মোবাইল বাজেয়াপ্ত করায় এসডিও-কে ঘিরে ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা।
পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বাইরে বেরিয়ে গেল বাংলা প্রশ্নপত্র!
ফটোকপি চলে গেল অভিভাবকদের হাতে হাতে। শহরের ব্যস্ত মোড়ে প্রশ্নপত্রের প্রতিলিপি বিক্রি করতে দেখা গেল কিছু যুবককেও। পরীক্ষা শেষে দেখা গেল মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিল রয়েছে ওই ফটোকপির। শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন এমন দৃশ্যই দেখা গেল রামপুরহাট শহরে। যার পরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পুলিশ-প্রশাসন ও পর্ষদের নজরদারি নিয়ে একপ্রস্থ প্রশ্ন উঠে গেল। তবে, কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে বিভিন্ন রকম পরস্পর বিরোধী ব্যাখ্যা মিলেছে প্রশাসন ও পর্ষদের কর্তাদের কাছ থেকে।
জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের ভারপ্রাপ্ত জেলা পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আলোক মহাপাত্রের দাবি, “এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। তবে, এ ব্যাপারে একটি মেসেজ আমার কাছে এসেছে যে, রামপুরহাটে কোনও একটি স্কুল থেকে মোবাইলে অত্যাধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের ছবি বাইরে চলে গিয়েছিল। সেই ছবি স্ক্যান করে প্রিন্টআউট বের করা হয়েছে বলে শুনেছি।” এ ব্যাপারে দফতরের এক প্রতিনিধিকে রামপুরহাটে পাঠানো হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে রিপোর্ট না মেলা পর্যন্ত সঠিক কী ঘটেছে, তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ দিন পরে অবশ্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস দাবি করেন, “এ বার একটা নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হচ্ছে। তা সর্ম্পূণ সফল। তবে, একটি কেন্দ্রে এক জন পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্র নীচে ফেলে দিয়েছিল বলে খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গেই তা ধরা পড়ে। ওই পরীক্ষার্থী নিজেই পরে জানিয়েছে, সে টুকলি পাওয়ার জন্য এমনটা করেছে।” তিনি জানান, অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে পর্ষদের নিয়ম মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বেরিয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্র। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।
এ দিকে, প্রশ্নপত্র বাইরে বেরিয়ে পড়া নিয়ে হইচই শুরু হতেই নড়েচড়ে বসে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর। দুপুরেই রামপুরহাটে ঘটনার তদন্তে চলে আসেন দফতরের সহকারী পরিদর্শক সুফিয়ার রহমান। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত ঠিক কীভাবে এটা ছড়িয়ে গিয়েছিল, তা জানা যায়নি। তবে, এ বার থেকে আমরা পরীক্ষা হলে মোবাইল নিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছি।”
যদিও এমনিতেই উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশই নিষিদ্ধ। তার পরেও পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা হলে মোবাইল নিয়ে কীভাবে পৌঁছে যাচ্ছে, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঘটনা হল, প্রশ্নপত্র বেরিয়ে যাওয়ার খবরে তোলপাড় শুরু হতেই স্কুলে স্কুলে পরিদর্শনে যান রামপুরহাটের মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস। তার পরেই রামপুরহাট হাইস্কুল পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা চলাকালীন তিনি প্রায় ৭৫টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেন। প্রশ্ন উঠছে, কর্তব্যরত সেন্টার ইনচার্জ, হলের পরিদর্শকেরা কি তা হলে নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেননি? মহকুমাশাসক বলছেন, “পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে যথেষ্ট পুলিশ রয়েছে। কিন্তু, পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে মোবাইল ঢুকে পড়ার ব্যাপারে আগামী দিনে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
অবশ্য রামপুরহাট হাইস্কুলের ভেনু সুপারভাইজার নিখিলচন্দ্র সিংহের দাবি, পরীক্ষা হলের ভিতরে পরীক্ষার্থীরা ঢোকার পরে একাধিক বার মোবাইল বের করে বাইরে রাখার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ মোবাইল নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল বলে তাঁর দাবি। অন্য দিকে, মোবাইল উদ্ধারের প্রসঙ্গে পরীক্ষার্থীদের তল্লাশি করে কেন্দ্রে ঢোকানোর ব্যাপারে ত্রুটির কথা মেনে নিয়েছেন অলোকবাবু। পরে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, “প্রশ্ন আগে ফাঁস হয়নি। পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে মোবাইল থেকে একটা কিছু হয়েছে। সেই জন্য বেশ কিছু মোবাইল উদ্ধার করে এসডিও সেগুলি বাজেয়াপ্ত করেছেন। আমরা আগামী দিন থেকে এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করব।”
পরীক্ষা শেষ হতেই মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। তাঁরা প্রথমে থানায় ও পরে এসডিও-র দফতরে গিয়ে ক্ষোভ দেখান। তাঁদের বক্তব্য, “মোবাইল নিয়ে ভিতরে ঢোকা যাবে না, পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে এমন কথা জানানো হয়নি। আমরা ফোন বন্ধ করে ব্যাগে রেখেছিলাম। তার পরেও সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হল!” এসডিও অবশ্য তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন, মোবাইল ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে পর্ষদই সিদ্ধান্ত নেবে।
—নিজস্ব চিত্র।