দোরগোড়ায় ভোট, বোমা উদ্ধার কলেজে

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে রামপুরহাট কলেজে। বুধবার দুপুরে কলেজ চত্বরের মধ্যে নির্মীয়মাণ ছাত্রী আবাস থেকে ছ’টি তাজা বোমা উদ্ধার করল পুলিশ। তার আগে সকালে বিজেপি’র ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এভিবিপি) এক সমর্থককে মারধরের অভিযোগও উঠেছে। নির্মীয়মাণ ছাত্রী আবাসে বোমা রাখা এবং মারধর— দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযোগ জমা পড়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১০
Share:

নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে বোমা। —নিজস্ব চিত্র।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে রামপুরহাট কলেজে। বুধবার দুপুরে কলেজ চত্বরের মধ্যে নির্মীয়মাণ ছাত্রী আবাস থেকে ছ’টি তাজা বোমা উদ্ধার করল পুলিশ। তার আগে সকালে বিজেপি’র ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এভিবিপি) এক সমর্থককে মারধরের অভিযোগও উঠেছে।

Advertisement

নির্মীয়মাণ ছাত্রী আবাসে বোমা রাখা এবং মারধর— দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযোগ জমা পড়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বিরুদ্ধে। দু’টি ক্ষেত্রেই বিরোধীরা টিএমসিপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও তাদের তরফ থেকে পাল্টা কিছু করা হয়নি। সাধারণত বিরোধীরা তাদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আনলে তৃণমূল বা টিএমসিপিও পাল্টা অভিযোগ আনে। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “নির্মীয়মাণ ছাত্রী আবাসে বোমা আছে, এই খবরের বিষয়ে বিন্দুমাত্র কিছু জানা নেই। কলেজের ভিতর একজন ছাত্রকে মারধরের বিষয়ও জানা নেই।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রী আবাসের একটি ঘরে নাইলনের ব্যাগের ভিতরে বোমাগুলি রাখা ছিল। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়দেব পানের পরিবর্তে কলেজের দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষক অরিন্দম সিংহ। ওই ঘরে বোমা রয়েছে কানে আসতেই তিনি তিনি প্রথমে কলেজের দু’জন শিক্ষক প্রতিনিধিকে খোঁজ নিতে বলেন। ওই দু’ই প্রতিনিধির কাছ থেকে বোমা রাখা আছে বলে জানতে পেরে অরিন্দমবাবু নিজেই সেখানে যান। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউজিসি থেকে ১ কোটি টাকা বরাদ্দে ওই ছাত্রী আবাসের নির্মাণ ২০১৩ সাল থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৪৯ লক্ষ টাকার কাজ হয়। বর্তমানে ছ’মাস থেকে টাকার অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ বকেয়া টাকা দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকে জানিয়ে আসছেন। সেই টাকা না মেলায় কাজ বন্ধ রয়েছে। আগামী ৮ জানুয়ারি কলেজ নির্বাচন হয়েছে। ৩ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র তোলার দিন। সে জন্য ২৪ ডিসেম্বর থেকে কলেজের নির্বাচন বিধি লাগু হয়েছে। তার আগে এই ভাবে কলেজ চত্বর থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনা কলেজ নির্বাচনের গিরে আরও বেশি উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই ঘটনা অনভিপ্রেত মন্তব্য করে কলেজ নির্বাচনের আগে মনোনয়নপত্র তোলা থেকে জমার দিন পর্যন্ত এবং নির্বাচনের আগে ও পরে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য এসডিপিওকে আবেদন করেন কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অরিন্দম সিংহ।

Advertisement

এ দিকে, কলেজের নির্মীয়মাণ ছাত্রী আবাস থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনার জন্য টিএমসিপিকে দায়ী করেছে ছাত্র পরিষদ, এভিবিপি, এসএফআই, ডিওয়াইএফআই। বিকেলে রামপুরহাট মহকুমাশাসকের কাছে ওই সব সংগঠনের তরফে এই ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি কলেজে নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে হয় তার জন্য লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। ছাত্রপরিষদ সমর্থকদের দাবি, কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র তোলার দিন থেকে বিরোধীদের উপরে হামলার জন্য আগে ভাগে বোমা মজুত করে রেখেছিল টিএমসিপি। টিএমসিপি সদস্য মহম্মদ মামন রেজার প্রতিক্রিয়া, “কলেজের ভিতর নির্মীয়মাণ ছাত্রী আবাসে যারা বোমা রেখেছিল তারা কারা, সেটা যারা রেখেছিল তারাই বলতে পারবে।” তাঁর দাবি, “তবে একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবে বলতে পারি, কলেজে বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধ হয়নি। আজকে হয়তো অনেকের নজরে এসেছে। কিন্তু ভাল ভাবে খোঁজ নিলে জানতে পারা যাবে কলেজে যারা ছাত্র রাজনীতি করে তারা জানে কে বা কারা বোমা নিয়ে প্রায় দিনই কলেজ চত্বরে আসে। এর জন্য ছাত্রছাত্রীদের সতর্ক হওয়া উচিত। তা না হলে পুলিশ প্রশাসন এবং অধ্যক্ষের একার পক্ষে তাদেরকে সামাল দেওয়া মুশকিল।”

কলেজে বহিরাগতদের যে আনাগোনা রয়েছে তা বিএসসি প্রথম বছরের ছাত্র দীপঙ্কর মণ্ডলের কথায়ও উঠে এসেছে। তাঁর অভিযোগ, “এ দিন কেমিস্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। প্র্যাকটিক্যাল রুমে ঢোকার আগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহকারী সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বহিরাগত ১০-১৫ জন যুবক আমার উপরে হঠাত্‌ চড়াও হয়। এভিবিপি করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় ওরা। শুধু তাই নয়, তারা আমাকে কিছুক্ষণের জন্য আটকেও রেখেছিল। পরে শিক্ষকের সহযোগিতায় বেরিয়ে আসি এবং রামপুরহাট থানায় ও অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।” পরে এভিবিপি’র তরফ থেকে কলেজের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়, প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য এসডিও’র কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানানো হয়। যদিও কলেজের ছাত্র সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক (টিএমসিপি) মণোজিত্‌ সাহা’র দাবি, “আমি কলেজে ছিলাম না। অথচ আমার নাম জড়িয়ে গেল। এটা বিরোধীদের চক্রান্ত।” বোমা উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। না জেনে মন্তব্য না করাই ভাল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন