বোলপুরে হামলা মঙ্গলের বাড়িতে

নেশার ঠেক উচ্ছেদে ফের পথে বাসিন্দারা

নেশার ঠেকের বিরুদ্ধে ফের পথে নামলেন সাধারণ মানুষ। আরও একবার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বেশ কয়েকটি নেশার ঠেক। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল কারবারে যুক্ত অপরাধীদের বাড়িতেও। বুধবার রাতে বোলপুর শহরের শুঁড়িপাড়ার ঘটনা অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় রমরমিয়ে নেশার কারবার চললেও পুলিশ তা আজও পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

শুঁড়িপাড়ায় মঙ্গল সাহানির বাড়ির সামনে পড়ে রয়েছে পোড়া মোটরবাইক। —নিজস্ব চিত্র

নেশার ঠেকের বিরুদ্ধে ফের পথে নামলেন সাধারণ মানুষ। আরও একবার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বেশ কয়েকটি নেশার ঠেক। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল কারবারে যুক্ত অপরাধীদের বাড়িতেও। বুধবার রাতে বোলপুর শহরের শুঁড়িপাড়ার ঘটনা।

Advertisement

অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় রমরমিয়ে নেশার কারবার চললেও পুলিশ তা আজও পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি। নেশার খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন শহরের যুব সম্প্রদায়ের অনেকেই। তারই জেরে মাঝেমধ্যে নেশার ঠেকের বিরুদ্ধে অভিযানে নামতে হয় বাসিন্দাদেরই। বুধবার রাতের অভিযানও কতকটা তা-ই ছিল। কিন্তু ওই অভিযানের সময় বাসিন্দারা প্রতিরোধের মুখেও পড়েন। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। কয়েক জন জখমও হন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অবশ্য ওই ঘটনায় কোনও লিখিত অভিযাগ দায়ের হয়নি। প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেননি বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদবও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বোলপুর শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের শুঁড়িপাড়া এলাকায় নেশার ঠেক ভাঙার একটি অভিযানকে কেন্দ্র করেই বুধবার রাতে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে চোলাই মদ, গাজা ও ড্রাগের মতো বিভিন্ন নেশাদ্রব্যের দেদার কারবার চলছে। যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এলাকার দাগী দুষ্কৃতী মঙ্গল সাহানি (বৃদ্ধা রেণু সরকার খুনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত) এবং তার মা বুড়ি সাহানি। নেশার কারবার চালানোর পাশাপাশি তাদের দলবল এলাকায় জুয়ার আসরও বসায় বলে অভিযোগ। কিন্তু বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বারবার পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনও ফল মেলেনি। তাঁদের আরও অভিযোগ, পুলিশের একাংশের মদতেই মঙ্গলদের ওই বেআইনি ব্যবসা আরও ফুলেফেঁপে উঠেছে। পুলিশের দিক থেকে সাহায্য না পেয়ে তাই বাসিন্দারাই মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে ওই সব নেশার ঠেক ভেঙে দেন। কিন্তু পুলিশি নিয়ন্ত্রণের অভাবে ফের তা গজিয়ে ওঠে।

Advertisement

বুধবার সন্ধ্যায় শুঁড়িপাড়ার একটি ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ সে রকমই একটি নেশার ঠেকের জায়গায় অভিযানে যান। সেই অভিযানে সামিল বাপি রায়, অনুপ মণ্ডল, তাপস মণ্ডলদের অভিযোগ, “অভিযান শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুড়ির দলবল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসে। শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায়।” দুষ্কৃতীদের আক্রমণে ভোজালির কোপে আহত হন বাপি রায়। বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারধর করা হয় একাধিক বাসিন্দাকে। এমন প্রতিরোধের মুখে পড়ে বাসিন্দারা তখনকার মতো যে যে দিকে পারেন ছুট লাগান। পরে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁরা একজোট হয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারির দাবিতে থানায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশের মধ্যস্থতায় ওই বিক্ষোভ অবশ্য মিনিট পনেরো-কুড়ির মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। জখম বাপিবাবু বলেন, “বুড়ি সাহানি আর তার দলবল আমার উপরে চড়াও হয়। ভোজালি, তলোয়ার, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে। আমার পিঠে ভোজালির কোপ মারা হয়। কোনও মতে পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরি।”

থানা থেকে ফিরে গেলেও গোটা ঘটনায় উত্তজেতি জনতা রাতের দিকে আরও লোক জুটিয়ে ফের অভিযানে নামেন। এলাকার একাধিক মদ ও গাঁজার ঠেক ভেঙে ফেলা হয়। হামলা চালানো হয় মঙ্গল সাহানির বাড়িতে। ভাঙচুর করা হয়। আসবাব-সহ একাধিক জিনিসে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ততক্ষণে নেশার কারবারি বুড়ি সাহানি গা ঢাকা দিয়েছে। বুড়িকে না পেলেও উত্তেজিত জনতা নেশার কারবারে জড়িত, আসেপাশে থাকা মঙ্গলেরই নিকট আত্মীয়দের দু’টি বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালান। একটি মোটর-বাইকেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বোলপুর থানার পুলিশ আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ঠিক করতে এলাকায় যায়। ঘণ্টা দেড়েক অভিযান চালিয়ে ততক্ষণে অবশ্য বাসিন্দারা বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন