ছুটে আসেন। কিন্তু বোলপুর-শান্তিনিকেতন ঘুরতে এসে বা, তারাপীঠে এসে এক-আধ বেলার জন্য প্রচুর পর্যটক আসেনও এখানে ঘুরতে। কিন্তু কিছু প্রাথমিক সমস্যা থাকার জন্যই পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে বক্রেশ্বরের নাম উঠে আসছে না। মন্দিরের সেবাইত, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের তেমনটাই মত। স্থানীয় বাসিন্দারা জনাচ্ছেন, পানীয় জল ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যাই সবচেয়ে খারাপ। সঙ্গে রয়েছে উন্নতমানের হোটেল লজ না থাকার সমস্যাও।
তাঁদের দাবি, সেসব উপেক্ষা করে একজন পর্যটক বক্রেশ্বর এলেও তাঁদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গরমজলে স্নান সেরে মন্দিরে পুজো দিতে আসা পর্যটকেরা খুব বেশি হলে ঘন্টা দু’য়েকের মধ্যেই বক্রেশ্বর ছেড়ে চলে যান। একজন পর্যটককে বক্রশ্বরে একটি দিন থাকার ব্যবস্থা না থাকলে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে জায়গাটির গুরুত্ব বাড়ানো সম্ভব নয়।
কী বলছেন জেলাপ্রশাসনের কর্তারা?
তাঁরা জানিয়েছেন, বক্রেশ্বর শতাব্দী প্রাচীন শিব-ধাম। একান্নপীঠের একপীঠ হলেও পর্যটকদের এখানে আসার মূল আকর্ষণ অবশ্যই উষ্ণ প্রস্রবণ। গত নভেম্বরে নীল-সাদা রঙে, ঝকঝকে টাইলসে সেই উষ্ণ প্রস্রবণকে দারুণ ভাবে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতরের টাকায় ও জেলা পরিষদের সহায়তায়। স্নানের জন্য থাকা গরম জলের কুণ্ডগুলি থেকে নোংরা জল নিকাশের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নীচে ৬ ইঞ্চি ঢালাই দিয়ে তারপর নতুন নুড়ি পাথর দেওয়া হয়েছিল। এ কাজে খরচ হয়েছিল ৪৫ লক্ষ টাকা। পর্যটকদের কথা ভেবে ১০টি উন্নত কটেজ তৈরির কাজও প্রায় শেষের দিকে। সস্কার করা হয়েছে যুব আবাসের। সৌরবিদ্যুৎ চালিত পথবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে চত্বর।

Advertisement

এলাকার ব্যবসায়ী নিমাই রায় বলেন ‘‘প্রথমত কলকাতার সঙ্গে না রেল পথে না সড়ক পথে কোনও বাস ধরে বক্রেশ্বরে আসা যায়। রাজ্যের বা জেলার অন্যান্য অংশের সঙ্গেও বাস যোগাযোগ অত্যন্ত করুণ। প্রশাসনকে প্রথমেই সেই দিকটা নদর দিতে হবে।’’ খানিকটা একই কথা বলেন বাসিন্দা সমীর দে। তিনি বলেন, ‘‘পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। পুজোর পর থেকে পর্যটকেরা আসতে শুরু করলেও বক্রেশ্বরে মূল মরসুম শীতকাল। কিন্তু বছরের বিভিন্ন সময় যেমন বিয়ে অন্নপ্রাশন পৈতে বা পুজো দিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে আসেন। শ্রাবণ মাসে জল ঢালতেও ভিড় করেন অনেক মানুষ, কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় অনেককেই বিপাকে পড়তে হয়।’’

রবিবার কলকাতার টালিগঞ্জ থেকে সপরিবারে বক্রেশ্বরে বেড়াতে এসেছিলেন কুমকুম ভট্টাচার্য। বললেন, ‘‘উইক এন্ডে শান্তিনিকেতন এসেছিলাম। সেখান থেকে বক্রেশ্বর। আগেও এসেছি। তবে এ বার অনেক পরিছন্ন ও সাজানো গোছানো বক্রেশ্বর দেখছি। গরমজলের ঘাটও খুব পরিচ্ছন্ন। খাওয়া দাওয়ার বেশ অসুবিধে।’’

Advertisement

স্নান সেরে বক্রেশ্বর শিবমন্দির ও মহিষমর্দিনী মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার আগে বার্ণপুরের প্রৌঢ়া শ্রাবণী কবিরাজ, বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর যুবক বরিশঙ্কর সিংহ কিংবা সাঁইথিয়া থেকে আসা দম্পতি সহেলী পাল ও পার্থ পাল প্রত্যেকেরই দাবি, বক্রেশ্বরে আগের থেকে অনেক ভাল লাগল। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি।

বক্রেশ্বর সেবাইত সমিতির সম্পাদক তথা স্থানীয় একটি ক্লাবের সভাপতি রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘‘শুধু পর্যটক বা পুণ্যার্থীরা এলেই এখানে হবে না, তাঁরা যাতে এখানে একটা দিন কাটাতে পারেন এমন কিছু করুক বা ভাবুক প্রশাসন। কথা ছিল উষ্ণ প্রস্রবণ ও মন্দির সংলগ্ন তিনটি পুকুরকে একত্রিত করে সেখানে বোটিং চালু হবে। কিন্তু সে কাজে হাত পড়েনি। বক্রেশ্বরে শিশুদের জন্য পার্কও জরুরি।’’ সহমত জানালেন সেবাইত সমিতির সভপতি গৌতম আচার্য বা কোষাধ্যক্ষ রাণা চক্রবর্তীরা।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) বিধান রায় বলেন, গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় এসে নির্দেশ দিয়েছিলেন, জেলার পাঁচপীঠ ও তারাপীঠ-সহ একটি বাস সার্কিট চালু করার। নাম মাতৃদর্শন। তারাপীঠ থেকে বক্রেশ্বরে ইতিমধ্যেই একটি বাস চালু হয়েছে। ধীরে ধীরে বাসগুলির সংখ্যা আরও বাড়বে। একটি চিল্ডেন পার্ক ও জলাশয়গুলিকে একত্রিত করে বোটিং চালু করা হবে। জলাশয়ের মাঝে একটি ওভারব্রিজ গড়ে বক্রেশ্বরে নব নির্মিত কটেজগুলিতে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন